Friday 23 April 2021

গোপালের ডান বুকে একটি পায়ের ছাপ আছে......কার সেটি?

 আপনাদের যাদের ঘরে গোপালের মুর্ত্তি আছে তাঁরা হয়তো লক্ষ্য করেছেন গোপালের ডান বুকে একটি পায়ের ছাপ আছে। জানেন কি এই পায়ের ছাপটি কার? হয়তো বা আপনারা অনেকেই জানেন। যারা জানেন না তাঁদের জন্যে তুলে ধরছি এর কারন।

এক কাহিনী  অনুসারে

একবার সকল দেবতারা ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের মধ্যেকে শ্রেষ্ঠ কে, তা জানার জন্য মহর্ষি ভৃগুর শরণাপন্ন হন। মহর্ষি ভৃগু তখন এই তিন দেবতাদের পরীক্ষার জন্য সর্ব প্রথম ব্রহ্মার কাছে যান এবংতিনি ইচ্ছা করে ব্রহ্মার প্রতি সম্মান না দেখালে, ব্রহ্মা তাঁর প্রতি তীব্র ক্রোধ প্রকাশ করেন। পরে স্তব দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট করে মহাদেবের কাছে যান। মহাদেবকে সম্মান না দেখানোর কারণে, মহাদেব তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হন, এবারও ভৃগু স্তব করে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করেন। এরপর ইনি বিষ্ণুকে পরীক্ষা করার বিষ্ণুর আবাসস্থল গোলকধামে যান। সেখানে বিষ্ণুকে নিদ্রিত অবস্থায় দেখে ইনি বিষ্ণুর বক্ষে পদাঘাত করেন।বিষ্ণু ঘুম থেকে জেগে উঠে ভৃগুর পায়ে আঘাত লেগেছে মনে করে  পদসেবা করতে থাকেন।   বিষ্ণু মহর্ষি ভৃগুর পা ধরলেন এবং এমনভাবে হাত বুলাতে লাগলেন, যাতে ঋষির আরাম বোধ হয়। বেদে আছে, ঋষি ভৃগুর পায়ের পাতায় একটি অতিরিক্ত চোখ ছিল। এই কাজ করার সময় বিষ্ণু ঋষির অতিরিক্ত চোখটিতে চাপ দিলেন। কথিত আছে, ঋষির এই অতিরিক্ত চোখটি ছিল তার অহংকারের প্রতীক। ঋষি তখন  তাঁর  ভুল বুঝতে পেরে বিষ্ণুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। সেই থেকে তাঁর বোধ হল ত্রিমূর্তির মধ্যে বিষ্ণুই শ্রেষ্ঠতম।এরপর ভৃগু বিষ্ণুকেই শ্রেষ্ঠ দেবতা হিসাবে স্বীকৃতি দেন। উল্লেখ্য এরপর থেকে বিষ্ণুর বুকে ভৃগুর পদচিহ্নের ছাপ পড়ে যায়।

ভগবান শ্রী বিষ্ণু বা গোপালের বিগ্রহ যখনই তৈরি করা হয় তখনি ভগবানের ডান বক্ষের দিকে ভৃগু মুনির চরণ অঙ্কন করা হয়। ভৃগু মুনির চরণের ছাপ ছাড়া গোপাল ঠাকুরের বিগ্রহ সম্পূর্ণ হয় না।

(চলবে)

Saturday 17 April 2021

প্রসঙ্গঃ- গীতা

প্রসঙ্গঃ- গীতা 

 আমরা জানি শ্রীমদ্ভাগবত গীতাতে সর্বমোট ৭০০ টি শ্লোক ও ১৮টি অধ্যায় আছে আর সেই আঠারোটি অধ্যায় নিয়ে শ্রীমদ্ভাগবত গীতাতে ব্যাসদেব সর্বমোট আঠারোটি যোগের উল্লেখ করেছেন। সেই আঠারোটি যোগ হল

