Thursday 30 November 2017

দূর্বার মাহাত্ম্য

দূর্বার মাহাত্ম্য
দূর্বা আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী দের পূজা বা যে কোন শুভ কাজের এক অপরিহার্য অঙ্গ। কিন্তু কেন দূর্বা ব্যাবহার করা হয় তা অনেকেই জানি না। আজ আমরা তাই নিয়ে একটু আলোচনা করবো।
দুর্বার উল্লেখ আমরা ঋগ বেদ ও অথর্ব বেদে পাই। ভবিষ্য পুরাণে বর্ণিত আছে যে দুর্বার জন্ম হয় ভগবান বিষ্ণুর হাত ও উরুর লোম থেকে যখন তিনি সমুদ্র মন্থনে মন্দ্র পর্বতকে সাহায্য করছিলেন। আবার বামন পুরাণে উল্লেখ যে দুর্বার জন্ম হয় নাগ বাসুকীর পুচ্ছ থেকে যে সময় দেব-আসুরেরা মিলিত ভাবে সমুদ্র মন্থন করছিলেন। আবার আরেক পুরাণের কাহিনী অনুসারে দুর্বাসুর নামে এক কৃষ্ণ ভক্ত অসুর ছিলেন। দুর্বাসুরের মা কৃষ্ণ বিদ্বেষী ছিলেন। দুর্বাসুরের বাবা, ভাই দেবতার হাতে মারা যান। তাই মা দেবতার স্বর্গ রাজ‍্য ধ্বংস ও দেবতার মৃত্যু চাইতেন। মা দুর্বাসুরকে ত্রিদেবের তপস‍্যা করে (ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব) অমর হয়ে ত্রিলোক জয় করতে আদেশ দিলেন। মা ত্রিলোকের রাজমাতা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করল।

মায়ের কথায় দুর্বাসুর নির্জনে কঠোর তপস‍্যা শুরু করে। হাজার বছর তপস‍্যার ফলে তার শরীরের মাংস পচে খসে পড়ে। উইপোকা ও পোকামাকড়ে খেয়ে হাড়ও খসে মাটিতে মিশে গেছে। তখনও ত্রিদেবের নামে ধ্যান হচ্ছে। দেবতারা ভয় পেয়ে দুর্বাসুরের তপস‍্যা ভঙ্গে ব‍্যর্থ হয়। অবশেষে ত্রিদেব দুর্বাসুরের কাছে এসে ব্রহ্মা কমন্ডুলের জল ছিটিয়ে পুর্বরূপ দিয়ে বর প্রার্থনা করতে বললেন।
দুর্বাসুর বললেন প্রভু আমি মাতৃ আজ্ঞাতে তপস‍্যা করেছি। মা অমরত্ব বর নিতে বলেছেন। হে গোবিন্দ আমাকে অমরত্ব বর দিলে মা আবারো খারাপ কাজ করাবে। তাই এমন বর দিন যাতে আমি অমরও হতে পারি আবার আপনার সেবায়ও লাগতে পারি। আর আমার দ্বারা যেন জগতের কারো অনিষ্ট না হয়।

ত্রিদেব সন্তুষ্ট হয়ে বললেন শুধু ত্রিদেব নয় জগতের সব দেবতার সেবায় লাগবে তুমি। দুর্বাসুর তুমি দুর্বা ঘাসে পরিণত হয়ে সব দেবতার পূজায় লাগবে। অক্ষয় তৃতীয়ায় অক্ষয় বরে জগতে সবাই মারা গেলেও দুর্বা ঘাস কখনো মরবে না। অমর থাকবে পৃথিবীতে।

পূজাতে দুর্বা পাতা লাগে তিনটি। তিনটি পাতায় ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব অবস্থান করেন। জগতে কোন শুভ কাজ ত্রিদেবকে ছাড়া সম্ভব নয়। তাই শুভ কাজে দুর্বা ছাড়া আশীর্বাদ হবে না। সেই থেকেই দেবদেবীর পূজায় দুর্বার প্রয়োজন হয়।
দূর্বা পবিত্রতার প্রতীক, দূর্বা পুনর্জীবন, দীর্ঘ জীবন, ও উন্নতির ও প্রতীক। তার কারণ হলো দূর্বার একটি ঘাস তুলে নিলেও তার জায়গায় আবার গজিয়ে উঠে নুতুন দূর্বা। দূর্বার সংস্পর্শে যা আসে তাই পবিত্র হয়ে উঠে বলে বিশ্বাস। দূর্বা সকল অশুভ শক্তিকে শোষণ করে শুভ শক্তির বিকিরণ করে তাই সকল পূজায় দূর্বার ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। 
দুর্বাকে পবিত্র মানার আরেকটি কারণ হলো বলা হয় দূর্বার গোঁড়ায় থাকেন স্বয়ং ব্রহ্মা, মধ্যে বিষ্ণু আর অগ্রভাগে মহেশ্বর।
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা অষ্টমীকে দূর্বা অষ্টমী হিসেবে পালন করা হয়। ঐ দিন দূর্বার অগ্রভাগ পূর্ব মুখী করে ভগবান কে দূর্বা উৎসর্গ করা হয় এই বিশ্বাসে যে এই অনুষ্ঠানের দ্বারা পূর্ব-পুরুষদের কাছ থেকে দীর্ঘায়ুর আশীর্বাদ পাওয়া যায়। 




