Saturday 17 July 2021

বদ্রীনাথ মন্দির

বদ্রীনাথ মন্দির

সঙ্কলকঃ-শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী

বিখ্যাত বদ্রীনাথ মন্দিরটি উত্তর ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চামোলি জেলায় গাড়ওয়াল পার্বত্য অঞ্চলে অলকানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত।  প্রাচীন বৈদিক ধর্মগ্রন্থগুলিতে এই মন্দিরের প্রধান দেবতা বদ্রীনাথের উল্লেখ আছে, যা থেকে বোঝা যায়। যে বৈদিক যুগে এই মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল।গর্ভগৃহে  বদ্রীনারায়ণের  যে মূর্ত্তি টি আছে তা প্রায় ৩.৩ফুট উচ্চতার, কষ্টি পাথরের বিগ্রহ। একটি বদ্রী গাছের তলায় সোনার চাঁদোয়ার নীচে রাখা।বদ্রীনারায়ণের মূর্তির উপরের দুই হাতে শঙ্খ ও চক্র আর নীচের দুই হাত যোগ মুদ্রায় । শোনা যায় ৯ম শতাব্দীতে আদি শঙ্করাচার্য প্রথম বদ্রীনাথকে একটি তীর্থস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ৮১৪ থেকে ৮২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছর তিনি এই অঞ্চলে ছিলেন। কথিত আছে বদ্রীনাথের মুর্তিটিকে অসুরের হাত থেকে রক্ষার জন্যে মন্দিরের পুরোহিতরা অলকানন্দার জলের তলায় লুকিয়ে রেখেছিলেন কিন্তু পরে সেই জায়গাটী ভুলে যাওয়ায় মুর্তি উদ্ধার সম্ভব হয় নি, যোগাবলে শঙ্করাচার্য এই  বদ্রীনাথের মূর্তিটির সন্ধান পান এবং  তিনিই অলকানন্দা নদী থেকে উদ্ধার করে তপ্তকুণ্ড উষ্ণ প্রস্রবণের কাছে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। পুরাণ অনুসারে, এক ঋষি লক্ষ্মীকে বিষ্ণুর পাদসেবা করতে দেখেন, এবং  তাই দেখে তিনি বিষ্ণুকে তিরস্কার করেছিলেন। সেই জন্য বিষ্ণু বদ্রীনাথে এসে দীর্ঘ সময় পদ্মাসনে বসে তপস্যায় রত ছিলেন। তখন হিমালয়ের একটি অঞ্চলে মাংসভুক সন্ন্যাসী ও অসাধু লোকজনেরা বাস করত, কিন্তু এই স্থানটি তার থেকে দূরে ছিল বলে বিষ্ণু ধ্যানের জন্য এই স্থানটিকেই ঠিক করেন। ধ্যানের সময় বিষ্ণু এখানকার দারুণ শীত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তার স্ত্রী লক্ষ্মী একটি বদ্রী গাছের আকারে তাকে রক্ষা করেন। লক্ষ্মীর ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু এই অঞ্চলের নাম দেন বদরিকাশ্রম। আবার  বিষ্ণুপুরাণে বদ্রীনাথের উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি গল্প আছে। সেখানে আছে , ধর্মের দুই পুত্র ছিল – নর ও নারায়ণ, এঁরা হিমালয়ে পর্বতরূপ ধারণ করেছিলেন। তারা ধর্মপ্রচারে জন্য এই স্থানকে নির্বাচিত করেন এবং হিমালয়ের বিভিন্ন  বৃহৎ উপত্যকাগুলিকে বিবাহ করেছিলেন। আশ্রম স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গার অনুসন্ধানে এসে তারা পঞ্চবদ্রীর অন্যান্য চার বদ্রীর সন্ধান পান।  এগুলি হল বৃধাবদ্রী, যোগবদ্রী, ধ্যানবদ্রী ও ভবিষবদ্রী। অবশেষে তারা অলকানন্দা নদী পেরিয়ে উষ্ণ ও শীতল প্রস্রবনের সন্ধান পান এবং এই স্থানটির নামকরণ করেন বদ্রীবিশাল। ভাগবত পুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও মহাভারত-এর মতো প্রাচীন গ্রন্থেও কিন্তু বদ্রীনাথ মন্দিরের উল্লেখ আছে, ভাগবত পুরাণ অনুসারে, বদরিকাশ্রমে ভগবান বিষ্ণু নর ও নারায়ণ ঋষি রূপে অবতার গ্রহণ করেছিলেন এবং সকল জীবের কল্যাণের জন্য তাঁরা এখানে স্মরণাতীত কাল থেকে এখানে  তপস্যা করেন। স্কন্দপুরাণ-র বলা হয়েছে, স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল লোকে অনেক পবিত্র তীর্থ আছে। কিন্তু বদ্রীনাথের মতো পবিত্র তীর্থ কোথাও নেই। পদ্মপুরাণ-এ বদ্রীনাথের আশেপাশের এলাকাটিকে আধ্যাত্মিক সম্পদে পরিপূর্ণ বলে উল্লেখ আছে।  মহাভারতে পাওয়া যায় যে  অন্যান্য তীর্থে মোক্ষ অর্জন করতে হলে ধর্মানুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। কিন্তু বদ্রীনাথের কাছে এলেই ভক্তের মোক্ষ লাভ হয়ে যায়।