১ অর্জুন বিষাদ-যোগ
২ সাংখ্য যোগ
৩ কর্ম যোগ
৪ জ্ঞান যোগ
৫ সন্ন্যাস যোগ
৬ ধ্যান যোগ
৭ জ্ঞান বিজ্ঞান যোগ
৮ অক্ষর ব্রহ্মযোগ
৯ রাজ যোগ
১০ বিভুতি যোগ
১১ বিশ্বরূপ দর্শন যোগ
১২ ভক্তি যোগ
১৩ ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ
১৪ গুনত্রয়বিভাগযোগ
১৫ পুরুষোত্তমযোগ
১৬ দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ
১৭ শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ
১৮ মোক্ষযোগ
যোগশাস্ত্রের প্রণেতা মহর্ষি পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগের সব উপদেশ গীতা থেকেই সংগৃহীত
গীতা-কে গীতোপনিষদ বলা হইয়ে থাকে কারন গীতা উপনিষদ্‌ এর অন্তর্গত। যদিও "উপনিষদ্‌" ধর্মগ্রন্থগুলি শ্রুতিশাস্ত্রের অন্তর্গত কিন্তু গীতা মহাভারত-এর অংশ বলে গীতা কিন্তু স্মৃতিশাস্ত্রের অন্তর্গত। আবার উপনিষদের শিক্ষার সারবস্তু গীতা-য় সংকলিত হয়েছে বলে একে বলা হয় "উপনিষদ্‌সমূহের উপনিষদ্‌"।গীতা-কে অনেক ক্ষেত্রে মোক্ষশাস্ত্র নামেও অভিহিত করা হয়।

গীতা-র বিষয়বস্তু হল ভগবান শ্রী কৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু ঠিক আগে অর্জুন যখন শত্রুপক্ষে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও গুরুকে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। এই সময় কৃষ্ণ তাকে ক্ষত্রিয় যোদ্ধার ধর্ম স্মরণ করিয়ে এবং বিভিন্ন প্রকার যোগশাস্ত্র ও বৈদান্তিক দর্শন ব্যাখ্যা করে তাকে যুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করেন। তাই গীতা-কে হিন্দুদের জীবনচর্যার একটি ব্যবহারিক পথনির্দেশিকা হিসেবে গণ্য করা হয়। গীতাতে শ্রী কৃষ্ণ যোগশাস্ত্র ব্যাখ্যার সম্রিষন নিজের "স্বয়ং ভগবান" রূপটি উন্মোচিত করেন এবং বিশ্বরূপে অর্জুনকে দর্শন দেন। অর্জুন ছাড়াও প্রত্যক্ষভাবে কৃষ্ণের মুখ থেকে গীতা শুনেছিলেন সঞ্জয়, হনুমান কারন তখন হনুমান অর্জুনের রথের চূড়ায় ছিলেন আর ঘটোৎকচের পুত্র বর্বরিক যিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সব ঘটনা দেখেছিলেন।

মূল গীতার আঠারটি অধ্যায় আবার ঐ আঠারটি অধ্যায়ের প্রকৃতি বিচার করলে দেখা যায় যে ওই অধ্যায় গুলি কোন না কোন যোগের অন্তর্গত বলে মনে হয়। প্রথম, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায় কে ভক্তি যোগ , দ্বিতীয়, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম অধ্যায় কে জ্ঞানযোগ, তৃতীয় কর্ম যোগ ও চতুর্থ অধ্যায়কে ধ্যানযোগের অন্তর্গত করা যায়।

জ্ঞানযোগ কি? ঈশ্বর কি এবং কেমন তা বিচার করে জানার উপায়, ভক্তিযোগ হল ঈশ্বরকে ভালোবেসে তাঁকে পাওয়ার উপায়, ধ্যানযোগ বা রাজযোগ হল মনকে একাগ্র করে তাঁর স্বরূপ কে প্রত্যক্ষ করার চেষ্ঠা আর সকল কর্মের ফল ঈশ্বরে সমর্পন করে নিষ্কাম চিত্তে কর্তব্য সম্পন্ন করে তাঁকে লাভ করাকে কর্মযোগ বলে। সব যোগের একই উদ্দেশ্য জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন। এই মধুর মিলনকেই জ্ঞানীরা বলেন ব্রহ্মানুভুতি, যোগীরা বলেন আত্মজ্ঞান লাভ বা সমাধি,ভক্তদের কাছে এ ঈশ্বরলাভ, কর্মযোগীদের কাছে এ কর্মবন্ধন থেকে মুক্তিলাভ। অনেকেই সাধারন ভাবে এই মিলনকে সিদ্ধিলাভ বলে মনে করেন।


কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...