আপনারা হয়তো দেখেছেন গনেশ কে দূর্বা দান করতে। কথিত আছে গনেশকে ২১গাছি দূর্বা দিয়ে প্রার্থনা করলে গণেশ ঠাকুর প্রসন্ন হন। রামেশ্বরমের মন্দিরে দেখেছি দুর্বা দিয়ে গণেশ কে আপাদমস্তক আবৃত করে দেওয়া হয়। এর পিছনে যা কাহিনী আছে তা সংক্ষেপে আপনাদের বলছি।
একসময় অনলাসুর নামে এক মহা প্রতাপবান ও অত্যাচারী অসুর ছিল, জানা যায় অনলাসুর যমরাজ ও অপ্সরা তিলত্তোমার ছেলে ছিল। সেই অনলাসুর একবার তপস্যার দ্বারা দেবাদিদেব মহাদেবকে সন্তুষ্ট করে বর লাভ করেছিল। বর হিসেবে তাঁর চোখ থেকে আগুনের গোলা বের করার ক্ষমতা লাভ করে এবং সেই থেকে তাঁর নাম হয় অনলাসুর। অনল মানে আগুন।এই মহাশক্তির বলীয়ান হয়ে অনলাসুর প্রবল অত্যাচারি হয়ে উঠে।নির্দয় ভাবে সে সকলকে হত্যা করতে শুরু করে। সাধু-সন্ন্যাসীদের যাগযজ্ঞ নষ্ট করে নির্বিচারে লুন্ঠন হত্যা করতে থাকে।এমনকি তাঁর হাত থেকে দেবতারাও নিস্তার পেলেন না।অনলাসুরের ভয়ে তাঁরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে বেড়াতে থাকেন।অনলাসুর তাঁর চোখ থেকে আগুন গোলা দিয়ে চারিদিক ধংশ করতে থাকে, স্বর্গ মর্ত্ত পাতালে শুরু হয়ে যায় হাহাকার। 
অনলাসুর স্বর্গ থেকে দেবতাদের তাড়িয়ে দেবরাজ ইন্দ্রকে হত্যা করতে উদ্যত হলে ইন্দ্র সেখান থেকে পালিয়ে যান। ইন্দ্রের পলায়নের পর অনলাসুর স্বর্গ রাজ্যে অধিকার করে বসে।
.অনলাসুরের ভয়ে ভীত হয়ে অত্যাচারিত দেবতারা দেবগুরু বৃহস্পতির নির্দেশে ভগবান গনেশের শরনাপন্ন হয়ে গণেশ কে অনলাসুর থেকে স্বর্গ কে উদ্ধার ও দেবগন কে রক্ষা করার প্রার্থনা জানান। দেবতাদের কাতর প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ভগবান গণেশ তাঁদের কে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন। গণেশ জানতেন যে অনলাসুর প্রচন্ড পরাক্রমী তাই তিনি অনলাসুর কে বধ করার জন্যে কৌশল অবলম্বন করলেন। গণেশ নিজেকে একটি ছোট্ট শিশুতে পরিনত করে অনলাসুরের সাথে যুদ্ধ শুরু করলেন।অনলাসুরের চোখ থেকে নির্গত আগুনের গোলা গুলিদের তিনি কৌশলে এড়িয়ে যেতে থাকলেন কিন্তু সেই ভয়ানক আগুনের গোলা গুলি চারিদিক ধ্বংস করতে শুরু করলো। অনেকক্ষন যুদ্ধের পর অনলাসুর যখন শিশুরূপী গণেশ কে গ্রাস করতে উদ্যত হল। গণেশ তখন তাঁর বিরাট-রূপ ধারন করে অনলাসুর কে গিলে ফেলেন।
এদিকে অনলাসুর কে গিলে ফেলায় গণেশের শরীরের ভিতর সৃষ্টি হয় প্রচন্ড যন্ত্রণার। সেই যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করতে থাকেন, তাঁর এই অবস্থা দেখে স্বর্গের সকল দেবতারা মিলে গণেশের যন্ত্রণা দূর করার চেস্টা করতে থাকেন। দেবী পার্বতী গণেশের সর্বাঙ্গে চন্দনের প্রলেপ দিলেন,কিন্তু সেই আগুনের জ্বালার কোন প্রশমন হল না।দেবাদিদেব মহাদেব তাঁর গলার সাপ দিয়ে গণেশের কোমর বেঁধে দিলেন,কিন্তু তাতেও কোন লাভ হলো না। আগুনের সেই ভীষণ যন্ত্রণায় গণেশ ছটফট করতে থাকেন।ভগবান বিষ্ণু তখন প্রচুর পরিমানে পদ্মের জল ছিটিয়ে দিলেন গণেশের গায়ে,সেই থেকে গণেশের এক নাম হয় পদ্মপাণি। তাতেও কোন লাভ হলো না।চন্দ্রদেব তাই দেখে গণেশের মাথার উপর অবস্থিত হয়ে শীতলতা প্রদান করতে শুরু করলেন সেই জন্য গণেশের আরেক নাম হয় ভালচন্দ্র। সকল প্রচেষ্টা বিফল হতে দেখে মহামুনি কাশ্যপ ২১টি দুর্বা গণেশের মাথায় নিবেদন করেন এবং সেই দুর্বা গুলিই গণেশের যন্ত্রণার অবসান ঘটালো, সেই দুর্বা গুলি দ্বারাই গণেশের শান্তি ফিরে এলো।এতে সন্তুষ্ট হয়ে গণেশ ঘোষণা করলেন যে দুর্বাই হবে উনার সবচাইতে প্রিয় আর যেই ভক্ত শ্রদ্ধা সহকারে ২১ টি দুর্বা গণেশকে নিবেদন করবে তাঁর জীবন ধনধান্যে পরিপূর্ণ হবে ও তাঁর জীবনে নেমে আসবে সুখ। পৃথিবীর সকল প্রকার জ্বালা যন্ত্রণা থেকে তাঁর জীবন হবে মুক্ত।আবার এই ২১ টি দুর্বার মাহাত্ম্য হিসেবে বর্ণিত আছে যে এই ২১টি দুর্বা কিন্তু প্রতীকী। এই ২১ টি দুর্বা হচ্ছে আমাদের মধ্যে পঞ্চ ভুত, পঞ্চ প্রাণ, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, ও মন এই সকলের প্রতীক।


আগের পর্বে আমরা জানতে পারলাম যে দূর্বা দ্বারা গণেশের মানসিক শান্তি লাভ হয়েছিল ও সাথে উনার পেটের জ্বালা ও উপশম হয়েছিল।একি নিছক গল্প না তার পিছনে লুকিয়ে আছে কিছু সত্যতা??এবার দেখব সেই ব্যাপারটা। 
আমাদের আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে দুর্বাকে নানাপ্রকার ঔষধে প্রয়োগ করা হয়, কারণ দুর্বার মধ্যে পাওয়া যায় নানাপ্রকার ঔষধিয় গুণ।
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে দুর্বা বাত দোষ দূর করতে ব্যাবহার করা হয়। দুর্বার বিশেষ বিশেষ ঔষধিয় গুণ সম্বন্ধে নীচে কিছু আলোচনা করা হলো।

দুর্বার রস মানসিক উত্তেজনা প্রশমিত করে।
চর্মরোগ সারাতেও দুর্বার প্রয়োগ করা হয়, আগের দিনে দুর্বা পিষে তার মধ্যে হলদি বাটা ও সর্ষ তেল দিয়ে গায়ে মাখার প্রচলন ছিল, তার ফলে চর্ম রোগ থেকে শরীর কে রক্ষা করার প্রতিষেধক লাভ হতো। আজও অনেকে তা করে থাকেন তবে তা বিশেষ বিশেষ দিনেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। চর্ম রোগে আক্রান্ত জায়গায় দুর্বাকে এইভাবে প্রলেপ হিসেবে দিলে চর্ম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।দুর্বার সঠিক ব্যবহারে কুষ্ট, এগজিমা,স্কেবিজ,চুলকানি সহ বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগ সারায়।
দুর্বার সাথে নিমপাতা মিশিয়ে নিয়মিত ভাবে সেবন করলে ডায়বেটিজ রোগ নিয়ন্ত্রনে থাকে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে সাহায্য করে। 
দুর্বার রস নিয়মিত ভাবে সেবন করলে শারীরিক ক্লান্তি দূর হয় ও অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিয়মিত ভাবে দুর্বার রস পান করলে স্নায়ু গুলি (nerves) শক্তি লাভ করে। 
দুর্বার রস সকালে খালি পেটে পান করলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ সহজেই বাইরে বেরিয়ে আসে। রক্তকে বিশুদ্ধ করে আর শরীরের ক্ষার জাতীয় পদার্থের সমতা বজায় রাখে।
দুর্বার মধ্যে এমন গুণ আছে যা শরীরের কোলেস্টরেল কমায় ও মেদহ্রাস করতে সাহায্য করে। হৃদয়ের শক্তিকে আরও সবল করে তুলে।
দুর্বার কয়েক ফোটা চোখে দিলে চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।
দূর্বা রক্তে লোহিতকণা বৃদ্ধি করে হিমোগ্লোবিন মাত্রাকে বৃদ্ধি করে তোলে। 
নিয়মিত দুর্বার রস পান করলে পেটের অম্লতা দূর করে আর পেটের মধ্যের বিষাক্ত পদার্থকে দূর করে।
দুর্বার রসের সাথে দই মিশিয়ে খেলে মুত্রনালীর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। দূর্বা ডিম্বাশয় কে সুদৃঢ় করে।
দূর্বার মধ্যে প্রচুর পরিমানে ফ্লেভনয়েদ থাকে যা আলসার সারাতে সাহায্য করে ও মাড়ির রক্তক্ষরণ কমায়, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। দূর্বার রস ফুসফুস সংক্রমণও সারিয়ে তোলে।

Friday 3 November 2017

পঞ্চতত্ত্ব

পঞ্চতত্ত্ব নিয়ে  কিছু...
আমাদের এই সম্পূর্ণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড 'ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম 'এই পাঁচটি বস্তুর উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। সাধারণভাবে অর্থ করা হয়ে থাকে যে, ক্ষিতি অর্থ মাটি, অপ অর্থ জল, তেজ অর্থ আগুন, মরুৎ অর্থ বায়ু এবং ব্যোম অর্থ শূণ্য লোক। ক্ষিতি অর্থ মাটি ঠিক আছে, তবে মাটি এখানে কেবল মাটি নয়, মাটি এখানে সাধারণভাবে সকল কঠিন পদার্থের (solids) সাধারণ প্রতীক, তেমনিভাবে অপ এখানে সকল তরল পদার্থ (liquids), মরুৎ এখানে সকল বায়বীয় পদার্থ (gases), তাহলে দেখা যায় যে, এ তিনটি ভূত সামগ্রীক ভাবে জগতের সকল বস্তু (matters) কে নির্দেশ করছে। অনুরূপভাবে তেজ অর্থ সকল শক্তি (energy)। পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী - বস্তু ও শক্তি পরষ্পর রূপান্তরযোগ্য। ব্যোম হল শূণ্য স্থান (space) আর আমাদের এই শরীরও ঐ পাঁচটি উপাদান দিয়েই তৈরী.এই পঞ্চভূত বা পঞ্চতত্ত্ব সহ পঁচিশ প্রকার গুণ আমাদের শরীরে বিদ্যমান তা কি কি আমরা একটু দেখে নেই। 

