Wednesday 13 September 2023

কৌশিকী অমাবস্যা

 

ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র

পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের কোষ থেকে দেবী কৌশিকীর আবির্ভাব হয়েছিল। তাই এই অমাবস্যাকে কৌশিকী অমাবস্যা বলা হয়ে থাকে। মা কৌশিকী (কখনও কখনও অম্বিকা, মহাসরস্বতী বা চণ্ডিকা নামেও পরিচিত)।এই কৌশিকী রূপেই শুম্ভ নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন দেবী আদ্যাশক্তি। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে যে পুরাকালে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই অসুর ভাই তাদের কঠিন সাধনা দ্বারা ব্রহ্মাকে তুষ্ট করে প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে এমন বর প্রার্থনা করেন যে তাঁদের মৃত্যু যেন কোনও পুরুষ দ্বারা হয় না, এমন নারীর দ্বারা তাঁদের মৃত্যু হয় যে কিনা মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি অর্থাৎ কোন অ-যোনি সম্ভূত নারীই তাঁদের বধ করতে পারবেন। পুরাণে বর্ণিত আছে যে দক্ষ যজ্ঞের সময় মহাদেবের অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী দক্ষ যজ্ঞ স্থলে দেহত্যাগ করেছিলেন,

এবং কালিকা রূপে জন্ম গ্রহন করেন সেই জন্মে তাঁর গায়ের রং ছিল কালো মেঘের মতো। তাই শিব তাঁকে কালিকা বলে ডাকতেন। একবার শিব যখন সকলের সামনেই তাঁকে কালিকাকে ডেকে ওঠেন, তখন দেবী অপমানিত বোধ করেন। এরপর মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা শুরু করেন। সেই তপস্যার শেষে দেবীর গায়ের রঙ হল পূর্ণিমার চাঁদের মতো। আর ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়, তিনিই হলেন দেবী কৌশিকী। সেই দেবী কৌশিকীই আজকের এই অমাবস্যা তিথিতে শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা। আর এদিনেই মা তারার তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সাধক বামাক্ষ্যাপা। তাই আজ তাঁরপীঠে বিশেষ পুজা হয়ে থাকে।
আজ আরেক ব্যাপারে বিশেষ দিন, এখন নারায়ণ যোগনিদ্রায় শায়িত, আর নারায়ণের শয়নকালে কুশ তোলা যায় না কিন্তু একমাত্র আজকের এই তিথিতেই পুজার জন্য কুশ তোলা যায়। দুর্গা পুজা আসন্ন তাই পুজার জন্যে প্রচুর কুশ চাই আর আজই সেই সুযোগ তাই আজকের দিনকে কুশোৎপাটিনী তিথিও বলা হয়।
সবাই ভালো থাকবেন, মা জগদম্বা সকলের মঙ্গল করুন।

Monday 7 August 2023

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence

 



AI হলো Artificial Intelligence এর সংক্ষিপ্ত রূপ যাকে সহজ বাংলায়  বলাযেতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  এটি  হলো এমন এক প্রকার বিজ্ঞান  যা যন্ত্রের  সাহায্যে  মানুষের মতই  চিন্তার ক্ষমতা সৃষ্টি করে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্রগুলি   স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিখে চলে এবং বিভিন্ন  তথ্য  স্বং প্রক্রিয়া  করে তার যথাযথ  সিদ্ধান্ত নিয়ে  যেকোন সমস্যার   দ্রুতগতিতে  সমাধান করে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদাহরণ হিসাবে রোবোট, কনভার্টার, স্পিচ রিকগনিশন, চ্যাটবট, স্বাধীন গাড়ি, ভূ-নির্দেশনা, মেডিকেল ডায়াগনোস্টিক, অনুবাদ সিস্টেম, গেম ডিজাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবিষ্কারকের হিসাবে বিশ্বের  বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠানের নাম নেওয়া যেতে পারে  মধ্যকালের বৈজ্ঞানিক ও গণিতবিদরা যেমন- আল-খোরেজি, আল-খায়্যাম, লিয়োনার্ডো ফিবোনাচ্চি, গোট্টফ্রেড লেবে, আলেক্সান্ডার বেল, চার্লস বেবিজ, আর্থার স্যামুয়েল, জন ম্যাকার্থি, আর্থার লি, জন হপফিল্ড, আন্ড্রিউ নিগেল, জিফরি হিন্টন, জেরি ফাউন্ডাজন, জেফিরি হিন্টন, সেবাস্টিযান থান্নিসমির, যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রথম আবিষ্কার হলো১৯৫৬  সালে, যখন জন ম্যাকার্থি, আর্থার স্যামুয়েল, জন হপফিল্ড, আর্থার লি, জেফিরি হিন্টন, সেবাস্টিযান থান্নিসমির ইত্যাদি বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রথম শৃঙ্খলা আয়োজন করেন।এই বিষয়ে  উন্নতমানের গবেষণা ও তার তারা  প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে করেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্রগুলি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তথ্য প্রসেস করতে পারে, যা মানুষের কাজের সাথে তুলনা করে দ্রুত হতে পারে। এইসকল যন্ত্র গুলির ভুলের সম্ভাবনা খুবই কম  কারণ এর  প্রোগ্রামিং গুলি এমন নির্ভুল ভাবে তৈরি করা হয়  যা বিভিন্ন সম্ভাবনার মাধ্যমে সঠিক নির্ণয়ে আসতে পারে ।  এর মাধ্যমে কর্মপ্রাণালীর উন্নয়ন এমন নিখুত ও সঠিক হয় , যা কাজের দক্ষতা দ্রুততা বাড়িয়ে দেয়  এবং এতে মানুষের বিশেষ  পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়না।

