গতকাল ও সমস্ত দিন বৃষ্টি
চলছিলো, আজও ঘুম থেকে উঠে দেখি সেই অবিরাম ধারায় বৃষ্টি চলছে, এমনিতে আমার যে
বৃষ্টি ভাল লাগে না তেমন নয়, বৃষ্টি আমার বেশ ভালই লাগে, কেমন যেন একটা ছন্দ খুঁজে
পাই বৃষ্টির তালে তালে। কিন্তু উপভোগ করার অবকাশ কোথায়? পাশের ঘরে শুনতে পেলাম স্ত্রী
আপন মনেই বলে চলছে কি যে বৃষ্টি শুরু হল এত ভিজে কাপড়-জামা শুকাই কি করে... বোধকরি
আমাকেই বলা হচ্ছে...না ও হতে পারে কেন না এতে আমার কি দোষ... এই ভেবে আবার বৃষ্টির
ছন্দে মনোযোগ দিলাম ওরে বাবা একি কিছুক্ষন পরে মেয়ে এসে শুরু করলো ও বাবা এই যা বৃষ্টি দিচ্ছে... তার মানে আজ ও বাড়িতে বসে কাটাতে হবে? আজ স্কুল বন্ধ ভেবেছিলাম
কোথাও বেড়াতে যাবো, আমি তাঁর মুখের দিকে তাকাতেই বেশ কথা ঘুরিয়ে নিয়ে বলে উঠল না
মানে বাইরে খেলতেও যেতে পারব না। সত্যি তো এই বৃষ্টি কি সবার মধ্যে নিরানন্দ নিয়ে
আসলো...ভাবতে লাগলাম ভাবতে ভাবতে টের পেলাম কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার মন টাও যেন
কেমন বিষণ্ণতায় ভরে গেল, এইতো একটু আগে বেশ বৃষ্টি কে উপভোগ করছিলাম মনটা বেশ
আনন্দেই ছিল সহসা এমন কাল বিষন্নতার বাদল কোথা থেকে এলো... না মনটা কে আবার ফিরিয়ে
নিয়ে যাই আগের ভাবে। কিন্তু কি করে? হঠাৎ মনে আসলো এই বৃষ্টি নিয়ে কবিরা কি সুন্দর
সুন্দর কবিতা রচনা করেছেন, তা আমি একটু চেষ্টা করে দেখি, ব্যস কাগজ কলম নিয়ে বসে
পড়লাম কিন্তু হায় মাথা খুঁড়ে খুঁড়ে এক লাইন ও লিখতে পারলাম না একগাদা কাগজের
শ্রাদ্ধ হলো।মেয়ে বলে উঠলো সেভ পেপার সেভ ট্রি... যা কবি হওয়া হলো না। ছোটবেলায়
মায়ের উৎসাহে বেশ কয়েকবার আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করেছিলাম কপালে কোন দিন
পুরষ্কার পাওয়া হয় নি, তবে একটাই লাভ হয়েছে বেশ কিছু কবিতা পড়া হয়ে গেছে। ভাবলাম
তা হলে সেগুলোই একটু চিন্তা করি এই তো যেমন রবি ঠাকুরের সেই কবিতা
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
দিনের
আলো নিবে
এল,
সুয্যি ডোবে-ডোবে।
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে
চাঁদের লোভে লোভে।
মেঘের উপর মেঘ করেছে--
রঙের উপর রঙ,
মন্দিরেতে কাঁসর ঘন্টা।
বাজল ঠঙ ঠঙ।
ও পারেতে বিষ্টি এল,
ঝাপসা গাছপালা।
এ পারেতে মেঘের মাথায়
একশো মানিক জ্বালা।
বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান--
"বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান।'
আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা,
কোথায় বা সীমানা!