ব্রহ্মজ্ঞানে অস্থি, মাংস, নখ, ত্বক ও লোম এই পাঁচটি পৃথিবীর গুন বলে বর্নিত হয়েছে। শুক্র, শোণিত, মজ্জা, মল, মুত্র এই পাঁচটি জলের গুণ বলে বর্নিত হয়েছে। নিদ্রা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও আলস্য এই পাঁচটি অগ্নির গুণ বলে বর্নিত হয়েছে। ধারণ, চালন, ক্ষেপণ, প্রসারণ ও সঙ্কোচণ এই পাঁচটি বায়ুর গুণ বলে বর্নিত হয়েছে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও লজ্জা এই পাঁচটি আকাশের গুণ বলে বর্ণিত হয়েছে। আকাশ হতে বায়ু, বায়ু হতে সূর্য(তেজ), সূর্য হতে জল এবং জল হতে পৃথিবীর উৎপত্তি হয়ে থাকে। এই পৃথিবী জলে বিলীন হয়, জল সূর্যে বিলীন হয়, সূর্য বায়ুতে এবং বায়ু আকাশে লীন হয়ে থাকে। এই পাঁচ প্রকার তত্ত্ব হতেই সৃষ্টি হয় এবং এই পঞ্চতত্ত্বেই সকল তত্ত্ব লয়প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এই পঞ্চবিধ তত্ত্বের পরে যে তত্ত্ব তাকেই বলে তত্ত্বাতীত বা নিরঞ্জন। স্পর্শন, রসন, ঘ্রাণ, দর্শন এবং শ্রবণ এই পাঁচটি কর্মই ইন্দ্রিয়ের পঞ্চতত্ত্ব আর এই সকল ইন্দ্রিয়ের কর্ম পরিচালিত করে মন(প্রধান)। এই ব্রহ্মাণ্ডের সকল প্রকার লক্ষণ আমাদের এই দেহের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। 'সাকারাশ্চ বিনশ্যন্তি নিরাকারো ন নশ্যতে' অর্থাৎ যেগুলি সাকার সেই গুলির বিনাশ হয় এবং যেগুলি নিরাকার (আকার শুন্য) সেগুলি হয় অবিনাশী।

Thursday 26 October 2017

ছট পূজা

ছট পূজা

সঙ্কলক
শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
 

ছট পূজা একমাত্র বৈদিক পূজা যা সূর্যদেবের নামে উৎসর্গিত। এই পুজার মাধ্যমে সূর্য দেবকে জীবজগত ও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের উপর কৃপাদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয় । দীপাবলির ছয় দিন পরে উত্তর ভারত বিশেষত বিহার, ঝাড়খন্ড ও উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে পালিত হয় ছট পুজো। ভারতবর্ষের হিন্দিভাষী হিন্দুদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পূজা ছট্‌ পূজা। ছট্‌ অর্থাৎ ছটা বা রশ্মির পূজা। এই রশ্মি সূর্য থেকেই পৃথিবীর বুকে আসে। সুতরাং এই পূজা আসলে সূর্যদেবের পূজা। প্রত্যক্ষভাবে ‘ছট;-এর পূজা হলেও এই পূজার সঙ্গে জড়িত আছেন স্বয়ং সূর্যদেব, আছেন মা গঙ্গা এবং দেবী অন্নপূর্ণা।তবে বর্তমানে ভারতের অনেক স্থানের মানুষরা মহানন্দে ছট পুজো উদযাপন করে থাকেন।
চার দিন ব্যাপী উদযাপিত হয় এই ছট পুজো। কার্তিক শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিকের শুক্লা সপ্তমী তিথি পর্যন্ত চলে এই পূজা, ব্রত কারীদের ছত্রিশ ঘন্টার উপবাস রেখে এই পুজো করে থাকেন।এই পূজাতে অনেক রীতি-নীতি মেনে করতে হয়। সূর্যোদয়ের আগে স্নান সারতে হয়, সমস্ত দিন জল পর্যন্ত না খেয়ে উপবাস রাখতে হয়, সূর্যাস্ত থেকে পরদিন সূর্যোদয় পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ঠাণ্ডায় জলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। 
কার্তিক শুক্লা চতুর্থীতে ব্রতকারীরা নিজেদের বাডি ঘর কে পরিষ্কার করে পুণ্যস্নান সেরে নিরামিষ অন্ন গ্রহন করেন।এদিনে লাউ ভাত খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে ।এইদিন থেকেই ব্রতকারীরা লাউ,ভাত ও ছোলার ডাল খেয়ে ব্রত শুরু করেন।
পরের দিন অর্থাত্ কার্তিক শুক্লা পঞ্চমীতে সারাদিন ব্রতকারীরা উপোস থেকে সন্ধ্যায় ভোজন করেন।একে খান্না বলা হয় ।এদিন রাতে খান্নার প্রসাদ হিসেবে গুড় ও দুধের পায়েস ও ঘিযের রুটি বানিয়ে সকল আশে পাশের মানুষ কে খাওয়ানো হয় । এই প্রাসাদে লবন ও চিনির ব্যবহার করা যায় না। 
তৃতীয় দিনে ব্রতকারীরা একসাথে এই পূজোর প্রসাদ তৈরী করেন এই পূজোতে সম্পূর্ণ ঘরের তৈরি করা দ্রব্যই পূজো তে দেওয়া হয় ।এই পূজোর মূখ্য প্রসাদই হলো ঠেকুয়া ও কাসার।ঠেকুয়া গুড় ও আটা দিয়ে বানানো হয় ও কাসার চালের আটা ও গুড় দিয়ে বানান খাদ্যদ্রব্য ।এছাড়া এই পূজোতে ফল ও সবজির বিশেষ ব্যবহার হয় ।এদিন সব আয়োজন করে বাড়ির মহিলারা বিকেলে নদী কিংবা পুকুরে পূজোর ঘাটে যান এবং একহাঁটু জলে নেমে সূর্য দেবাতার আরাধনা করেন ও জল ও দুধের অর্ঘ প্রদান করেন ।
চতুর্থ দিনে দেওয়া হয় উষা অর্ঘ।কার্তিক শুক্লা সপ্তমীর সকালে উদিত সূর্য কে এই অর্ঘ দেওয়া হয় পূর্ব দিনের মতো এই দিন ও সূর্য দেবতাকে পূজো করা হয় এবং কুলোতে সাজানো সকল দ্রব্যের উপর ও অর্ঘ প্রদান করা হয় ।এদিন ব্রতকারীদের পাশাপাশি বাড়ির সকল সদস্যরা জলে নেমে সূর্য দেবতার উদ্যেশ্যে অর্ঘ দেন এবং পূজো শেষে সরবত ও ফলমূল খেয়ে ব্রতকারীরা তাদের পূজো সম্পূর্ণ করেন। 
পৌরাণিক কাহিনিতে রয়েছে — বর্ষার আগমন ঘটেছে। কিন্তু বৃষ্টি তেমন হয়নি। চাষিদের মাথায় হাত। মাঠের ফসল মাঠেই মারা যাচ্ছে। মা অন্নপূর্ণা ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকেন। সকল দেবতা মা অন্নপূর্ণার এহেন দুর্দশায় ব্যথিত। ঘরে ঘরে অন্নাভাব হাহাকার ওঠে। সূর্যের তাপ হ্রাস করে বাঁচার জন্য মা অন্নপূর্ণা সূর্যদেবের ধ্যান করতে শুরু করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। সূর্যের প্রখর ছটায় মা অন্নপূর্ণা দিন দিন শ্রীভ্রষ্টা হয়ে ক্ষীয়মান হতে থাকেন। দেবলোকে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দেবতারা সম্মিলিতভাবে সূর্যদেবের কাছে গেলে তিনি মা অন্নপূর্ণার এই দশার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। এবং বলেন, মা অন্নপূর্ণা যেন গঙ্গাদেবীর আশ্রয় নেন। সূর্যদেব আরও বলেন, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর অস্তগমনকাল থেকে সপ্তমীর উদয়কাল পর্যন্ত মা অন্নপূর্ণা ও গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে উদীয়মান ছটা বা রশ্মিকে দেখে আমার স্তব বা দ্বাদশ নাম উচ্চারণ করলে সমস্ত পৃথিবী অন্নে পরিপূর্ণ থাকবে ও পৃথিবী শস্য শ্যামলা থাকবে। 
তাই ছট্‌ পূজা বা ব্রত একাধারে সূর্যদেব, মা অন্নপূর্ণা ও গঙ্গাদেবীর পূজা। বিজ্ঞানসম্মতভাবে বলা যায়, গঙ্গার জলে সেচ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে অনাবৃষ্টিতেও খেত-খামার অন্নে পূর্ণ হয় এবং স্বাভাবিকভাবে মনুষ্যসমাজে খাদ্যের অভাব থাকবে না।