কিন্তু এর উপকারের বিপরীতে অনেক অপকার ও পরিলক্ষিত হয়

 কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্রগুলির  কিছুটা  সীমাবদ্ধতা এবং সন্দেহজনক অবস্থায়  কাজ করে থাকে  যা কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার উৎস হতে পারে আর  এর ব্যাবহারের মাধ্যমে নিরাপত্তা বিষয়ক  সমস্যা উত্পন্ন হতে পারে, যেমন কম্পিউটার হ্যাকিং বা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের যথেচ্ছ  ব্যবহার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিয়ন্ত্রণহীনব্যাবহারের ফলে  বিভিন্ন  নৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করতে  পারে, যেমন নির্দিষ্ট কাজের জন্যে মানুষের পরিশ্রমের প্রয়োজন কমে যেতে পারে এবং তাই ঘটছে আজকাল বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই একবিংশ শতাব্দীর আশ্চর্য যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা  আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, তাতে কারো  কোনো সন্দেহ নেই! আমরা  বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারই  প্রয়োগ করছি  যাতে আমাদের  সময় বহুলাংশে  তো বাঁচছেই এবং এরই  সাথে নানাতকম  কাজও অনেক সহজ ভাবে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে এমনই এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  ChatGPT যেভাবে আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে  জড়িয়ে গেছে, তাতে  হয়তো আগামী কিছুদিনের মধ্যেই মানুষকে দূরে সরিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  পাকাপাকিভাবে তার জায়গা  করে নেবে। আসলে চ্যাটবট হিসেবে আগে থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার হলেও, গত নভেম্বরে  ChatGPT নামক একটি বিশেষ বা স্বতন্ত্র উপকরণ চালু হয় যার কার্যক্ষমতা আমাদের কারো অজানা নয়  এর  কার্যক্ষমতায় আজ  গোটা বিশ্ব মুগ্ধ। এইটি  যেভাবে বিভিন্ন কঠিন কাজ  উদাহরণ স্বরূপভাবে  ক্রিয়েটিভ রাইটিং, কঠিন কঠিন  প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, অঙ্ক করা ইত্যাদির  দক্ষতা দেখাচ্ছে এতে অনেকেই নানা পেশার  চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন আর  এই আশঙ্কাই এখন  ধীরে ধীরে বাস্তবে পরিণত হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই  বেশ কিছু মানুষ চাকরি হারিয়ে দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন, সম্প্রতি কলকাতায়  এক ২২ বছর বয়সী তরুণীর  চাকরি কেড়ে তার জীবন সম্পূর্ণ উলটপালট করে  দিয়েছে এই  ChatGPT

……শ্রীদেবাশীষ চক্রবর্ত্তী

 


Saturday 5 August 2023

শ্রাবণ মাস মানেই কি দুধ অপচয়ের সময়!!! না...জানুন সত্যটা

 

 