দেশে দেশে খেলে বেড়ায়,
কেউ করে না মানা।
কত নতুন ফুলের বনে
বিষ্টি দিয়ে যায়,
পলে পলে নতুন খেলা
কোথায় ভেবে পায়।
মেঘের খেলা দেখে কত
খেলা পড়ে মনে,
কত দিনের নুকোচুরি
কত ঘরের কোণে।
তারি সঙ্গে মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান --
"বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান।'
মনে পড়ে ঘরটি আলো
মায়ের হাসিমুখ,
মনে পড়ে মেঘের ডাকে
গুরুগুরু বুক।
বিছানাটির একটি পাশে
ঘুমিয়ে আছে খোকা,
মায়ের 'পরে দৌরাত্মি সে
না যায় লেখাজোখা।
ঘরেতে দুরন্ত ছেলে
করে দাপাদাপি,
বাইরেতে মেঘ ডেকে ওঠে --
সৃষ্টি ওঠে কাঁপি।
মনে পড়ে মায়ের মুখে
শুনেছিলেম গান --
"বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান।
মনে পড়ে সুয়োরানী
দুয়োরানীর কথা,
মনে পড়ে অভিমানী
কঙ্কাবতীর ব্যথা।
মনে পড়ে ঘরের কোণে
মিটিমিটি আলো,
একটা দিকের দেয়ালেতে
ছায়া কালো কালো।
বাইরে কেবল জলের শব্দ
ঝুপ্ ঝুপ্ ঝুপ্ --
দস্যি ছেলে গল্প শোনে
একেবারে চুপ।
তারি সঙ্গে মনে পড়ে
মেঘলা দিনের গান --
"বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান।'
কবে বিষ্টি পড়েছিল,
বান এল সে কোথা।
শিবঠাকুরের বিয়ে হল,
কবেকার সে কথা।
সেদিনও কি এম্নিতরো
মেঘের ঘটাখানা।
থেকে থেকে বাজ বিজুলি
দিচ্ছিল কি হানা।
তিন কন্যে বিয়ে ক'রে
কী হল তার শেষে।
না জানি কোন্ নদীর ধারে,
না জানি কোন্ দেশে,
কোন্ ছেলেরে ঘুম পাড়াতে
কে গাহিল গান --
"বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান।'
কিংবা ‘অপেক্ষা’ যেখানে তিনি লিখেছেন ...............
‘মেঘেতে দিন জড়ায়ে থাকে মিলায়ে থাকে মাঠে,
পড়িয়া থাকে তরুর শিরে, কাঁপিতে থাকে নদীর নীরে—
দাঁড়ায়ে থাকে দীর্ঘ ছায়া মেলিয়াঘাটে বাটে।’
‘মেঘেতে দিন জড়ায়ে থাকে মিলায়ে থাকে মাঠে,
পড়িয়া থাকে তরুর শিরে, কাঁপিতে থাকে নদীর নীরে—
দাঁড়ায়ে থাকে দীর্ঘ ছায়া মেলিয়াঘাটে বাটে।’
শুধু রবি ঠাকুর ই নয় আমাদের প্রিয় মাইকেল মধুসুধন দত্ত
‘মেঘদূত’ কবিতায় এই বৃষ্টির বর্ণনা দিলেন এই ভাবে
‘আজি অন্ধকার দিবা বৃষ্টি ঝরঝর,
দুরন্ত পবন অতি, আক্রমণে তার
বিদ্যুৎ দিতেছে উঁকি ছিড়ি মেঘভার
খরতর বক্রহাসি শূন্যে বরষিয়া।’
‘একমুঠো’ কবিতায় কবি জিবনানন্দ
দাস বৃষ্টি কে কি সুন্দর উপস্থাপন করেছেন
‘অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে
বৃষ্টি ঝরে রুক্ষ মাঠে, দিগন্তপিয়াসী মাঠে, স্তব্ধ মাঠে,
মরুময় দীর্ঘ তিয়াষার মাঠে, ঝরে বনতলে,
ঘনশ্যামরোমাঞ্চিত মাটির গভীর গূঢ় প্রাণে