Thursday 19 October 2017

মা কালীর অঙ্গের তাৎপর্য

দেবীর অঙ্গের তাৎপর্যঃ
দেবীর মাথায় অর্দ্ধচন্দ্র তাঁহার মোক্ষ-প্রদান শক্তির পরিচায়ক।তাহা হইতে নিঃসৃত অমৃত সাধক কে অমৃতত্ব বা মোক্ষ প্রদান করিয়া থাকে। দেবী মুক্তকেশী ।তাঁর মুক্তকেশ চির-বৈরাগ্যের প্রতীক। জ্ঞান-অসির আঘাতে তিনি অক্টপাশ ছেদনকারী মা চির বৈরাগ্যময়ী। তাই তাঁর কালো চুল বিস্তৃত।
দেবীর তিন চোখ তিনটি আলোর প্রতীক, চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি। অন্ধকার বিধ্বংসী তিন শক্তির প্রকাশ। অজ্ঞতা, চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি অজ্ঞানতারূপ অন্ধকার থেকে মুক্ত করে। তিনটি চোখে দেবী অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে প্রত্যক্ষ করেন। কারণ,এই শক্তিই হল সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের কর্তা। দেবীর কানে দুতি বালকের শব যার অর্থ নির্ব্বিকার, নিস্কাম,শিশু্ভাবাপন্ন সাধক মায়ের অতি প্রিয়। দেবী রক্তবর্ণের জিহ্বাকে সাদা দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখেছেন। লাল রং রজোগুণের প্রতীক, সাদা রং সত্ত্বগুণের প্রতীক। সাদা দাঁত দিয়ে লাল জিহবাকে চেপে রাখা। অর্থাৎ সত্ত্বগুণর দ্বারা রজোগুণকে দমন করে রাখা। রজোগুণ ভোগের গুন, ঈশ্বর বিমুখ করে। রজোগুণ দমনের জন্য এই প্রতীক। অনেক সময় আমরা কোন অন্যায় বা মিথ্যাচার করলে জিহ্বার কামড় দেই অর্থাৎ অন্যায় করার স্বীকৃতি।
দেবীর গলায় পঞ্চাশটি মুন্ড দিয়ে মালা পরানো। পঞ্চাশটি মুন্ড পঞ্চাশটি অক্ষরের প্রতীক। ১৪ টি স্বরবর্ণ এবং ৩৬ টি ব্যঞ্জনবর্ণ, অক্ষর ব্রহ্ম, যার ক্ষয় নেই, শব্দ ব্রহ্ম, অক্ষরের দ্বারাই শব্দের উৎপত্তি হয়। এর অবস্থান মস্তকে। আমরা মন্ত্রোচ্চারণের দ্বারা দেব বা দেবীর বন্দনা করি। এই মন্ত্রের অবস্থান মাথার তালুতে সহস্রার পদ্মের মধ্যে। তাই অক্ষরের প্রতীক মুন্ড তাঁর গলায় হাত কর্মের প্রতীক। আমাদের সকল কর্মের ফলদাতা তিনি । সকাম ভক্ত যারা তারা অতৃপ্ত কামনা নিয়ে দেহত্যাগ করে বলে পুনরায় মাতৃ জঠরস্থ হয়, হস্ত মেখলা প্রতীকে সকাম ভক্তের পুণর্জন্ম লাভ করার তত্ত্ব নিহিত। 
দেবীর চাইতে বড়তো কিছুই নেই। তাই তিনি কি পরিধান করবেন? বিশ্বব্যাপী শক্তির অবস্থান। শক্তিকে আবরিত করা যায়না। তিনি স্বয়ং প্রকাশ। তাই দেবী উলঙ্গ।দেবী কখন দক্ষিণ পদ কখন বাম্পদ, অগ্রে স্থাপন করেন ইহার অর্থ এক পদে অতীতকে অন্যপদে ভবিষ্যত কে অধিকার করিয়া আছেন।
কালো রং সকল বর্ণের অনুপস্থিত। তাই কালো। কখনো বা তিনি শ্যমা-শ্যামবর্ণা। কালো রং ভয়ের উদ্রেক করলেও শ্যাম রং কোমলতা জাগায়। স্নিগ্ধতা ও কমনীয়তা জাগায়। তাই মাতৃসাধক কালী শ্যামবর্ণা রূপেও দর্শন করেছেন।
মা কালী শবরূপী শিবের বুকে দন্ডায়মানা। শিব স্থির, কালী গতিময়ী। গতি ঠিক রাখতে হলে স্থিরের উপর তার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। শিব শুভ্রবর্ণ, কালী কালো বর্ণ। সাধক কূটস্থ দর্শন কালে এই শুভ্র রং বেষ্ঠিত কালো রং সাধনায় দেখে থাকেন

Thursday 28 September 2017

নবরাত্রি-দেবী সিদ্ধিধাত্রি


দেবীসিদ্ধিদাত্রি
সিদ্ধগন্ধর্বয়ক্ষাদ্য়ৈরসুরৈরমরৈরপি |
সেব্য়মানা সদা ভূয়াত সিদ্ধিদা সিদ্ধিদায়িনী ||

দেবী•সিদ্ধিদাত্রী অপরূপ লাবণ্যময়ী চতুর্ভুজা, ত্রিনয়নী, প্রাতঃসূর্যের মত রঞ্জিতা যোগমায়া মাহেশ্বরী ইনি সকল কাজে সিদ্ধি প্রদান করেন ।মাতা দূর্গার নবম শক্তি সিদ্ধিদাত্রী নামে পরিচিত। ইনি সর্বপ্রকার সিদ্ধি দান করেন। দূর্গা পূজার নবম দিনে তার আরাধনা করা হয়।

Wednesday 27 September 2017

নবরাত্রি-দেবী মহাগৌরি


দেবীমহাগৌরী
শ্বেতে বৃষে সমারূঢা শ্বেতাম্বরধরা শুচিঃ |
মহাগৌরী শুভং দদ্য়ান্মহাদেবপ্রমোদদা ||


মহাগৌরী

ইনি মার অষ্টম রূপ। ইনি গৌর বর্ণের, চতুর্ভূজা এবং বৃষভ বাহনা। অষ্টবর্ষা অভেদ গৌরী, তাই এখানে মার আট বছর মানা হয়। ইনি অপ্রাপ্ত বয়স্কা বালিকা রূপী। এ রূপ থেকেই মহা অষ্টমীতে কুমারী পূজার চিন্তা। চন্ডিতে বলা হয়েছে স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ সকলাজগৎসু র্অথাৎ জগতের সকল স্ত্রী তোমার অংশ স্বরূপ। যদিও সকল স্ত্রী জাতি সম্মানের । তাই অষ্টমীতে দেবীর সামনে অষ্টমবর্ষীয় বালিকাকে বসিয়ে যথা উপাচারে দেবী জ্ঞানে বন্দনা করা হয়। স্ত্রী জাতিকে এর চেয়ে সম্মান বোধ হয় কেউ দেয়নি।

Tuesday 26 September 2017

নবরাত্রি-দেবী কালরাত্রি

আজ সপ্তমী ...নবরাত্রির সপ্তম দিন...আজকের দিনের আরাধিতা দেবী হলেন দেবী কালরাত্রি... সকলকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
দেবীকালরাত্রি
একবেণী জপাকর্ণপূর নগ্না খরাস্থিতা |
লম্বোষ্ঠী কর্ণিকাকর্ণী তৈলাভ্য়ক্তশরীরিণী || বামপাদোল্লসল্লোহলতাকণ্টকভূষণা |
বর্ধনমূর্ধ্বজা কৃষ্ণা কালরাত্রির্ভয়ঙ্করী ||
সপ্তমীতে মাকে পূজা করা হয়। এখানে তিনি ভয়ঙ্কররূপী অন্ধকারবর্না। তবে তিনি সবার মঙ্গল করেন।

নবরাত্রি- দেবী কাত্যায়নী

নবরাত্রির ষষ্ট দিনের আরাধিতা দেবী... দেবী কাত্যায়নী...।সকলকে জানাই আমার শুভেচ্ছা
দেবী কাত্য়ায়ণী
চন্দ্রহাসোজ্জ্বলকরা শার্দূলবরবাহনা |
কাত্য়ায়নী শুভং দদ্য়াদেবী দানবঘাতিনী ||
কাত্যায়ন নামক এক মহর্ষি ছিলেন । তিনি বহু বছর ধরে মহামায়া কে কন্যা রূপে প্রাপ্তির জন্য কঠিন তপস্যা করেন । মহামায়া তার মনস্কামনা পূর্ণ করলেন ঋষি কাত্যায়নের তপস্যায় মা তার ঘরে আসেন, তাই তার নাম কাত্যায়িনী।। মহিষাসুর কে বধের জন্য এই দেবীর আবির্ভাব । দানব রাজ মহিষাসুরের অত্যাচার চরম সীমা অতিক্রম করলে দেবতা দের ও ব্রহ্মা , বিষ্ণু , মহেশের তেজে এক দেবীর আবির্ভাব হল। এই দেবী কে প্রথম কাত্যায়ন ঋষি পূজা করেন । তাই দেবীর আর এক নাম কাত্যায়নী । এই দেবী যুদ্ধে সেনা মন্ত্রী সমেত মহিষাসুরকে বধ করেন । এই দেবীকে মহিষমর্দিনী নামেও ডাকা হয় ।শাক্তধর্ম মতে, তিনি মহাশক্তির একটি ভীষণা রূপ এবং ভদ্রকালী বা চণ্ডীর মতো যুদ্ধদেবী রূপে পূজিতা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, তাঁর গাত্রবর্ণ দুর্গার মতোই লাল। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে রচিত পতঞ্জলির মহাভাষ্য গ্রন্থে তাঁকে মহাশক্তির আদিরূপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবী কাত্যায়নীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। স্কন্দ, বামন ও কালিকা পুরাণ অনুযায়ী, মহিষাসুর বধের নিমিত্ত দেবগণের ক্রোধতেজ থেকে তাঁর জন্ম। ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে এই পৌরাণিক ঘটনাটির প্রেক্ষাপটেই বাৎসরিক দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
মা কাত্যায়নী দশ ভুজা আবার চতুর্ভুজা । এঁনার বাহন সিংহ । দশভুজা দেবীর হাতে ত্রিশূল , ধনুক , বাণ , বজ্র , শঙ্খ , চক্র , পাশ , গদা , খড়্গ , ঢাল আদি অস্ত্র থাকে । চতুর্ভুজা দেবীর ওপরের দক্ষিণ হস্তে অভয় মুদ্রা ও বাম হস্তে পদ্ম থাকে , নীচের দক্ষিণ হস্তে বর মুদ্রা ও তরোয়াল থাকে । ইনি স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল ।খ্রিষ্টীয় পঞ্চম-ষষ্ঠ শতাব্দী নাগাদ রচিত মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত দেবীমাহাত্ম্যম্ ও একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থে কাত্যায়নীর দিব্যলীলা বর্ণিত হয়েছে। খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দীতে রচিত কালিকা পুরাণে বলা হয়েছে, উড্ডীয়ন(ওড়িশা) দেবী কাত্যায়নী ও জগন্নাথের ক্ষেত্র। কাত্যায়নী পূজা অতি প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত।
এঁনার পূজা করে গোপিনী গন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে পতি রূপে পেয়েছিলেন । এঁনাকে ব্রজ গোপী মণ্ডলের দেবী বলা হয় । ইনি ভক্ত দের চতুর্বিধ ফল দেন । রোগ , শোক , দুর্গতি , বিপদ থেকে রক্ষা করেন । এঁনার কৃপায় পাপ রাশি ধ্বংস হয় । ইনি পরম পদ , অলৌকিক তেজ প্রদান করেন ।যোগশাস্ত্র ও তন্ত্র মতে, কাত্যায়নী আজ্ঞা চক্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবী এবং এই বিন্দুতে মনোনিবেশ করতে পারলে তাঁর আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
  ইনি সিংহবাহনা এবং চতুর্ভূজা। ইনি ভগবানের পথে মানুষকে মতি দেন। বৃন্দাবনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রজবালাদের কাত্যায়নী ব্রত করতে বলেছেন। দূর্গাপূজার ষষ্ঠ দিনে কাত্যায়নী পূজা করা হয়।

Sunday 24 September 2017

নবরাত্রি- দেবী কুষ্মান্ডা


আজ নবরাত্রির চতুর্থ দিন, আজ দেবীর চতুর্থী বিহিত রূপ হল দেবী কুষ্মান্ডা। সকল কে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

দেবী কূষ্মাডা

সুরাসম্পূর্ণকলশং রুধিরাপ্লুতমেব চ |
দধানা হস্তপদ্মাভ্য়াং কূষ্মাণ্ডা শুভদাস্তু মে ||

মার চতুর্থ রূপ কূষ্মান্ডা। ইনি অষ্টভূজা এবং বাঘের উপর সমাসীন। চতুর্থীতে মার এরূপের আরাধনা করা হয়। ইনি ব্যাধি থেকে মুক্ত করে ইহলৌকিক পরলৌকিক সমৃদ্ধি দেন।
তন্ত্রে দেবী প্রসঙ্গে যে শ্লোক আছে- “সুরাসর্ম্প্ণ কলসং রুধিরাপ্লুতমেব চ। দধানাহস্তপদ্মাভ্যাং কুষ্মাণ্ডা শুভদাত্ত মে।।” যদিও তার সঙ্গে এই দেবীর শরীরের সবটা মেলে না। তবে দেবীর নামের অর্থটি খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করলেন। ‘উষ্মা’ শব্দের মানে তাপ। ‘কু’ মানে কুৎসিত-কষ্টদায়ক তাপ হচ্ছে ‘ত্রিতাপ’। আধিভৌতিক - আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক এই ত্রিতাপই জীবের দুঃখের কারণ। সর্বপ্রকার বন্ধনের কারণ ত্রিতাপ। জীব সদা জর্জরিত এই ত্রিতাপে। এর হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভই জীবের চরমকাম্য। এই ত্রিতাপ ‘কুষ্মা’ যিনি উদরে ধারণ করেন গ্রাস করেন, তিনিই কুষ্মাণ্ডা। সন্তানকে রক্ষা করতে জননী তার সমস্ত দুঃখ নিজে হরণ করেন। যেমন মহাদেব সমুদ্র মন্থনের সময় সমস্ত হলাহল পান করে নীলকণ্ঠ হয়েছেন, তেমনি জগজ্জননী দুর্গা আদ্যাশক্তি জগতের সর্বপ্রকার জ্বালা-যন্ত্রণার হাত থেকে সন্তানদের সর্বদা রক্ষা করতে করুণায় দ্রবীভূত হয়ে স্বেচ্ছায় সব তাপ নিজের শরীরে গ্রহণ করেন। দূরিতবারিণী-‘ত্রিতাপহারিণী’ মায়ের নাম তাই কুষ্মাণ্ডা।কুষ্মাণ্ডা বলে তাঁর পরিচিত শুধুমাত্র বছরের দু দিন, শরৎ ও বসন্তের শুক্লা চতুর্থীর দিন। এই দেবী দুর্গা কাশীর দক্ষিণ দিকের রক্ষয়িত্রী।