হে জনদরদী, পরিবেশ দরদী মানবসকল খানিক সময় নিয়ে আমার এই প্রতিবেদন পড়ে দেখুন কিছু সত্যতা হয়তো এর মধ্যেও আছে, দেবাশীষ চক্রবর্ত্তীর এই লেখা পড়ে আপনাদের ধারণা যদি কিঞ্চিৎ বদলায় তবে আমার এই পরিশ্রম সার্থক। আমি কোন জ্ঞানীপন্ডিত নই আমি নিতান্ত সামান্য এক মানুষ, আর আমি  আমার ধারণা ও উপলব্ধির সহায়তায় লিখেছি এই বিষয় বস্তু……

প্রতিবারই শ্রাবণ মাস আসলে সকলের দুধের অপচয়ের কথা, অনাথ,দরিদ্র ও রোগীদের কথা মনেহয় আবার এই মাস ফুরোলে সেই বিষয় আবার একবছরের জন্যে স্তিমিত থাকে। ঠিক তেমনই কালীপুজা ও দেওয়ালীতে আমাদের পরিবেশ দুষণের জন্যে হৃদয় ব্যাকুলিত হয়ে উঠে……দোল্পুর্ণিমা বা হোলিতে রঙ খেলার সময় ‘জলের আরেক নাম জীবন জল বাঁচান , পরিবেশ বাঁচান’ এই কথা খুব মনে পরে বাদ বাকী সময় তা কিন্তু খুব একটা মনে পরে না।

এবারে আসি শ্রাবণ মাসে দুধের অপচয় বিষয় নিয়ে, বাকী গুলো না হয় সময়ে বলবো এই আবেগ গুলো তো seasonal, season শেষ আবেগ ও শেষ। শ্রাবণ মাসে কিছু জিনিস খাওয়ার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে আমাদের আয়ুর্বেদে, আয়ুর্বেদ অনুসারে,  এই চতুর্মাসে শাক-পাতার সাথে সাথে দুধ বা দুধ জাতীয়  যেমন দই, রায়তা ইত্যাদি খাওয়া নিষিদ্ধ করা আছে । শ্রাবণ মাসে এসব খাবার থেকে অনেক প্রকার  রোগের প্রকোপে পরতে হবে। শ্রাবণ মাসে দুধ বা দই দিয়ে তৈরি কিছু খাওয়া উচিত নয়। এতে করে অনেক ধরনের রোগের সম্মুখীন হতে পারেন। এর পাশাপাশি কাঁচা দুধ খাওয়াও এড়িয়ে চলতে হবে। ধর্মীয় বিশ্বাসে বলা হয়েছে যে শ্রাবণ মাসে ভগবান শিবকে কাঁচা দুধ নিবেদন করা হয়, তাই এই মাসে কাঁচা দুধ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত জিনিস খাওয়া নিষিদ্ধ। দই তৈরিতে দুধ ব্যবহার করা হয়, তাই শ্রাবণ মাসে দই বা দুধ এবং দই সম্পর্কিত জিনিস খাওয়া নিষিদ্ধ। শ্রাবণ মাসে অধিক বৃষ্টি হয়, এর ফলে সকল আনাচেকানাচে  ঘাস জন্মাতে শুরু করে এবং এর সাথে  অনেক ধরনের বিষাক্ত  পোকামাকড় এই সকল ঘাস-লতা-পাতাতে আশ্রয় নেয়। সেই সকল বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ ঘাসের সাথে  গরু-মহিষএর শরীরে প্রবেশ করে, যা তাদের দুধের মধ্যে প্রভাব ফেলে। তাই সেই সকল  দুধ স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও উপকারী নয় বরঞ্চ অপকারী। অনেকে আবার আয়ুর্বেদ বিশ্বাস করেন না, তাদেরকে জানাই অনেক ডাক্তারেরাও  এই ঋতুতে দুধ এবং দই সম্পর্কিত বস্তু  খাওয়া নিষিদ্ধ বা যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করার পরামর্শ করেন। এই সময়ে দই খেলে পরিপাকতন্ত্রের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে কারণ দইয়ে অ্যাসিড থাকায় নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। আয়ুর্বেদ অনুসারে, শ্রাবণ মাসে হজম প্রক্রিয়া ধীরগতির হয়, এমন পরিস্থিতিতে দই এবং দই জাত যে কোন পদার্থ আমাদের  হজমে অসুবিধা সৃষ্টি  করতে পারে। এই ব্যাপারে ৩১/০৭/২০২৩ তে প্রকাশিত মেডিকভার হস্পিটালের একটি প্রতিবেদন  পড়ে দেখতে পারেন, লিঙ্ক টা দিলাম

https://www.medicoverhospitals.in/articles/foods-to-avoid-in-rainy-season#:~:text=Dairy%20products%2C%20especially%20unpasteurized%20milk,dairy%20products%20from%20reliable%20brands.