শিরায় শিরায় স্নানে, বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে।’
বৃষ্টি ঝরে রুক্ষ মাঠে, দিগন্তপিয়াসী মাঠে, স্তব্ধ মাঠে,
মরুময় দীর্ঘ তিয়াষার মাঠে, ঝরে বনতলে,
ঘনশ্যামরোমাঞ্চিত মাটির গভীর গূঢ় প্রাণে
শিরায় শিরায় স্নানে, বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে।’
কবি চণ্ডীদাসের বৃষ্টির কবিতার দু তিন লাইন সংগ্রহ করতে পারলাম যেমন
এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা
কেমনে আইলো বাটে।
আঙ্গিনার মাঝে বঁধূয়া ভিজিছে
দেখিয়া পরাণ ফাটে।
কেমনে আইলো বাটে।
আঙ্গিনার মাঝে বঁধূয়া ভিজিছে
দেখিয়া পরাণ ফাটে।
সেই বৃষ্টি কেই আবার কবি অক্ষয় কুমার বড়াল লিখেছেন
ঝরে বৃষ্টি গুঁড়িগুঁড়ি কভু বা ঝর্ঝরে
ছিন্নভিন্ন লঘু মেঘ ভাসিছে আকাশে;
এখনো সুষুপ্ত গ্রাম তরুছায়া ভরে;
স্তব্ধ মাঠে শ্রান্ত পদে শূন্য দিন আসে।
ছিন্নভিন্ন লঘু মেঘ ভাসিছে আকাশে;
এখনো সুষুপ্ত গ্রাম তরুছায়া ভরে;
স্তব্ধ মাঠে শ্রান্ত পদে শূন্য দিন আসে।
কিন্তু কবি
সুকুমারের একটা কবিতা ঠিক যেন আমার আজকের মনের সাথে মিলে জাচ্ছে সেটা হলো
জল ঝরে জল ঝরে সারাদিন সারারাত-
অফুরান্ নামতায় বাদলের ধারাপাত ।
আকাশের মুখ ঢাকা, ধোঁয়ামাখা চারিধার,
পৃথিবীর ছাত পিটে ঝামাঝম্ বারিধার ।
স্নান করে গাছপালা প্রাণখোলা বরষায়,
নদীনালা ঘোলাজল ভরে ওঠে ভরসায় ।
উৎসব ঘনঘোর উন্মাদ শ্রাবণের
শেষ নাই শেষ নাই বরষার প্লাবনের ।
জলেজলে জলময় দশদিক্ টলমল্,
অবিরাম একই গান, ঢালো জল ঢালো জল ।
ধুয়ে যায় যত তাপ জর্জর গ্রীষ্মের,
ধুয়ে যায় রৌদ্রের স্মৃতিটুকু বিশ্বের ।
শুধু যেন বাজে কোথা নিঃঝুম ধুক্ধুক্,
ধরণীর আশাভয় ধরণীর সুখদুখ ।
অফুরান্ নামতায় বাদলের ধারাপাত ।
আকাশের মুখ ঢাকা, ধোঁয়ামাখা চারিধার,
পৃথিবীর ছাত পিটে ঝামাঝম্ বারিধার ।
স্নান করে গাছপালা প্রাণখোলা বরষায়,
নদীনালা ঘোলাজল ভরে ওঠে ভরসায় ।
উৎসব ঘনঘোর উন্মাদ শ্রাবণের
শেষ নাই শেষ নাই বরষার প্লাবনের ।
জলেজলে জলময় দশদিক্ টলমল্,
অবিরাম একই গান, ঢালো জল ঢালো জল ।
ধুয়ে যায় যত তাপ জর্জর গ্রীষ্মের,
ধুয়ে যায় রৌদ্রের স্মৃতিটুকু বিশ্বের ।
শুধু যেন বাজে কোথা নিঃঝুম ধুক্ধুক্,
ধরণীর আশাভয় ধরণীর সুখদুখ ।
এই সব ভাবতে ভাবতে বেশ মজাই লাগছিলো, নিজেকে কবি না হতে পারার দুঃখ টা আর
থাকলো না, তারমধ্যেই চা আর মুড়ির বাটি এসে হাজির। এবার স্বনামধন্য কবিগনদের চিন্তা ছেড়ে
চায়ের মধ্যে মন দিলাম। বৃষ্টির জন্যে হাল্কা শীতের আমেজ, তাঁর মধ্যে গরম চা
আর মুড়ি বেশ লাগছে।চা পানের শেষে আবার বৃষ্টির চিন্তার মধ্যে ফিরে গেলাম...।ভাবলাম
