Friday 16 December 2022

বিশালাক্ষী দেবী

 

প্রসঙ্গঃ-বিশালাক্ষী দেবী
বিশালাক্ষী দেবী মহামায়া সতীর অপর এক রূপ। গ্রাম বাংলায়ও বিশালাক্ষী দেবীর বহুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক অঞ্চলে এই বিশালাক্ষী দেবীর মন্দির রয়েছে।বিশালাক্ষী দেবীর প্রধান মন্দির ভারতের বারাণসী শহরের বিশ্বনাথ মন্দিরের পশ্চাদে মীরঘাটে অবস্থিত। পুরাণ মতে, ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম হল এই বারাণসীর বিশালাক্ষী দেবীর মন্দির।
বাংলার কৃষিজীবী, জলজীবী ও বনজীবী লোকসমাজ তথা সুন্দরবন এলাকাকে বিশালাক্ষী দেবীর অনেক মহিমা রয়েছে। বিশেষত, কৃষক, জেলে, মৌয়ালি-বাওয়ালি পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এই দেবীর আরাধনা করেন। কথায় বলে, সুন্দরবনের জঙ্গলমহল যতদূর ছড়িয়ে রয়েছে, এই বিশালাক্ষী দেবীর পুজোর ক্ষেত্রে ততদূর ছড়িয়ে রয়েছে।
কথিত আছে যে, দেবাদিদেব শিব যখন দেবী সতীর দেহ কাঁধে করে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করছিলেন, তখন মহাদেবকে শান্ত করতে বিষ্ণু সুদর্শন চক্রে সতীর দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। লোকমুখে প্রচলিত আছে, সেই সময় নাকি দেবীর ছিন্ন ভিন্ন দেহের থেকে দেবীর কর্ণ ও কুণ্ডল এই অঞ্চলে পতিত হয়েছিল। তাই বিশালাক্ষী দেবী এখানে মণিকর্ণি নামে পরিচিত।অনেকে আবার মনে করেন এই কর্ণকুণ্ডল শুধুমাত্র অলংকার, এটি দেহের অংশ একেবারেই নয়। তাই এই মন্দিরকে উপপীঠ বলা যেতেও পারে।আবার অনেকের মতে, এই স্থানে দেবীর তিনটি নয়ন বা চোখের একটি পতিত হয়েছিল। মহামায়া দিব্যচক্ষু দিয়ে সমগ্র বিশ্ব দেখতে পান। তাই এখানে এই দেবী বিশালাক্ষী দেবী নামে পরিচিত।
বিশালাক্ষী মায়ের ধ্যান-
ধ্যায়েদ্দেবীং বিশালাক্ষীং তপ্তজাম্বুনদপ্রভাম্।
দ্বিভুজামম্বিকাং চণ্ডীং খড়গখেটকধারিণীম্।।
নানালংকারসুভগাং রক্তাম্বরধরাং শুভাম্।
সদা ষোড়শবর্ষীয়াং প্রসন্নাস্যাং ত্রিলোচনাম্ ।।
মুণ্ডমালাবলীরম্যাং পীনোন্নতপয়োধরাম্ ।
শবোপরি মহাদেবীং জটামুকুটমণ্ডিতাম্।।
শত্রুক্ষয়করাং দেবীং সাধকভীষ্টদায়িকাম্ ।
সর্বসৌভাগ্যজননীং মহাসম্পদপ্রদাং স্মরেৎ ।।
----তন্ত্রসার
অনুবাদ - মায়ের গাত্র বর্ণ তপ্তকাঞ্চনের মতো, দ্বিভুজায় তিনি খড়গ ও ঢাল ধারণ করে আছেন, মায়ের গাত্রদেশে নানা অলঙ্কার শোভা পাচ্ছে, পরিধানে রক্তবস্ত্র , তিনি সদা সর্বদাই ১৬ বছরের যুবতী থাকেন, তার অনন প্রসন্নতা যুক্ত, তার তিনটি চোখ, তার স্তনযুগল স্থূল ও উন্নত, তার গলায় মুণ্ডমালা সুশোভীত,তিনি শবরূপ শিবের উপর আসিনা, তার মস্তকে জটা ও কিরীট শোভা পাচ্ছে, ইনি সর্বদা সাধকের শত্রুনাশিনী তথা অভীষ্ট বর প্রদান কারিনী, তিনি সব প্রকারের সৌভাগ্যের অধিশ্বরী ও মহাসম্পদ প্রদান কারিনী।

Saturday 19 November 2022

দশদিক ও দশদিকপাল

 

 