জানেন কি? বদ্রীনাথে শঙ্খ বাজানো নিষিদ্ধ!!!! কেন?

পুরাকালে হিমালয়ের পাদদেশে ঋষি-মুনিদের উপর অসুরদের অত্যাচার খুব বৃদ্ধি পায়। প্রায়ই অসুরেরা ঋষি মুনিদের আক্রমন করে তাঁদের আশ্রম লন্ডভন্ড করে বির্বিচারে হত্যা করতে লাগলো। শত শত ঋষি মুনিদের বন্দি করে দাস বানিয়ে রাখতো। তখন সকল ঋষি মুনিরা অগস্ত্য মুনির শরণাপন্ন হয়েছিলেন। অগস্ত্য মুনি তখন অসুরদের নিধনের জন্যে দেবী দুর্গা কে আহ্বান করেন। অগস্ত্যমুনির প্রার্থনায় দেবী কুষ্মান্ডা রূপে আবির্ভাব হয়ে অসুর নিধন শুরু করেন, একে একে সকল অসুর দেবীর হাতে পরাজিত ও নিহত হয় কিন্তু আতাপি ও বাতাপি নামক দুই অসুর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আতাপি অলকানন্দা নদীতে গিয়ে আত্মগোপন করে আর বাতাপি বদ্রীনাথ ধামে গিয়ে শঙ্খের ভিতরে লুকিয়ে পরে সেই থেকে বদ্রীনাথ ধামে শঙ্খ বাজানো নিষিদ্ধ হয় এবং সেই প্রথা আজও চলে আসছে। এই এক মাত্র মন্দির যেখানে শঙ্খ বাজানো যায় না।

সমাপ্ত

চিত্র সৌজন্যেঃ- গুগোল চিত্র


Wednesday 14 July 2021

জয় মা বিপদতারিণী বা বিপদনাশিনী!!

 আসুন জেনে নেই কে এই দেবী?