কবিতা অনেক হলো এবার গান গুলো একটু ভাবি...না না আমি গান জানি না, গান গাইবার সাহস
ও করি না, তবে গান শোনার শখ অনেক গানের সিডি ও ক্যাসেট অনেক আছে। তাই এবার সেগুলোর
রোমন্থন করতে বসে গেলাম। মনে পড়ে গেলো আব্র সেই রবি ঠাকুরের গান
ওই-যে ঝড়ের মেঘের কোলে
বৃষ্টি আসে মুক্তকেশে আঁচলখানি দোলে॥
ওরই গানের তালে তালে আমে জামে শিরীষ শালে
নাচন লাগে পাতায় পাতায় আকুল কল্লোলে॥
হেমন্ত মুখোপাধ্যের সে গানটি
এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন,
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ,
https://www.youtube.com/watch?v=15yLoJ6AsN0
ঘরে থাকেনাতো মন,
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ,
https://www.youtube.com/watch?v=15yLoJ6AsN0
কি করে ভুলি সেই গান ‘আজি ঝড়ো ঝড়ো মূখর বাদল দিনে’
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে
জানি নে, জানি নে
কিছুতেই কেন যে মন লাগে না ।।
জানি নে, জানি নে
কিছুতেই কেন যে মন লাগে না ।।
এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে
উদ্ভ্রান্ত মেঘে মন চায়
মন চায় ঐ বলাকার পথখানি নিতে চিনে ।।
উদ্ভ্রান্ত মেঘে মন চায়
মন চায় ঐ বলাকার পথখানি নিতে চিনে ।।
কিংবা সহন গহন রাত্রি ঝড়িছে
শ্রাবণধারা
সঘন গহন রাত্রি, ঝরিছে শ্রাবণধারা–
অন্ধ বিভাবরী সঙ্গপরশহারা।।
অন্ধ বিভাবরী সঙ্গপরশহারা।।
চেয়ে থাকি যে শূন্যে অন্যমনে
সেথায় বিরহিণীর অশ্রু হরণ করেছে ঐ তারা।।
সেথায় বিরহিণীর অশ্রু হরণ করেছে ঐ তারা।।
এই গান টি ও আমার বেশ ভাল লাগে
আকাশ এতো মেঘলা যেওনাকো একলা
এখুনি নামবে অন্ধকার
ঝড়ের জলতরঙ্গে নাচবে নদী রঙ্গে
ভয় আছে পথ হারাবার
এখুনি নামবে অন্ধকার
ঝড়ের জলতরঙ্গে নাচবে নদী রঙ্গে
ভয় আছে পথ হারাবার
শ্রীকান্তের গলায় এই গানটি ও বৃষ্টির দিনে বেশ জমে
আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ"
আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ,
বৃষ্টি – তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।
বৃষ্টি – তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।
ছবি আঁকা টা আমার বরাবরেরই প্রিয় বিষয় কিন্তু আজ ভাল লাগছে
না, তাই মেয়েকে বললাম বৃষ্টির উপর একটা ছবি আঁকতে সে আমাকে কিছুক্ষন পরে ওর খাতা
থেকে বৃষ্টির উপর আঁকা একটি ছবি আমকে দেখিয়ে দিলো, ছবিটা এমনতর হয়েছে,
তারপর আমিও আমার মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে কিছু ছবি তুলে নিলাম...
সময় টা ত আমার ভালই গেলো আপনাদের কেমন গেল্...?