আমরা সকলেই জানি যে আমাদের চারপাশে দিক চারটি। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর দক্ষিণ, কিন্তু ছাড়াও আরও চারটি কোণ আছে , এগুলি হল ঈশান, অগ্নি, বায়ু, নৈঋত  কোণ। উত্তর পূর্বের মধ্যস্থান ঈশান, দক্ষিণ-পূর্বের মধ্য স্থান অগ্নি উত্তর-পশ্চিমের মধ্যস্থানকে বায়ু কোণ বলে, এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের মধ্যস্থান নৈঋত্ কোণ নামে পরিচিত। পাশাপাশি আকাশ বা উর্দ্ধ পাতাল বা অধঃ এই সব দিক মিলিয়ে হয় দশ দিক। বাস্তুশাস্ত্রে প্রতিটি দিকের নিজস্ব নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিটি দিকের পৃথক দিকপাল বা অধিপতি দেবতা অধিপতি গ্রহ আছেন। তাই প্রতিটি দিকের পৃথক পৃথক প্রভাব ও আছে। আবার এই দশ দিকের প্রত্যেকের এক এক অধিপতি আছেন। বাস্তুশাস্ত্র মতে চার দিক চার কোণের উপর মানুষের সর্বসিদ্ধি, সমৃদ্ধি কল্যাণের অনেকটাই নির্ভর করে৷  আজ আমি এই বিষয়ে আলোচনা করছি আপনাদের সাথে


উত্তর দিক: বাস্তুমতে উত্তর দিক অত্যন্ত শুভ৷ এই দিকের অধিদেবতা হলেন কুবের, সোম বা চন্দ্র৷ উত্তর দিককে তাই অর্থ পেশাগত উন্নতির দিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বুধ হলেন উত্তর দিকের অধিপতি গ্রহ। আমাদের সকলের উচিত ঘরের উত্তর দিক সব সময় খোলামেলা আলোকজ্জ্বল সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা।  

দক্ষিণ দিক: দক্ষিণ দিক খুব একটা খোলামেলা না হওয়াই ভালো। বাস্তুমতে এই দিকের অধিপতি হলেন হিন্দু দেবতা যম। আর এই দিকের প্রতিনিধি গ্রহ হল মঙ্গল। তাই ঘরের দক্ষিণ দিক বেশি খোলামেলা হলে বাড়ির সদস্যদের বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ হতে পারে  এমনকি মৃত্যুভয় থাকবে। দক্ষিণ দিকে খোলামেলা বাড়ির সদস্যরা মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমাতেও জড়িয়ে পড়তে পারেন। দক্ষিণ দিকে বন্ধ দেওয়াল থাকলে ভালো তাহলে অর্থ প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাবে।

পূর্ব দিক:  পূর্ব দিক অত্যন্ত শক্তিশালী দিক বলে গণ্য। এই গ্রহের অধিপতি হলেন দেবরাজ ইন্দ্র। ইন্দ্র বৃষ্টি, প্রতিপত্তি, উৎসব শক্তির দেবতা।পূর্ব দিকের প্রতিনিধি  গ্রহ হলেন সূর্য, যিনি নিজেই শক্তির বিশাল উৎস  সূর্যের প্রভাবে সকলের জীবনে উন্নতি হয়। তাই পূর্ব দিককে আমরা উন্নতির দিক হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। বাড়ির পূর্ব  দিকও খোলামেলা, আলোকজ্জ্বল পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। এই দিকে বন্ধ দেওয়াল থাকলে জীবনে উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হবে। বাড়ির পূর্ব দিকে বাথরুম থাকা বাস্তুমতে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত।

পশ্চিম দিক: এই দিক জীবনে প্রতিষ্ঠা সমৃদ্ধির দিক। এই দিকের অধিপতি হলেন বৃষ্টি, খ্যাতি ভাগ্যের দেবতা বিষ্ণু। এই দিকের প্রতিনিধি গ্রহ হলেন শনি। বাড়ির পশ্চিম দিক খুব একটা খোলামেলা রাখা বাঞ্ছনীয় নয়। পশ্চিম দিকে বাড়ির মূল দরজা না হওয়াই ভালো। এতে অর্থলাভের সম্ভাবনা নষ্ট হয়।

ঈশান (উত্তরপূর্ব) - বাস্তুমতে খুবই ভালো দিক। এই দিকের অধিপতি হলেন হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ দেবতা শিব। এর প্রতিনিধি গ্রহ হলেন বৃহস্পতি যিনি ধনসম্পত্তি, প্রতিপত্তি সুস্বাস্থ্য দান করেন। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উত্তরপূর্ব অত্যন্ত শুভ দিক। এই দিক থেকে শক্তিশালী চৌম্বকীয় শক্তি নির্গত হয়। বাড়ির উত্তরপূর্ব দিকে শৌচাগার নির্মাণ  করলে তা গোটা পরিবারকে শেষ করে দিতে পারে। এই দিকে দাহ্যশীল (যা আগুন জ্বালাতে সাহায্য করে) পদার্থ রাখা উচিত নয়।  