যিনি সমগ্র বিপদ থেকে রক্ষা করেন বা যিনি বিপদ সমূহ নাশ করেন তিনিই বিপদতারিনী। যিনি দুর্গা তিনিই বিপদতারিনী, তিনিই আবার পুরাণে কৌশিকীদেবী নামে খ্যাতা, আবার তিনিই জয়দুর্গা। করি।তিনি দেবী সঙ্কটনাশিনী এবং দেবী দুর্গার ১০৮ রূপের এক অন্যতম, ভক্তেরা মূলত বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য এই দেবীর পূজা করেন। বিশ্বাস অনুযায়ী, বিপত্তারিণী ব্রত পালন করলে সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় এবং সমস্ত বিপদ, বাধা বিঘ্ন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আমরা বিপদতারিণী বা বিপদনাশিনী দেবীর যে ধ্যান মন্ত্র পাঠ করি তা হল ‘ওঁ কালাভ্রাভাং কটাক্ষৈররিকুলভয়দাং মৌলীবন্ধেন্দুরেখাম্ । শঙ্খং চক্রং কৃপাণং ত্রিশিখমপি করৈরুদ্বহন্তীং ত্রিনেত্রাম্ । সিংহাস্কন্ধাধিরুঢ়াং ত্রিভুবন – মখিলং তেজসা পুরয়ন্তীম্ । ধ্যায়েদ্ দুর্গাং জয়াখ্যাং ত্রিদশপরিবৃতাং সেবিতাং সিদ্ধিকামৈঃ ।
এখানে, কালাভ্র আভাং এর অর্থ কিন্তু দুই প্রকার হয়, একটি স্বর্ণ বর্ণা অপরটি কালো মেঘের ন্যায়), কটাক্ষে শত্রুকূলত্রাসিণী, কপালে চন্দ্রকলা শোভিতা, চারি হস্তে শঙ্খ, চক্র, খড়্গ ও ত্রিশূল ধারিণী, ত্রিনয়না, সিংহোপরি সংস্থিতা, সমগ্র ত্রিভুবন স্বীয় তেজে পূর্ণকারিণী, দেবগণ-পরিবৃতা।সিদ্ধসঙ্ঘ সেবিতা জয় দুর্গার ধ্যান করি।
এই জয়দুর্গা বা কৌশিকীদেবী ( এই কৌশিকীদেবীর উৎপত্তি হয়েছিলো পরমেশ্বর ভগবান শিবের অর্ধাঙ্গিনী দেবী পার্বতীর কৃষ্ণ কোশ থেকে- তাই তিনি কৌশিকী), বিপদতারিণীদুর্গা যিনি পঞ্চদেবতার একজন। ভারতবর্ষে বিভিন্ন স্থানে এই দেবীর অনেক রূপ দেখা যায়, উত্তর ভারতে অষ্টাদশ রূপের ধ্যান ও পূজা হয়, আবার কোথাও তাঁকে দশভুজা রূপে পূজা হয়, কোথাও আবার চতুর্ভুজা স্বর্ণ বর্ণা আবার কোথাও কৃষ্ণ বর্ণা রূপে পূজিতা হয় । আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষ দ্বিতীয়ার পরের মঙ্গল ও শনিবারে মায়ের পূজো হয় । যেখানে তেরো প্রকার ফল, পুস্প, মিষ্টি, পান সুপারী দিয়ে মাকে পূজা করা হয়। তবে, বাংলাদেশে দেবীর পূজার নিয়ম বিধি সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে গ্রামাঞ্চলে বিপত্তারিণী পূজা চলে চারদিন ধরে। প্রথম দিনে দেবীর “আরাধনা” (পূজা) করা হয়। মেয়েরা দণ্ডী কাটেন, তারপর দুই রাত্রি ধরে রাতে বাংলা লোকগান, ভজন ও কীর্তন চলে। চতুর্থ দিনে হয় বিসর্জন। বিপত্তারিণী পূজা উপলক্ষে মেয়েরা উপবাস করেন। প্রথা অনুসারে হাতে “তাগা” (এক গুচ্ছ পবিত্র লাল সুতো ও দূর্বাঘাস) বাধা হয়। কিন্তু কেন এই দেবীকে তেরো প্রকারের দ্রব্য দিয়ে পূজা করা হয়? তার কারণ কোন ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ নেই, এ হয়তো বা লোকাচার।
কিছু কিছু অঞ্চলে আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীতে, সন্তান কামনার জন্য পালন করা হয় ষষ্ঠীব্রত সেই ষষ্ঠীর নাম ‘কোঁড়া ষষ্ঠী’ বা ‘কার্দমী ষষ্ঠী’ বা ‘কর্দ্দমষষ্ঠী’। এই ষষ্ঠীব্রতের দিনে মায়েরা দেবী ষষ্ঠীকে তেরোটি ফুল, তেরোটি ফল, তেরোটি পান, তেরোটি সুপারি, তেরোটি দুর্বা দিয়ে পূজা করেন। সম্ভবতঃ সেখান থেকে এই তেরো ফল-ফুল-পান –সুপারী ইত্যাদি এই পূজায় অন্তর্গত হয়েছে যেহেতু এই দুই পূজার সময়কাল প্রায় এক। আবার অনেকে মনে করেন এই ষষ্ঠীদেবী আর মা বিপদ-তারিণী একই দেবী। তবে সে যাই হোক ভক্তের ভক্তিভাব স্ফুরণের জন্যে, শ্রদ্ধার জন্যে দেবীকে যে ভাবেই পূজা করা হোক না কেন, তিনি আমাদের আরাধ্যা হউন। ভক্তের ত্রাস দূর করে জগতকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বিপদন্মুক্ত করুন এই প্রার্থনা রাখি।
নীচের চিত্রগুলি দেবীর বিভিন্ন রূপের প্রকাশ, ভক্ত মানসে তিনি যেভাবে স্থান নিয়েছেন। উপরের ছবি আমাদের ঘরের দেবী কিন্তু নীচের ছবি গুলি গুগোল চিত্র থেকে সংগৃহীত
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সোনারপুর অঞ্চলের রাজপুরে বাবা দুলাল নামে এক ভক্তসাধক মায়ের বিপত্তারিণী রূপের সাধনা করেন ও তিনি মাকে সিংহবাহিনী চতুর্ভুজা কালী রূপে দর্শন করেন। সেই বাবা দুলালের সাধনা এখন সর্বজনবিদিত। রাজপুরের এই মা বিপত্তারিণী চন্ডীর মহিমা এখন প্রায় সকলেই জানেন।
এর মধ্যে আপনারা দেবীর কোনরূপে আরাধনা করেন?? বা আর অন্য কোন রূপ আছে কি? জানতে দেবেন।
সঙ্কলক
শ্রীদেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
সাধারনতঃ পঞ্জিকায় আমরা যে ছবি পাই

রাজপুরের বিপদতারিণী চন্ডী বাড়িতে মা



কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...