Sunday 23 October 2016

চৌদ্দ শাক কি এবং কেন?

চৌদ্দ শাক কি এবং কেন?

শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
(সঙ্কলিত)

আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে চৌদ্দ পুরুষের আত্মাকে তুষ্ট করার জন্যে চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে এবং এও বিশ্বাস যে তার ফলে অশুভ শক্তিকে দূরে  রাখা যায় এই দিনটাকে  সাধারণত ভূতচতুর্দশী বলা হয়তবে এর সাথে চৌদ্দ শাকের সম্পর্ক কি তার সঠিক কারণ জানা নাই। অনেকের মতে ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বিভিন্ন রোগের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে এই শাকগুলি খাওয়া হনব্য-স্মৃতিশাস্ত্রকার রঘুনন্দনের মতে এই চৌদ্দ শাক হল
১) ওল ২)কেউ ৩)বেতো ৪) কালকাসুন্দে ৫) নিম পাতা ৬) জয়ন্তী ৭) সরিষা 8) শাঞ্চে ৯) হিলঞ্চ ১০) পলতা ১১) শুলফা ১২) গুলঞ্চ ১৩) ঘেঁটু ১৪) শুষনি
(বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকায় উল্লেখ্য)
এবার দেখা যাক এই চৌদ্দ শাকের কি কি ঔষধি গুণ আছে
১) ওল  যা হল  অর্শ, রক্ত আমাশা, বাত, চর্মরোগ, গ্যাস-অম্বল নাশক
২) কেও  যা হল  কৃমিনাশক, হজমকারক, ক্ষুধাবর্ধক
৩) বেতো  যা হল কৃমিনাশক, কোষ্ঠবদ্ধতা ও অম্বল প্রতিরোধক৪) কালকাসুন্দা  যা  অ্যান্টি-অ্যালার্জিক, কোষ্ঠবদ্ধতা, অর্শ, ফিসচুলা, হুপিং কাশি, দাদ ইত্যাদির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়
৫) নিম যা  কুষ্ঠ, যে কোন চর্মরোগ, জণ্ডিস, বহুমূত্র, একজিমার ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়
৬) সরিষা যা মানব দেহের চামড়া, যকৃত এবং চোখের পক্ষে এই শাক অত্যন্ত উপকারি
৭)শালিঞ্চা বা শাঞ্চে  সাধারণত ক্ষুধাবর্ধক হিসাবে পরিচিত; এদের ব্যবহারে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়
৮) জয়ন্তী  যা  উদরাময়, বহুমূত্র, শ্বেতী , জ্বর এবং কৃমি নাশকের কাজ করে;
সদ্য প্রসূতিদের জন্য এই শাক উপকারী
৯) গুলঞ্চ  এই শাক সেবনে বাত, রক্তচাপ, একজিমা ও জন্ডিস নির্মূল হয়। তাছাড়া গুলঞ্চ শাক পরিপাকেও সাহায্য করে
১০) পটুক পত্র বা পলতা  এই শাক যে কোন শ্বাসের রোগে কার্যকরী। এরা রক্তবর্ধক এবং লিভার ও চামড়ার রোগ সরাতে এদের প্রভূতভাবে ব্যবহার করা হয়।
১১) ভন্টাকি (ঘেঁটু) বা ভাঁট  ফ্ল্যাভোনয়েড থাকার জন্য এটি ক্যানসার দমনে সহায়ক। এছাড়াও কৃমি, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার ও উদরাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে এই শাক সাহায্য করে।
১২) হিলমোচিকা বা হিঞ্চে  এই শাক ভক্ষণে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। শুধুমাত্র পিত্তনাশক হিসাবেই নয়, রক্তশোধক হিসাবে, ক্ষুধাবর্ধক এবং জ্বর নির্মূলকারী হিসাবে এর ব্যবহার অপরিসীম
১৩) সুনিষন্নক বা শুষুনী বা শুষনি  শুষনি শাক স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এরা নিদ্রাকারক, মেধা এবং স্মৃতিবর্ধক। হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক অস্থিরতা কমানোর জন্য এই শাক ব্যবহৃত হয়।
১৪) শেলু বা শুলকা এদের ব্যবহারে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে এবং ছোটদের পেটের রোগ সারাতে এই শাক অত্যন্ত উপকারি।
              অন্য মতে চৌদ্দ শাক হল  পালং শাক, লাল শাক, সুষণি শাক, পাট শাক, ধনে শাক, পুঁই শাক, কুমড়ো শাক, গিমে শাক, মূলো শাক, কলমি শাক, সরষে শাক, নোটে শাক, মেথি শাক, লাউ শাক অথবা হিঞ্চে শাক
                  তবে আজকাল বাজারে চৌদ্দ শাকের আঁটি কিনতে পাওয়া যায়। তাতে সচরাচর এসব খুব কমই পাওয়া যায়, তবে নামে চৌদ্দ প্রকারের পাতা পাওয়া যায় এবং  তাই দিয়ে নিয়ম রক্ষার শাক খাওয়া হয়। আবার অনেকে ভাবেন তা নেহাতই বুজরুকি, তাই অনেক ঘরে তার প্রচলন উঠে গেছে। আমার মনে হয় আমাদের পূর্বপুরুষ রা কিছু একটা জেনে এইসবের প্রচলন করেছিলেন কিন্তু যেহেতু আমরা সেই সবের আসল তথ্য জানি না তাই নিজের অজ্ঞতা ঢাকতে এই সব কে বুজরুকি বা কুসংস্কার বলে চালিয়ে দেই।