অগ্নি (দক্ষিণপূর্ব) - দক্ষিণপূর্ব দিকের অধিপতি হলেন অগ্নিদেব। এর প্রতিনিধি গ্রহ শুক্র। সূর্য যখন দক্ষিণপূর্ব দিকে আসে্ন, তখন তাঁর মেজাজ অত্যন্ত উগ্র থাকেন। সবথেকে উগ্র অবস্থায় এই সময়ই থাকে্ন সূর্য। এই উগ্র রূপকে আগুনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আগুন সংক্রান্ত কাজকর্ম এই দিকে করলে ভালো হয়। এই দিকে জিনিসপত্র রাখা নির্মাণ করার সময় সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। এইদিকে রান্নাঘর থাকা ভালো, আর জলের আধার বা জলের ট্যাঙ্ক,পুকুর বা জলাশয়  এদিকে থাকা সেই পরিবারের  অনর্থের কারণ হতে পারে।

নৈঋত (দক্ষিণপশ্চিম) - এই দিকের অধিপতি হল  নৈরিতি নামের এক রাক্ষস। এর প্রতিনিধি গ্রহ রাহু। উত্তরপূর্ব দিক থেকে নির্গত চৌম্বকীয় শক্তি এই দিকে সঞ্চিত হওয়ায় এটাই বাড়ির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক। এই দিকের সঠিক ব্যবহার খুবই শক্তিশালী স্বাস্থ্যকর জীবন দিতে পারে। এই দিক সম্পদ, স্বাস্থ্য আত্মবিশ্বাসের দিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাস্তু মেনে ব্যবহৃত হলে দক্ষিণ পশ্চিম দিক খ্যাতি এনে দেবে। কিন্তু ভুল ব্যবহার নানা সমস্যা ডেকে আনতে পারে। অর্থ বেরিয়ে যাবে, হতাশা, উদ্বেগ এমনকি আত্মহত্যাপ্রবণতাও   দেখা দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে দক্ষিণ পশ্চিম দিকের ভুল ব্যবহার কর্মীদের কাজে অমনোযোগের কারণ ও হয়।

 বায়ু (উত্তরপশ্চিম) - এই দিকের অধিপতি হল বায়ু। এর প্রতিনিধি গ্রহ হল চন্দ্র। বাতাস এর মূল উপাদান হওয়ায় এই দিকটি খুবই অস্থির দিক। এই দিকের সঠিক ব্যবহারে জীবনে নানা সুযোগ আসে। পেশাগত জীবনে উন্নতি হতে পারে। তবে বাস্তুমতে এর ভুল ব্যবহার বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এর ফলে অসুখবিসুখও হতে পারে।

আকাশ বা ঊর্ধ্বঃ-আকাশকে ঊর্ধ্ব দিক বলা হয়। ব্রহ্মা দিকের অধিপতি। বাস্তু শাস্ত্রে এই দিকের অধিক মাহাত্ম্য স্বীকার করা হয়। বেদ মতে, কিছু চাইতে হলে ব্রহ্মার কাছ থেকে চাও। তাঁর কাছ থেকে চাইলে সমস্ত কিছু লাভ করা যায়। তাই মনে করা হয় ঊর্ধ্ব দিকে মুখ করে প্রার্থনা করলে তা পূর্ণ হয়। বাস্তু অনুযায়ী বাড়ির আশপাশে বৃক্ষ, বাড়ি, মন্দিরের ছায়া পড়লে বাড়িতে বসবাসকারী ব্যক্তির ওপর প্রভাব পড়ে।

পাতাল বা অধঃ পাতালের দিককে অধো দেশ বলা হয়। এই দিকের অধিপতি শেষনাগ। শেষনাগকে অনন্ত বলা হয়। তাই যে কোনও নির্মাণের আগে ভূমি পুজো করা হয়। বেসমেন্ট, কুয়ো, গোপন পথ ইত্যাদির প্রতিনিধিত্ব করেন শেষনাগ। ছাড়া বাস্তু শাস্ত্র অনুযায়ী বাড়ির নীচের বস্তুর প্রভাব বাড়ি তাতে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ওপর পড়ে। তাই গৃহ নির্মাণের পূর্বে সব ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত। জমির ভিতরের মাটি হলুদ হলে এটি ভাগ্য বৃদ্ধি করে।

 

 

 

কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...