Saturday 26 October 2019

ভূতচতুর্দশী বা নরকচতুর্দশী কি?


ভূতচতুর্দশী বা নরকচতুর্দশী কি?

শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
(সঙ্কলিত)

দীপান্বিতা কালীপুজোর আগের দিনটি সকলের কাছে ভূতচতুর্দশী নামেও পরিচিতকথিত এই রাত্রটি বৎসরের সবচাইতে অন্ধকারময় রাত্র  এই দিনটির পিছনে আছে একটি পৌরাণিক কাহিনি দানবরাজ বলির দানবীর হিসেবে খুব আত্ম-গর্ব ছিরতিনি স্বর্গ মর্ত্য পাতালের অধীশ্বর হওয়ার বাসনায় দানকার্যে উন্মত্ত হয়ে পরেছিলেন তাঁর এই কার্যে ধীরে ধীরে একসময়  দারুণ সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন স্বর্গের দেবতারা তখন দেবগুরু বৃহস্পতির পরামর্শে ভগবান বিষ্ণু বামনরূপ ধারণ করে এসে দানবরাজ বলির কাছে  তাঁর পা রাখার জন্য তিন পা পরিমাণ জমি ভিক্ষা চাইলেনশুধুমাত্র তিনপাদ ভুমি!!! শুনে রাজা বলি তাচ্ছিল্যের সাথে এ্মন ক্ষুদ্র দান দিতে  কিছু চিন্তা ভাবনা না করে অঙ্গীকার করে ফেলেনস্বয়ং বিষ্ণু যে এসেছেন রাজার কাছে বিষয়টা দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য ঠিক বুঝতে পেরেছিলেন কিন্তু কোনো ভাবে রাজা বলিকে একথা বোঝাতে পারেন নি শুক্রাচার্যনিজের দম্ভের মোহে অন্ধ হয়ে পরেছিলেন তিনি দান দিতে রাজি হলেন নিজে কথা রক্ষার্থে শিষ্যের বিপদ আশঙ্খা করে দৈত্যগুরু নিজেকে ক্ষুদ্রাকারে পরিণত করে কমন্ডলুর মুখে প্রবেশ করে কমন্ডলুর মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন যাহাতে বলিরাজ জলের গন্ডুষ নিয়ে দানকার্য্য সম্পন্ন করতে না পারেন অন্তর্যামী ভগবান বিষ্ণু তা টের পেয়ে বলিরাজকে কুশ দ্বারা কমন্ডলুর মুখ পরিষ্কার করতে নির্দেশ দেন, বিষ্ণুর পরামর্শে বলিরাজ তা করতে গেলে তা শুক্রাচার্যের চোখে বেঁধে যায় আর সেই কারনে শুক্রাচার্যের এক চোখ অন্ধ অঙ্গীকারবদ্ধ বলিরাজ তবুও তাঁর দানক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রস্তুত হলে বামনরূপী ভগবান বিষ্ণু  তাঁর একটা পা রাখলেন স্বর্গে, আর একটা পা দিলেন মর্তে আর  নাভি থেকে বের হল  তাঁর আর একটা পা এই  সেই পা রাখলেন রাজা বলির মাথায়, এতে  ধীরে ধীরে রাজা বলি ঢুকে গেলেন পাতালে রাজা বলি জেনে বুঝেও  এই দান কার্য সম্পন্ন করেছিলেন  বলে ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির নরকাসুর রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন মর্ত্যলোকে নরকাসুররূপী বলি রাজা কালীপুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশী তিথিতে মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে সঙ্গে থাকে তাঁর অসংখ্য অনুচর হিসাবে পরলোক জগতের ভূত প্রেতরা তাদের দূরে রাখার জন্য জ্বালানো হয় প্রদীপ তিথিটা থাকে চতুর্দশী তাই জ্বালানো হয় চোদ্দোটা প্রদীপ প্রদীপ গুলি মূলত নিবেদিত হয় স্বর্গত পিতৃপুরুষ, প্রেতাত্মা, ধর্ম, রুদ্র, বিষ্ণু, কান্তারপতি বা অরণ্যে অধিষ্ঠিত দেবতাদের উদ্দেশ্যে পরলোকগত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পারলৌকিক যেকোনও কাজের ফল কখনও বৃথা যায় না তাদের আত্মার আশীর্বাদ সূক্ষ্মভাবে কাজ করে থাকে যিনি তার উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানোর কাজটি করে থাকেন তার ওপর কথা সূর্যের মতো সত্য, শুভ কাজের ফল যেমন কখনও বৃথা যায় না তেমনই অশুভ কর্মের ফল দেহধারীকে ভোগ করতেই হবে
ভূতচতুর্দশী আবার  অনেক স্থানে  নরক চতুর্দশী হিসেবে পরিচিত
কথিত আছে, ভগবান ইন্দ্রকে পরাজিত দেবমাতা অদিতির ( সকল দেব-দেবীর জননী) কানের বালা ছিনিয়ে নিয়ে, রাক্ষসরাজ নরকাসুর, প্রাগজ্যোতিষ পুরের (নেপালের দক্ষিণে) শাসক হয়ে বসেন নরকাসুর, দেবতা ঋষিমুনিদের ১৬০০০ কন্যাদেরও তার অন্তঃপুরে বন্দী করে রাখেন নরক চতুর্দশীর আগের দিন, শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরের নিধন করে, কুমারী কন্যাদের বন্দীদশা থেকে মুক্ত করেন এবং দেবমাতা অদিতির বহু মূল্যবান কানবালাও উদ্ধার করেন এইভাবেই, অশুভের ওপর শুভ- এর জয়কে উদযাপন করতেই, নরক চতুর্দশী পালিত হয়ে থাকে
 ভূতচতুর্দশী তে ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানো হয় সেই  রীতি কিন্তু  বহু প্রাচীন ---
পিতা দশরথের সত্য রক্ষার জন্য ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের ১৪ বছর বনবাস যাত্রার সমাপ্তি হয় রাবণ বধের মাধ্যমে প্রভু রামের অদর্শনে এই ১৪ বছর অযোধ্যা ছিল বিরহ আর শোকের আধারে নিমজ্জিত বলা হয় ভূতচতুর্দশীর দিন তিনি মা সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে ছিলেন সেই আনন্দকে স্মরণীয় করার জন্য অযোধ্যাবাসী ১৪টি প্রদীপ জ্বালিয়েছিল প্রতি গৃহে সেই কারণে শারদীয়া কালী পূজাকে দীপান্বিতা কালী পূজাও বলা হয়
মূলতঃ এই নিয়ম পালন পৌরাণিক কাহিনীতে রামচন্দ্রের ১৪ বছর বনবাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হলেও এই দিনটি পালনের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও ঘোর অন্ধকারময় অমাবস্যার আগেরদিন এই চতুর্দশী তিথিতে অন্ধকারকে দূর করতেই প্রদীপ জ্বালানোর প্রাচীন রেওয়াজ
 আর ১৪ শাক খাওয়ার রীতিও বহু প্রাচীন
ধন্বন্তরী জন্মেছিলেন ত্রয়োদশী তিথির শেষ লগ্নে চতুর্দশীর শুরুতে তাই ধন্বন্তরীর মতো আয়ুর্বেদাচার্য কে মর্যাদা দিয়ে চতুর্দশী তিথিতে বিশেষ চোদ্দটি পুষ্টি গুণযুক্ত শাক খেয়ে আপনার শরীরে এই শীতের শুরুতে প্রাকৃতিক ভ্যাক্সিন প্রবেশ করানো
এই ব্যাপারে বিষদ জানতে হলে আমার পরবর্তী ব্লগটা পড়ুন...... ‘চৌদ্দশাক কি কেন’?


কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...