Saturday 23 September 2017

নববিধা ভক্তি

নববিধা ভক্তি:
শ্রবনং কীর্ত্তনং বিষ্ণোঃ স্মরনং পাদ সেবনং |
অর্চ্চনং বন্দনং দাস্যনং সখ্যমাত্ম নিবেদন ||
শ্রবণ, কীর্ত্তন, বিষ্ণু স্মরণ, অর্চন, বন্দন, দাস্য, সখ্য, ঈশ্বর সেবা, ঈশ্বরে পূর্ণ আত্মনিবেদন ভক্তির এই নয়টি অঙ্গকে একত্রে নববিধা বা নব লক্ষণা ভক্তি বলা হয় |
ভগবান শ্রীরামচন্দ্র ভক্তিমতি মাতা শবরীকে যে নববিধা ভক্তির শিক্ষা প্রদান করেছিলেন তা নিম্নরূপ~
" হে শবরী , আমি এখন তোমাকে নববিধা ( নয় প্রকার ) ভক্তির কথা বলছি , তুমি সাবধান হয়ে শুন আর মনে ধারন করো -
১. প্রথম ভক্তি হলো সাধু সন্তের সৎসঙ্গ ,
২. দ্বিতীয় ভক্তি হলো আমার কথা প্রসঙ্গে প্রেম ,
৩. তৃতীয় ভক্তি হলো অভিমান রহিত হয়ে গুরুর চরন কমলের সেবা করা ,
৪. চতুর্থ ভক্তি হলো ছল , কপট ছেড়ে আমার গুনসমূহের গান করা ,
৫. পঞ্চম ভক্তি হলো আমার নাম (রাম মন্ত্রের) জপ করা , আমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যা বেদে প্রসিদ্ধ আছে ,
৬. ষষ্ঠ ভক্তি হলো ইন্দ্রিয়ের নিগ্রহ , শীলস্বভাব , কার্যে বৈরাগ্য আর নিরন্তর সাধু সন্ত পুরুষদের ধর্ম আচরনে লেগে থাকা ,
৭. সপ্তম ভক্তি হলো এই জগতকে সমভাবে আমাতে ওতপ্রোত ভাবে দেখা আর সাধু সন্তদের আমার থেকেও অধিক মান্যতা দেওয়া ।
৮. অষ্টম ভক্তি হচ্ছে যাকিছু পাওয়া যায় তাতেই সন্তুষ্ট থাকা আর স্বপ্নেও অপরের দোষ না দেখা ।
৯. নবম ভক্তি হচ্ছে সরলতা আর সবার সঙ্গে কপট রহিত ব্যবহার করা, হৃদয়ে আমার প্রতি বিশ্বাস রাখা আর যেকোন অবস্থাতেই হর্ষ আর বিষাদ না করা ।
এই নববিধা ভক্তির মধ্যে যার ভিতর যেকোন একটি ভক্তিও এসে যায় , এবার সে পুরুষই হউক বা নারীই হউক, জড়ই হউক বা চেতনই হউক, হে ভামিনী ! আমার কাছে সে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে যায় । অতপরঃ তোমার মধ্যেতো সবধরনের ভক্তিই দৃঢ় আছে .... অতএব যে গতি যোগীদেরও দুর্লভ, সেটাই আজ তোমার জন্য সুলভ হয়ে গেছে ।

পুজার উপাচার

পুজার উপাচার অনুযায়ী পূজা অনেক প্রকার হয় যেমন-পঞ্চোপচার, দশোপচার, ষোড়শোপচার,অষ্টাদশ-উপচার— ইত্যাদি।
পঞ্চ-উপচার—
“গন্ধম্ পুষ্পম্ তথা ধূপম্ দীপম্ নৈবেদ্যমেব চ
অখণ্ডম্ ফলমাসাদ্য কৈবল্যম্ লভতে।।”

গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য—এই পঞ্চ উপচারে দেবপূজা করলে এবং একটি গোটা ফল ঠাকুরকে দিলে ভক্ত কৈবল্য, অর্থাৎ মুক্তি লাভ করে।

দশ-উপচার—
“পাদ্যমর্ঘ্যম্ তথাচমনম্ মধুপর্কাচমনম্ তথা।
গন্ধাদয়ো নৈভেদ্যান্তা উপচারা দশ ক্রমাৎ”।।

পা ধোওয়ার জল, হাত ধোওয়ার জল, মুখ ধোওয়ার জল, মধুপর্ক (দই,দুধ,ঘি,মধু ও চিনি দ্বারা প্রস্তুত পানীয়), পুনরায় মুখ ধোওয়ার জল, সুগন্ধী ফুল, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য—এই হল দশ-উপচার।

ষোড়শোপচার—
“পাদ্যমর্ঘ্যম্ তথাচমনম্ স্নানম্ বসন ভূষণে।
গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈভেদ্য আচমনম্ ততঃ।।
তাম্বুলমর্চনা স্তোত্রম্ তর্পণম্ চ নমস্ক্রিয়া।
প্রযোজয়েচ্ছ পুজ্যামুপচারাংস্তু ষোড়শঃ”।।
পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, স্নানীয় জল, বস্ত্র, অলংকার, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, আচমনীয়, পান-সুপুরি, স্তোত্র-পাঠ, তর্পণ (তীর্থের পবিত্র জল স্মরণ করে হাতে জল নিয়ে অর্ঘ্য দান), ও নমস্কার—এই হল ষোড়শোপচার।

অষ্টাদশ-উপচার—
“আসনম্ স্বাগতম্ পাদ্যমর্ঘ্যম্ আচমনীয়কম্।
স্নানম্ বস্ত্রোপবীতং চ ভূষণানি চ সর্বস্ব।।
গন্ধম্ পুষ্পম্ তথা ধূপম্ দীপম্ অন্নম্ চ তর্পণম্।
মাল্যানুলেপনঞ্চৈব নমস্কার বিসর্জনে।।
অষ্টাদশোপচারৈন্তু মান্ত্রী পূজাম্ সমাচরেৎ।।”
বসার আসন, আবাহন, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, স্নানীয় জল, বস্ত্র, যজ্ঞোপবীত (পৈতে), অলংকার, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, তর্পণ, মালা, অনুলেপন (চন্দন ইত্যাদি), ও নমস্কার। এই হল পুজোর অষ্টদশ উপচার।

