আসুন জেনে নেই কে এই দেবী?
যিনি সমগ্র বিপদ থেকে রক্ষা করেন বা যিনি বিপদ সমূহ নাশ করেন তিনিই বিপদতারিনী। যিনি দুর্গা তিনিই বিপদতারিনী, তিনিই আবার পুরাণে কৌশিকীদেবী নামে খ্যাতা, আবার তিনিই জয়দুর্গা। তিনি দেবী সঙ্কটনাশিনী এবং দেবী দুর্গার ১০৮ রূপের এক অন্যতম।, ভক্তেরা মূলত বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য এই দেবীর পূজা করেন। বিশ্বাস অনুযায়ী, বিপত্তারিণী ব্রত পালন করলে সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় এবং সমস্ত বিপদ, বাধা বিঘ্ন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আমরা বিপদতারিণী বা বিপদনাশিনী দেবীর যে ধ্যান মন্ত্র পাঠ করি তা হল ‘ওঁ কালাভ্রাভাং কটাক্ষৈররিকুলভয়দাং মৌলীবন্ধেন্দুরেখাম্ । শঙ্খং চক্রং কৃপাণং ত্রিশিখমপি করৈরুদ্বহন্তীং ত্রিনেত্রাম্ । সিংহাস্কন্ধাধিরুঢ়াং ত্রিভুবন – মখিলং তেজসা পুরয়ন্তীম্ । ধ্যায়েদ্ দুর্গাং জয়াখ্যাং ত্রিদশপরিবৃতাং সেবিতাং সিদ্ধিকামৈঃ ।
এখানে, কালাভ্র আভাং এর অর্থ কিন্তু দুই প্রকার হয়, একটি স্বর্ণ বর্ণা অপরটি কালো মেঘের ন্যায়), কটাক্ষে শত্রুকূলত্রাসিণী, কপালে চন্দ্রকলা শোভিতা, চারি হস্তে শঙ্খ, চক্র, খড়্গ ও ত্রিশূল ধারিণী, ত্রিনয়না, সিংহোপরি সংস্থিতা, সমগ্র ত্রিভুবন স্বীয় তেজে পূর্ণকারিণী, দেবগণ-পরিবৃতা।সিদ্ধসঙ্ঘ সেবিতা জয় দুর্গার ধ্যান করি।
এই জয়দুর্গা বা কৌশিকীদেবী ( এই কৌশিকীদেবীর উৎপত্তি হয়েছিলো পরমেশ্বর ভগবান শিবের অর্ধাঙ্গিনী দেবী পার্বতীর কৃষ্ণ কোশ থেকে- তাই তিনি কৌশিকী), বিপদতারিণীদুর্গা যিনি পঞ্চদেবতার একজন। ভারতবর্ষে বিভিন্ন স্থানে এই দেবীর অনেক রূপ দেখা যায়, উত্তর ভারতে অষ্টাদশ রূপের ধ্যান ও পূজা হয়, আবার কোথাও তাঁকে দশভুজা রূপে পূজা হয়, কোথাও আবার চতুর্ভুজা স্বর্ণ বর্ণা আবার কোথাও কৃষ্ণ বর্ণা রূপে পূজিতা হয় । আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষ দ্বিতীয়ার পরের মঙ্গল ও শনিবারে মায়ের পূজো হয় । যেখানে তেরো প্রকার ফল, পুস্প, মিষ্টি, পান সুপারী দিয়ে মাকে পূজা করা হয়। তবে, বাংলাদেশে দেবীর পূজার নিয়ম বিধি সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে গ্রামাঞ্চলে বিপত্তারিণী পূজা চলে চারদিন ধরে। প্রথম দিনে দেবীর “আরাধনা” (পূজা) করা হয়। মেয়েরা দণ্ডী কাটেন, তারপর দুই রাত্রি ধরে রাতে বাংলা লোকগান, ভজন ও কীর্তন চলে। চতুর্থ দিনে হয় বিসর্জন। বিপত্তারিণী পূজা উপলক্ষে মেয়েরা উপবাস করেন। প্রথা অনুসারে হাতে “তাগা” (এক গুচ্ছ পবিত্র লাল সুতো ও দূর্বাঘাস) বাধা হয়। কিন্তু কেন এই দেবীকে তেরো প্রকারের দ্রব্য দিয়ে পূজা করা হয়? তার কারণ কোন ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ নেই, এ হয়তো বা লোকাচার।
কিছু কিছু অঞ্চলে আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীতে, সন্তান কামনার জন্য পালন করা হয় ষষ্ঠীব্রত সেই ষষ্ঠীর নাম ‘কোঁড়া ষষ্ঠী’ বা ‘কার্দমী ষষ্ঠী’ বা ‘কর্দ্দমষষ্ঠী’। এই ষষ্ঠীব্রতের দিনে মায়েরা দেবী ষষ্ঠীকে তেরোটি ফুল, তেরোটি ফল, তেরোটি পান, তেরোটি সুপারি, তেরোটি দুর্বা দিয়ে পূজা করেন। সম্ভবতঃ সেখান থেকে এই তেরো ফল-ফুল-পান –সুপারী ইত্যাদি এই পূজায় অন্তর্গত হয়েছে যেহেতু এই দুই পূজার সময়কাল প্রায় এক। আবার অনেকে মনে করেন এই ষষ্ঠীদেবী আর মা বিপদ-তারিণী একই দেবী। তবে সে যাই হোক ভক্তের ভক্তিভাব স্ফুরণের জন্যে, শ্রদ্ধার জন্যে দেবীকে যে ভাবেই পূজা করা হোক না কেন, তিনি আমাদের আরাধ্যা হউন। ভক্তের ত্রাস দূর করে জগতকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বিপদন্মুক্ত করুন এই প্রার্থনা রাখি।
নীচের চিত্রগুলি দেবীর বিভিন্ন রূপের প্রকাশ, ভক্ত মানসে তিনি যেভাবে স্থান নিয়েছেন। উপরের ছবি আমাদের ঘরের দেবী কিন্তু নীচের ছবি গুলি গুগোল চিত্র থেকে সংগৃহীত
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সোনারপুর অঞ্চলের রাজপুরে বাবা দুলাল নামে এক ভক্তসাধক মায়ের বিপত্তারিণী রূপের সাধনা করেন ও তিনি মাকে সিংহবাহিনী চতুর্ভুজা কালী রূপে দর্শন করেন। সেই বাবা দুলালের সাধনা এখন সর্বজনবিদিত। রাজপুরের এই মা বিপত্তারিণী চন্ডীর মহিমা এখন প্রায় সকলেই জানেন।
এর মধ্যে আপনারা দেবীর কোনরূপে আরাধনা করেন?? বা আর অন্য কোন রূপ আছে কি? জানতে দেবেন।
সঙ্কলক
শ্রীদেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
No comments:
Post a Comment