এইবার আসি ধর্মীয় বিশ্বাস কি বলে……

সেই জন্যেই হয়তো প্রাচীন কালে এই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় বা শিবলিঙ্গের উপর দুধ ঢালার প্রচলন করা হয়। এবারে প্রশ্ন করতে পারেন কেন শিবকে সেই বিষাক্ত দুধ ঢালা হবে? আশাকরি সমুদ্র মন্থনের সেই পৌরাণিক কাহিনী সকলেই জানেন, সেই সময় অমৃত নির্গত হওয়ার পুর্বে নির্গত হয়েছিল সেই প্রাণনাশি গরল বা বিষ, এর প্রভাবে যখন প্রকৃতি নাশের সম্মুখীন তখন দেবতাদের অনুরোধে দেবাদিদেব মহাদেব সেই গরলকে আকন্ঠ পান করে বিশ্বকে রক্ষা করেন আর সেই থেকে তাঁর নাম হয় নীলকন্ঠ। এবারে শ্রাবণ মাসে এই বিশ্বাসে শিবের মাথায় দুধ ঢালা হয় যাতে শিব দুধের সেই সব বিষাক্ত প্রভাব দুর করে প্রকৃতিকে রক্ষা একমাত্র শিবই করতে পারেন।

তবে এ খবরে হয়তো অনেকের মনে কিছু আশ্বাস পেতে পারেন, শিবের মাথায় ঢেলে দেওয়া সেই সব  দুধ বা দুধ জাতীয় পদার্থ একটি বাসনে সংগ্রহ করা হয় এবং ভক্তদের প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় কিন্তু যেসব  মন্দিরে প্রচুর পরিমাণে দুধ ঢালা হয় দেই সকল  অনেক জায়গায়  আজকাল ক্ষীর বা অন্যান্য মিষ্ট দ্রব্য তৈরি করে প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়  যেন  প্রসাদের অপচয় না হয়।

আরেকটি কারণ আছে শিবের মাথায় দুধ দই ঘি মধু ইত্যাদি ঢালার, শুধু শিব নয় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যেসকল মন্দির আছে তার অধিকাংশতেই পাথরের প্রতিমা বিদ্যমান, এবারে খোঁজ নিয়ে দেখুন সেই সকল প্রতিমা অভিষেক-শৃঙ্গারের সময় এই সকল পদার্থ ছাড়াও আরো অনেক কিছু দিয়ে স্নান করানো হয়। এর পিছনে কিন্তু আছে এক বৈজ্ঞানিক যুক্তি। বৈজ্ঞানিকদের মতে এই সকল প্রক্রিয়ার কারণেই সেই সকল প্রতিমা ও শিবলিঙ্গ হাজার হাজার বছর পরও আজ বিদ্যমান আছে। আবহবিকার বা weathering of rocks সম্বন্ধে আপনারা সকলেই জানেন, এই দুধ,দই,ঘি মধু  আবহবিকার থেকে প্রতিমা ও শিবলিঙ্গ গুলিকে আজ অবদি রক্ষা করে আসছে, এ দেবাশীষ চক্রবর্ত্তীর মত নয় বৈজ্ঞানিকদের ধারণা। খোঁজ নিয়ে দেখুন সেই একই সময়ের তৈরি করা যে সকল মুর্ত্তি অলংকরণের জন্যে নির্মাণ করা হয়ে ছিল বিভিন্ন মন্দিরের গায়ে বা অন্যান্য রাজপ্রাসাদে, আজ সেই গুলি ভঙ্গুর বা ধ্বংশপ্রাপ্ত অবস্থায় আছে।

 আমাদের স্বভাব আমরা আমাদের সনাতন শাস্ত্রের  সকল কিছু ভালোভাবে না জেনেই হই-হুল্লোড় শুরু করে দেই ,অথচ নিজেরা একটু চিন্তা করলেই এর সমাধানে আসা যায়। বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্ম ব্যবস্থায় প্রাচীন ঋষি মুনিরা এমন কিছু করে যান নি যা অবাস্তব। সেই সব ব্যাক্তিগন আমাদের চাইতে কিছু অংশে কম জ্ঞানী যে ছিলেন না তার বিস্তর প্রমাণ আছে এমনকি পাশ্চাত্য ও সে বিষয়ে একমত। আয়ুর্বেদের অধিকাংশ বিষয় আজকাল বিদেশী চিকিৎসকেরা অনুসরণ করছেন, দুর্ভাগ্যের কথা সেই সব প্রাচীন বিদ্যা আমাদের কাছে অবহেলিত তাই তো আমাদের এই অবস্থা। যে যা বলে তার বিচার না করে আমরাও সেই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে চলি। 