এই উপচার গুলির বিস্তারিত বর্ণনা সিদ্ধিযামল তন্ত্রে পাওয়া যায়।

নবরাত্রি-দেবী চন্দ্রঘন্টা

নবরাত্রির তৃতীয় দিনে আজ দেবী চন্দ্রঘণ্টার আরাধনা। নবরাত্রির এই তৃতীয় দিনে সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। দেবী মায়ের অশেষ কৃপা বর্ষিত হউক তার ভক্তদের উপর।
দেবী চন্দ্রঘণ্টা
পিণ্ডজপ্রবরারূঢা চন্দকোপাস্ত্রকৈর্য়ুতা |
প্রসাদং তনুতে মহ্য়ং চন্দ্রঘণ্টেতি বিশ্রুতা ||
রম্ভাসুরের ছেলে মহিষাসুর যখর প্রচণ্ড বিক্রমে দেবতাদের হারিয়ে দিয়ে স্বর্গরাজ্য দখল করেছিল, তখন দেবতারা একত্রিত হয়ে তাঁদের নেতা ব্রহ্ম-বিষ্ণু-মহেশ্বরের শরণাপন্ন হলে সেই তিন দেবতা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। তখন তাঁদের শরীর থেকে তেজ বাইরে এসে এক জায়গায় পুঞ্জীভূত হতে লাগলো। ক্রমে অনান্য দেবতারাও উত্সাহিত হয়ে নিজের নিজের শরীর থেকে তেজরাশি বাইরে এনে ঐ তেজকে সমৃদ্ধ করলেন। ফলে দেবতাদের দেহসঞ্জাত তেজ থেকে সৃষ্টি হলো এক অতুলনীয়া দেবীমূর্তির। ইনিই আদিশক্তি।সকল দেবতাদের অন্তরের শক্তিরূপেই তিনি তাদের ভেতরে ছিলেন।তাঁরই শক্তিতে এইসব দেবতারা শক্তিমান ছিলেন। আজ বিপদাপন্ন হয়ে সেই শক্তিকে বাইরে এনে তাকে দেওয়া হল ঐশী শক্তির দেবীমূর্তি। নানা দেবতার শক্তিতে শক্তিমতী সেই দেবীকে দেখে আহ্লদিত দেবতারা তাঁদের নিজের নিজের অস্ত্রাদি থেকে নূতন অস্ত্র সৃষ্টি করে দেবীর করকমলে সেগুলি ধরিয়ে দিলেন। তাঁকে নানা অলংকার বস্ত্রাদিও তাঁরা দিলেন-মনের মত করে নানা দ্রব্যসম্ভারে তাঁকে সাজিয়ে তাঁর বন্দনা করে প্রার্থনা জানালেন-মা আমাদের সমূহ বিপদ। অসুর মহিষরাজের হাত থেকে তুমি আমাদের রক্ষা কর, স্বর্গরাজ্য আমাদের ফিরিয়ে দাও।
তাঁকে নানা অস্ত্র-শস্ত্রাদি যখন সব দেবতারা দিচ্ছিলেন, তখন দেবরাজ ইন্দ্র, “দদৌ তস্যৈ সহস্রাক্ষোঘণ্টাম ঐরাবতং গজাৎ” তাঁর বাহন ঐরাবৎ হাতির গলায় ঘণ্টা থেকে একটি ঘণ্টা নিয়ে দেবীর একটি হাতে দিলেন। ঘণ্টা সর্ববাদ্যময়ী।যুদ্ধ উত্সবে প্রাচীনকালে ,এমনকি এখনও নানা বাদ্যাদি বাজানো হয়। যাকে মিলিটারী ব্যান্ড বলে। দেবীর সেই যুদ্ধে এই ঘণ্টা সেই রকম একটি বাদ্য ও বাজনা। তবে এটি দৈবশক্তিসম্পন্ন। এই ঘণ্টানাদ বিকট শব্দ সৃষ্টি করেছিল “হিরস্তি দৈত্য তেজাংসি স্বনেনাপূর্য্য যা জগৎ”। সেই ঘণ্টার শব্দেই দৈত্যদের প্রাণ ভয়ে খাঁচাছাড়া অবস্থা হয়েছিল। তাদের তেজ হরণ করবার জন্য দেবী সেই প্রচণ্ড শব্দের ঘণ্টাবাজিয়েছিলেন। তাই যুদ্ধের পরে দেবতারা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন,মা তোমার ঐ যে ঘণ্টা অসুরদের তেজ হরণ করেছিল সেই ঘণ্টার আমরাও শরণ নিচ্ছি, আমাদের পাপকে সেই ঘণ্টা যেন হরণ করে নেয়। “সা ঘণ্টা পাতু নো দেবি পাপেভ্যো নঃ সুতাম্ইব ”। এই জন্য দেবীর একটি নাম চণ্ডঘণ্টা-যিনি প্রচণ্ড শক্তিসম্পন্ন আওয়াজ সৃষ্টিকারী ঘন্টা ধারণ করে আছেন,তিনি চণ্ডঘণ্টা।

Friday 22 September 2017

নবরাত্রি-দেবী ব্রহ্মচারিণী

আজ আশ্বিনের শুক্লা দ্বিতীয়া, নবরাত্রির দ্বিতীয় দিন...। সকলকে জানাই শুভেচ্ছা...।
নব রাত্রির দ্বিতীয় রাত্রে পুজিত হন দেবী ব্রহ্মচারিণী...।
দেবী ব্রহ্মচারিণী
দধানা করপদ্মাভ্য়ামক্ষমালা কমণ্ডলূ |
দেবী প্রসীদতু ময়ি ব্রহ্মচারিণ্য়নুত্তমা ||

এটি মার দ্বিতীয় রূপ। মা এখানে নিজেই সাধিকা ব্রহ্মচারিণী রূপে। ইনিও দ্বিভূজা, হাতে অক্ষমালা এবং কমন্ডুলু। দ্বিতীয়াতে এর ধ্যান পূজা করার নিয়ম। ইনি বৈরাগ্য, সদাচার, সংযম ভক্তকে দান করেন।মায়ের এই রূপ সংযমের। এই রূপে মা ভক্তের সংযমে সন্তুষ্ট হলে তাকে সুখ, সমৃদ্ধির আশীর্বাদ দেন।
দেবী শিবকে পতি হিসাবে পাওয়ার জন্য হিমালয়ে যখন কঠোর তপস্যা করেছিলেন,তখনকার তপস্বিনী মূর্তি এটি। ব্রহ্ম শব্দের একটি অর্থ তপস্যা। তপের বা তপস্যার আচরণকারিণী তাই ব্রহ্মচারিণী। বলা হয় “বেদস্তত্বং তপব্রহ্ম"বেদ, তত্ত্ব আর তপ ব্রহ্মের অর্থ। ব্রহ্মতত্ত্ব চিন্তাময়ী, তপস্বরূপিনী দেবী অম্বিকা পার্বতীর এই তপোময়ী মূর্তিই ব্রহ্মচারিণীর স্বরূপ। ঐ কল্পে শিবকে পতি হিসাবে পাওয়ার জন্য তিনি আহার-নিদ্রা সংযম করে কঠোর তপস্যা করেছিলেন। এমনকি গলিত পত্রও তিনি গ্রহণ করেননি আহার্য হিসাবে। তাই তখন তাঁর নাম হয়েছিল অপর্ণা। তাঁর এত কঠোর তপস্যা দেখে মাতা মেনকা মিনতি করে বলেছিলেন-‘উ-মা’,আর নয় মা,এতো কষ্ট কোরো না। তখন তার প্রসন্ন হয়ে চন্দ্রমৌলিশ্বর মহাদেব প্রথমে মদন ভস্ম করেন, তারপর তার চিরসঙ্গিনী দেবী পার্বতীকে পত্নীত্বে বরণ করেন। দেবী পার্বতীর সেই হিমালয়ের ব্রহ্মচর্যব্রতধারিণী বিগ্রহের স্মরণে এই নবদুর্গার দ্বিতীয়ায় নাম হয়েছে ব্রহ্মচারিণী।
(সংগৃহীত)

