Saturday 14 August 2021

তিলভান্ডেশ্বর শিব

 তিলভান্ডেশ্বর শিব

সঙ্কলকঃ- শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী


আজ আপনাদের কে শোনাবো তিলভান্ডেশ্বর শিবের বর্ণনা । আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন, যারা জানেন না তাদের জন্যে আমার এই সামান্য প্রয়াস। মহাদেবের চরণে শতকোটি প্রণাম জানিয়ে শুরু করছি। 

  আমরা সকলেই জানি বারাণসীর প্রতিটি স্থানে মিশে আছে শিবের অস্তিত্ব, কারণ সে যে শিবের আপন নগর। এখানে ভৈরবের মন্দির, কাশী বিশ্বনাথের মন্দির ছাড়াও আরেকটি বিখ্যাত মন্দির আছে যা আমরা তিলভান্ডেশ্বর মন্দির হিসেবে জানি। কথিত এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ আপনা আপনি প্রকট হয়েছিলেন।  কিংবদন্তী অনুসারে প্রত্যেক মকর সংক্রান্তিতে এই শিবলিঙ্গ এক তিল করে আকারে বৃদ্ধি হয়। সত্যযুগ থেকে আজ পর্যন্ত এই শিবলিঙ্গ প্রত্যেক বছর ধরে এক তিল করে বৃদ্ধি হয়ে আসছেন। শিবপুরাণেও এই শিবলিঙ্গের বর্ণনা আছে।  বারাণসীর এই মন্দিরটি আনুমানিক ২৫০০ বছর আগে (১৮শ শতাব্দীতে) তৈরী করা হয়।  বারাণসীতে  ভেলুপুর বাঙ্গালী টোলাতে এই মন্দিরটি অবস্থিত। 

            

অলৌকিক বিষয় হল এই শিবলিঙ্গ প্রতি বছর এক তিল করে বৃদ্ধি পাচ্ছেন। সেই জন্যে উনার নাম হয় তিলভান্ডেশ্বর। আবার অন্যমতে যেখানে এই মন্দিরটি আছে  সেই জায়গায় একসময় তিলচাষ করা হতো, তিলচাষের জমি ছিলো। একদিন তিলচাষীরা সেই জমিতে এই শিবলিঙ্গকে মাটি থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেন এবং সেই থেকে প্রতি বছর এই শিবলিঙ্গ এক তিল পরিমান বৃদ্ধিলাভ করতে থাকেন। সেই অঞ্চলের মানূষেরা এই শিবলিঙ্গের মাথায় তিল অর্পন করে পূজা করতো সেই থেকেও এই শিবের নাম হয় তিলভান্ডেশ্বর। সেই শিবলিঙ্গ প্রতিবছর বৃদ্ধি হয়ে আজ এক বিশাল শিবলিঙ্গে পরিণত হয়েছেন।বর্তমানে এই শিবলিঙ্গের উচ্চতা প্রায় সাড়ে তিন ফিট আর ব্যাস প্রায় তিন ফিট। এখানে শিব সাক্ষাৎ বিরাজমান। 

 এই শিবলিঙ্গ সম্বন্ধে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। মোঘল আমলে এই মন্দিরের উপর অনেক বার আক্রমণ করা হয়েছিল কিন্তু প্রতিবারেই তা ধ্বংস করতে বিফল হয়, অলৌকিক কারনে প্রতিবারই মোঘল সেনারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। ব্রিটিশ শাসন কালেও এই মন্দিরের উপর ব্রিটিশেরা চড়াও হয়েছিল। কথিত আছে একবার এই শিবলিঙ্গকে ব্রিটিশেরা পরীক্ষার জন্যে দড়ি দিয়ে বেধে রেখে ছিলেন কিন্তু আশ্চর্য ভাবে পরদিন্ যখন মন্দির খোলা হয় তখন দড়ি গুলো ছেঁড়া অবস্থায় পাওয়া যায়।               

         এই মন্দিরে শিবলিঙ্গের উপর ফুল, বেলপাতা জল ছাড়াও তিল অর্পন করা হয়। তিল অর্পন করা হয় বলে এই মন্দিরে পূজা দিলে  শনির প্রকোপ থেকেও মুক্তি লাভ হয় বলে বিশ্বাস। এই শিবলিঙ্গের আরাধনার ফলে জীবনের তিলমাত্র পাপ অবশিষ্ট থাকে না।