যে বিষয় আমাকে সবচাইতে ব্যাথিত করে সে হল যে কেন  সনাতন ধর্মকেই বারংবার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় তার আচার অনুষ্ঠানের যথার্ততা প্রমাণ করতে? বিশ্বের এই প্রাচীনতম ব্যবস্থায় প্রত্যেকটি করনীয় অনুষ্ঠানের পিছনে প্রশ্ন করলে তার যথাযত উত্তর পাওয়া যাবে। আর যেসকল বিষয়ে তার সঠিক উত্তর নাই সে কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু নয়, আর সেই সকল কুসংস্কার বিশ্বের  সকল প্রান্তে সকল ধর্মে আছে মিলিয়ে নিবেন।

সর্বে ভবন্তু সুখিন, সর্বে সন্তু নিরাময়া, সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু, মা কশ্চিদ দুঃখ মাপ্নুয়াত।।

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ  শান্তিঃ হরি ওম তৎ সৎ শ্রী রামকৃষ্ণায়  অর্পণমস্তু

 

 

 

 

 

 

নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দির, উজ্জয়িনীর পুণ্যকথা ।।

                                                                                              --শ্রীদেবাশীষ চক্রবর্ত্তী ...



আপনারা জানেন কি? উজ্জয়িনীর নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দিরের দরজা বৎসরে কেবল মাত্র ২৪ ঘন্টার জন্যে খোলা হয়!!!

त्वत्तो जगद्भवति देव भव स्मरारे, त्वय्येव तिष्ठति जगन्मृड विश्वनाथ।

त्वय्येव गच्छति लयं जगदेतदीश, लिंगात्मकं हर चराचरविश्वरूपिन्।


আপনারা জানেন কি? উজ্জয়িনীর নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দিরের দরজা বৎসরে কেবল মাত্র ২৪ ঘন্টার জন্যে খোলা হয়!!! হ্যা সত্য! উজ্জয়িনীতে বিখ্যাত মহাকাল মন্দিরের তৃতীয় তলায় স্থিত নাগচন্দ্রেশ্বরের মন্দির শ্রাবণের শুক্লা পঞ্চমী যা নাগ পঞ্চমী বলে সেদিন কেবল মাত্র খোলা হয়। কথিত যে এই মন্দিরে স্বয়ং সর্পরাজ তক্ষক বাস করেন। জানা যায় আনুমানিক ১০৫০ইংরেজীতে রাজা ভোজ এই মন্দির তৈরী করেন এবং এই মন্দিরের প্রতিমা সুদূর নেপাল থেকে আনা হয় বলে শুনা যায় এরপর ১৭৩২ সালে মহারাজ রাণোজী সিন্ধিয়া এই মন্দিরের পুণঃ সংস্করণ করেন। সাধারণতঃ নাগশয্যায় লক্ষ্মী নারায়ণ কে বিরাজিত দেখা যায় কিন্তু এখানে শিবও পার্বতীকে নাগ শয্যায় বিরাজিত ভাবে দেখা যায়। উজ্জয়িনী ছাড়া বিশ্বে অন্য কোথাও এমন প্রতিমা দেখা যায় না। এখানে শিব, পার্বতীর প্রতিমা ছাড়াও গণেশ ও দশ মুখ বিশিষ্ট নাগের প্রতিমাও দেখা যায়। এখানে শিবের গলায় ও হাতে সাপ পেঁচানো দেখা যায়।


পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সর্পরাজ তক্ষক শিবকে তুষ্ট করার জন্যে কঠোর তপস্যা শুরু করেন, তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ঠ হয়ে দেবাদিদেব মহাদেব তক্ষকরাজকে অমরত্ব বরদান করেন। শিবের বর পেয়ে তক্ষক রাজ এই বনেই শিবের সান্নিধ্যে বাস করতে থাকেন কিন্তু তাঁর আশঙ্খা ছিল যে এখানে থাকলে তাঁর একান্ত সাধনায় না বিঘ্ন ঘটে তাই এই মন্দির শুধু একদিনই খোলা হয়, আর সেইদিন লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দির দর্শনের জন্যে। কথিত এই মন্দির একবার দর্শন করলে সেই ভক্তের সর্পভয় দূর হয় আর সর্পাঘাতে মৃত্যু ও হয় না।
জয় জয় মহাদেব