Thursday 21 September 2017

নবরাত্রি-- দেবী শৈলপুত্রী

আজ আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ। আজ থেকে শুরু শরৎকালীন নবরাত্রির আরাধনা। আজ মা শৈলপুত্রীর আরাধনায় আপনাদের জানাই স্বাগত। আসুন এই নবরাত্রিতে মা কে নিয়ে করি আলোচনা।
দেবী শৈলপুত্রী
বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাং| 
বৃষারূঢাং শূলধরাং শৈলপুত্রী য়শস্বিনীম ||
শৈলপুত্রী : নবদূর্গার প্রথম রূপ শৈলপুত্রী। গিরি রাজের কন্যা বলে শৈলপুত্রী নামে খ্যাত হন। ইনি বৃষভ বাহনা। ইনি দ্বিভূজা হাতে ত্রিশূল আর পদ্ম।
দক্ষযজ্ঞে দেবী ভগবতী সতী যখন শিবনিন্দা শুনে দেহত্যাগ করলেন, তখন মহাদেব ক্রোধে উন্মত্ত ও শোকে বিহ্বল হয়ে সেই দক্ষযজ্ঞ ধ্বংস করে সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে উন্মত্তের মতো সারা ত্রিলোক ঘুরতে লাগলেন। ত্রিভুবন তাঁর তাণ্ডবনৃত্যে সন্ত্রস্ত কম্পিত হয়ে উঠল। বিশ্বের এই বিপদ সামলাবার জন্য নারায়ণ তাঁর সুদর্শন চক্রে শিবস্কন্ধস্থিত দেবীর শরীর একটু একটু কবে কেটে ফেলতে লাগলেন। দেবী দেহের সেই টুকরো যেখানে পড়ল সেখানে সৃষ্টি হল একান্নটি শক্তিপীঠ। আর এদিকে ভাববিভোর শংকর তাঁর কাঁধে দেবীর শরীর না পেয়ে আত্মস্থ হয়ে কৈলাসে গিয়ে ধ্যানে বসলেন। শক্তি লাভের জন্য শুরু হল মহাদেবের তপস্যা।
অন্যদিকে স্বর্গরাজ্যে তারকাসুরের অত্যাচারে দেবতারা বিপন্ন হয়ে ব্রহ্মার কাছে গেলে তিনি বিধান দিলেন -উপযুক্ত সেনাপতির অভাবে তোমাদের এই পরাজয়। এই সেনাপতি হবেন,শিব-শক্তির মিলনের ফলে সৃষ্ট হবেন যিনি,সেই কুমার। দেবতারা তখন দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়াকে কাতর হয়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন - ‘মা, তুমি এসো, আবির্ভূত হও, শিবসঙ্গে আবার বিরাজিত হও-আমাদের এই বিপদ থেকে রক্ষার জন্য তোমার ও দেবাদিদেবের মিলনে একটি উপযুক্ত সেনাপতি আমাদের দান কর।’ দেবতাদের এই কাতর প্রার্থনায় মহাদেবী দুর্গা আবার মর্ত্যশরীর ধারনে স্বীকৃতা হলে। এর আগে নাগাধিরাজ হিমালয় ও পত্নী মেনকা স্বয়ং জগদম্বাকে কন্যারূপে পাওয়ার জন্য অনেক তপস্যা করেছিলেন। এখন দেবতাদের ইচ্ছা ও হিমালয়ের প্রার্থনা পূর্ণ করবার জন্য দেবী পার্বতী হৈমবতী কন্যা হয়ে হিমালয়ের গৃহে জন্ম নিলেন। তখনই তাঁর নাম হল শৈলপুত্রী। এই দেবীর সৃষ্টি এইভাবেই হয়েছিল। ইনিই পরে শিবের জন্য তপস্যা তাঁর সঙ্গে মিলিত হয়ে কার্ত্তিকের জন্মদান করেন।
দেবী শৈলপুত্রীর মন্দির রয়েছে কাশীর (বারাণসী) আলাইপুরার মড়িঘাটের কাছে। বর্তমান মন্দিরটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসস্তুপের উপর নির্মিত। তবে মন্দির চত্বরের প্রাচীন কুয়োটি এখনও আছে। মূল মন্দিরটি ছোটো। এই মন্দিরের গর্ভগৃহের পশ্চিম দেওয়ালে রয়েছে শৈলপুত্রীর কষ্টিপাথরের মূর্তিটি। সামনে কুণ্ডের মধ্যে কাশীখণ্ডস্থিত প্রাচীন শিবলিঙ্গ শৈলশ্বর। দেবীমূর্তি ও শিবলিঙ্গ উভয়েরই উচ্চতা এক হাত। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রির প্রথম দিনে এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়। এই দিনটিই সাধকদের নবদুর্গা-আরাধনার প্রথম দিন; সাধকের মন এই দিনে মূলাধার চক্রে অবস্থান করে।
(সংগৃহীত)

Friday 15 September 2017

ব্রহ্মান্ডের ১৪টি ভুবন


আমাদের ব্রহ্মান্ডের ১৪টি ভুবন
সত্যলোক

তপোলোক
জনলোক
মহর্লোক
স্বর্গলোক
ভুবর্লোক
ভূলোক(পৃথিবী)
অতল
বিতল
১০ সুতল
১১ তলাতল
১২ মহাতল
১৩ রসাতল
১৪ পাতাল
সূর্য থেকে চন্দ্রের দূরত্ব লক্ষ যোজন বা ১২ লক্ষ কিলোমিটার চন্দ্র থেকে লক্ষ যোজন বা লক্ষ মাইল ঊর্ধ্বে নক্ষত্রমন্ডল অবস্থিত নক্ষত্রমন্ডল থেকে লক্ষ যোজন বা ২৪ লক্ষ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে বুধ গ্রহ অবস্থিত বুধ গ্রহ থেকে লক্ষ যোজন বা ২৪ লক্ষ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে শুক্রগ্রহ অবস্থিত শুক্রগ্রহ থেকে লক্ষ যোজন বা ২৪ লক্ষ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে মঙ্গলগ্রহ অবস্থিত । মঙ্গলগ্রহ থেকে লক্ষ যোজন বা ২৪ লক্ষ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে বৃহস্পতিগ্রহ অবস্থিত । বৃহস্পতিগ্রহ থেকে লক্ষ যোজন বা ২৪ লক্ষ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে শনিগ্রহ অবস্থিত শনিগ্রহের ১২ লক্ষ কিলোমিটার উপরে সপ্তর্ষিমন্ডল অবস্থিত সপ্তর্ষিমন্ডলের ১২ লক্ষ কিলোমিটারের উপরে ধ্রুবলোক অবস্থিত । ভৃগুমুনিদের লোক মহর্লোক থেকে ধ্রুবলোকের দূরত্ব কোটি যোজন অর্থাৎ ১২ কোটি কিলোমিটার মহর্লোক থেকে চতুষ্কুমারদের লোক জনলোকের দূরত্ব কোটি যোজন অর্থাৎ ১২ কোটি কিলোমিটারজনলোক থেকে বৈরাজ দেবগনের বাসস্থান তপলোকের দূরত্ব কোটি যোজন বা ৯৬ কোটি কিলোমিটার ঊর্ধ্বে তপলোক থেকে কোটি যোজন ঊর্ধ্বে অর্থাৎ ৪৮ কোটি কিলোমিটার দূরত্বে সত্যলোক (ব্রহ্মার স্থান) অবস্থিত সূর্যমন্ডলের ১০ হাজার অর্থাৎ ৮০ হাজার মাইল নিচে রাহুগ্রহ অবস্থিত । রাহুগ্রহের ১০ হাজার অর্থাৎ ৮০ হাজার মাইল নিচে ভুবর্লোক অবস্থিত ভুর্বলোকের ১০০ যোজন অর্থাৎ ১২০০ কিলোমিটার নিচে ভূলোক বা পৃথিবী । পৃথিবী নীচে রয়েছে সপ্ত পাতাল লোক প্রতি ১০ হাজার যোজন অর্থাৎ ৮০ হাজার মাইল অন্তর অন্তর যথাক্রমে অতল(ময়দানবের পুত্র বলের অবস্থান),বিতল(হরগৌরীর অবস্থান),সুতল(বলি মহারাজ), তলাতল(ময়দানবের অবস্থান), মহাতল(দৈত্য দানবদের বাস), রসাতল(বহু ফণাযুক্ত জ্যোতির্ময় মণি সম্পন্ন সর্পদের বাসস্থান) পাতাল(বাসুকীরাজের অবস্থান) গ্রহলোক অবস্থিত পৃথিবী থেকে পাতাল লোকের দূরত্ব ৭০ হাজার যোজন বা ,৬০,০০০ মাইল পাতাল থেকে ৩০ হাজার যোজন অর্থাৎ ,৪০,০০০ মাইল নিচে অনন্ত ধাম । পৃথিবী থেকে নরক গ্রহের দূরত্ব লক্ষ ৯২ হাজার মাইল




কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...