হর হর মহাদেব

  • ছবি সৌজন্যেঃ গুগোল 
  • Picture curtsy: Google image


Thursday 12 August 2021

নাগপঞ্চমী

 প্রসঙ্গঃ নাগপঞ্চমী

আগামীকাল শ্রীশ্রীনাগপঞ্চমী, আসুন জেনে নেই এই সম্বন্ধে কিছু তথ্য
শ্রাবণ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে পালিত হয় নাগ পঞ্চমী। এই উৎসব নাগ দেবতাকে উৎসর্গীকৃত। এদিন নাগ দেবতার পুজো করা হয় ও উপোস রাখা হয়। ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী নাগ পঞ্চমীর দিনে নাগ দেবতার আরাধনা করলে একাধিক শুভ ফল লাভ করা যায়। বিশেষতঃ যাদের জন্মছকে কালসর্প যোগ আছে তাঁরা এই দিনে অষ্টনাগের পূজা দুধ কলা দ্বারা করলে বিশেষ লাভবান হতে পারেন, জীবনের দুঃখ কষ্ট দূর হয়। অনন্ত, বাসুকি, তক্ষক, কর্কোটক, পদ্ম, মহপদ্ম, শঙ্খপাল ও কুলিক নামক আটটি নাগকে এই পুজোর দেবতা মনে করা হয়। পুরাণ মতে ও পাওয়া যায় , নাগ লোক বা পাতাল থেকে সমস্ত সর্পকুল এইদিন মর্তের মানুষদের আশীর্বাদ করে থাকেন। জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি, অভাব অনটন ঘোচাতে সাপেদের এই আশীর্বাদ অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ বলে অনেকের ধারণা। এইদিনে নাগদেবতার মূর্তির সামনে রাখা হয় দুধ, চন্দন, হলুদ ও সিঁদুর। মূর্তির সামনে জ্বালানো হয় কর্পূরের প্রদীপ। তবে ধূনা জ্বালানো উচিত নয়। পাঠ করা হয় নাগপঞ্চমী ব্রতকথা নাগ পঞ্চমীর দিন পুজোর সময় শিবের পঞ্চামৃত পান করা কার্যকরী ফল দেয় বলে অনেকের মত। এতে বহু বাধা বাপত্তি , রোগ দুর্ভোগ কেটে যায়।
গরুড় পুরাণ’ মতে, ব্রহ্মার পুত্র মহামুনি কাশ্যপের তৃতীয় স্ত্রী কদ্রু ছিলেন নাগ বংশের কন্যা। তিনিই নাগকুলের মাতা। কাশ্যপের আরেক স্ত্রী বিনতা জন্ম দেন গরুড়ের। বিনতাকে সহ্য করতে পারতেন না কদ্রু । ছোট থেকেই গরুড় মায়ের কষ্ট দেখে প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি সর্পকুল ধ্বংস করবেন। কিন্তু পরে তা থেকে বিরত হন। কিন্তু সর্পকুলের সঙ্গে গরুড়ের শত্রুতা থেকেই যায়। তবে এই পুণ্য জন্মের কারণে নাগকুলও পুজো পেতে থাকে।
মহাভারত থেকে জানা যায়, কুরু বংশীয় রাজা পরিক্ষিৎ তক্ষক নাগের আঘাতে মারা গেলে তাঁর পুত্র জন্মেজয় পৃথিবী সর্পশূন্য করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। তিনি এক সর্পযজ্ঞ শুরু করেন, যেখানে মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে কোটি কোটি সাপ যজ্ঞানলে পড়ে মারা যেতে থাকে। এই সময়ে জরৎকারু মুনির পুত্র আস্তিক এই নিষ্ঠুর যজ্ঞ বন্ধ করতে জন্মেজয়ের কাছে পৌঁছান এবং তাঁরই হস্তক্ষেপে জন্মেজয় এই ভয়ঙ্কর কর্ম থেকে নিরস্ত হন। লৌকিক বিশ্বাস মতে, জরৎকারুর স্ত্রী মা মনসা। যে দিনটিতে সর্পযজ্ঞ বন্ধ হয়, সেই দিনটি ছিল শ্রাবণের শুক্লপঞ্চমী। সেই থেকেই এই পূজার প্রচলন।
সঙ্কলক
শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী

কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...