চিত্র সৌজন্যে গুগল চিত্র

Friday 23 June 2023

কামাখ্যা মন্দিরের ইতিহাস

 

           




  নবম শতাব্দীতে উল্লেখিত বাণমলবর্মদেবের তেজপুর লিপিতে প্রথম কামাখ্যা মন্দিরের শিলালিপি-উল্লেখ পাওয়া যায়। এই শিলালিপি থেকে জানা যায় যে  খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম  শতাব্দীতে এখানে একটি বিশাল মন্দির ছিল।
কথিত  সুলেমান কিরানির সেনাপতি কালাপাহাড় এই মন্দিরটি তখন  ধ্বংস করেছিলেন। আবার  ঐতিহাসিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, আনুমানিক ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে  আলাউদ্দিন হুসেন শাহ কামতা রাজ্য  


আক্রমণের সময়
এই মন্দির ধ্বংস করেন। কথিত আছে, কোচ  তথা কামতাপুর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বসিংহ এই ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন এবং  তিনিই এই মন্দিরে পূজা পুনরায় আরম্ভ করেন। তবে তাঁর পুত্র নরনারায়ণের  রাজত্বকালে আনুমানিক ১৫৬৫ খ্রিষ্টাব্দে নরনারায়ণ ও তাঁর ভাই চিলারায় এই মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করেন। জানা যায় এই মন্দির    পুনর্নির্মাণের সময় পুরনো মন্দিরের উপাদান গুলি আবার ব্যবহৃত করা হয়েছিল। এরপর অহোম রাজারা এই মন্দিরটি আরও বড়ো করে তোলেন।

কোচবিহারের মহারাজা এবং তার ভ্রাতা চিলারায়  ছিলেন মা কামাখ্যার বিশেষ ভক্ত। কথিত আছে, সন্ধ্যা আরতির সময় বাজনা শুরু হলে কামাখ্যা দেবী স্বয়ং আবির্ভূত হতেন এবং বাজনার তালে তালে নৃত্য করতেন। কৌতুহল বশতঃ মহারাজ নরনারায়ণ একদিন পূজারী ব্রাহ্মণ কেন্দুকলাই এর সাহায্যে নৃত্যরতা দেবীকে গোপনে দর্শন করেন। এর ফলে মা কামাখ্যা দেবী  ক্রোধান্বিত হয়ে রাজাকে অভিশাপ দেন যে, রাজ পরিবারের কেউ এর পর থেকে কামাখ্যা মন্দির দর্শন  করতে পারবেন না এবং কোচ-রাজবংশের যিনি কামাখ্যা মন্দির দর্শন  করবেন তিনি বা তাঁর পরিবার তৎক্ষণাৎ  মৃত্যুমুখে পতিত হবেন।

রাজা নরনারায়ণ দেবীর নৃত্য  দর্শনের সময়েই পূজারী ব্রাহ্মণ কেন্দুকলাই এর মৃত্যু হয়।আজ ও সেই পুজারী ব্রাহ্মণ কেন্দু কলাইয়ের প্রস্তুরীকৃত দেহ মন্দির চত্বরে আছে। অভিশাপগ্রস্থ মহারাজা নরনারায়ণ, তাঁর অপরাধেই  তাঁর বংশধরগণ মূর্তি দর্শন পূজা দিতে পারবেন  না এই ভেবে  অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে মায়ের কাছে আকুল প্রার্থনা করেন তাঁর আকুল প্রার্থনায়  মা সদয় হয়ে বলেন তিনি বাণেশ্বর শিব মন্দিরের নিকট সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দেবী বিগ্রহে আর তারপাশে কামরাঙ্গা বৃক্ষে দেবীরূপে সর্বদা অবস্থান করবেন। তাঁর বংশধরেরা সেখানে পূজা দিলে দর্শন করলে মা কামাখ্যার পুজা দর্শন এর ফল লাভ হবে। মহারাজা নরনারায়ণের পরবর্তী সময়ে কোনো মহারাজা বা তাঁর বংশধরেরা আজও  কামাখ্যা মন্দির দর্শন  করেননি

কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...