Saturday 22 October 2016

শিবলিঙ্গ-তথ্যের আধারে

শিবলিঙ্গ-তথ্যের আধারে                             
               শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী


নমস্কার,সবাই কে জানাই আমার আন্তরিক শারদ শুভেচ্ছা। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার এই অদম্য সাহসের জন্যে, আমি শাস্ত্র সম্বন্ধে নিতান্তই অজ্ঞ, বাংলা ভাষাতেও আমার জ্ঞান খুবই সীমিত তাই ভুলত্রুটি আপনারা নিজগুণে মার্জনা করবেন। আমি এবার শিবলিঙ্গ সম্বন্ধে অনেকের মধ্যে যে ভুল ধারণা আছে তা দূর করার সামান্য চেষ্টা করছি।
কিছু সংখ্যক অজ্ঞ ও ভ্রান্ত মানুষেরা পরম পবিত্র শিবলিঙ্গ কে জননাঙ্গ ভেবে যা নয় তাই প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই শিবলিঙ্গ’ বলতে পুরুষাঙ্গ বিশেষ মনে করেন-কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। একথা সহজেই অনুমান করা যায় যেনিরাকার পরমাত্মার পুরুষাঙ্গ থাকতে পারে না। তাছাড়া পুরুষাঙ্গের সংস্কৃত প্রতিশব্দ শিশ্ন। আর লিঙ্গ’ শব্দের অর্থ প্রতীক’ বা চিহ্ন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে পাশ্চাত্য গবেষকরা লিঙ্গ ও যোনি কে, নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।ব্রিটিশরা মনে করত,শিবলিঙ্গ পুরুষ যৌনাঙ্গের আদলে তৈরি ও শিবলিঙ্গের পূজা ভক্তদের মধ্যে কামুকতা বৃদ্ধি করে। আমরা সংস্কৃত ভাষা সম্বন্ধে নিতান্তই অজ্ঞ, আমাদের পুরনো তথ্য বিনষ্ট হওয়ার ফলে আজ আমরা প্রকৃত সত্য থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি।  সবচাইতে বড় কথা হল আমরা প্রত্যেক সংস্কৃত শব্দের সঠিক রুপান্তর ইংলিশ ভাষায় করতে পারছি না। যার ফলে অনেক সময় মুল বক্তব্য থেকে সঠিক তথ্য অনেক দূরে সরে যায়।লিঙ্গের মুখ্য অর্থ আলয়,  ইন্দ্রিয় বিশেষ কে  লিঙ্গ বলা হয় না।  সর্বভূত যেখানে লয়প্রাপ্ত হয় তাহাই আলয়। যেমন সমুদ্র থেকে সৃষ্ট বুদবুদ জলের উপরে এসে আবার জলেই মিশে যায় ঠিক সেইরূপ এই ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় বস্তু অনন্ত শূন্য থেকে জন্ম নিয়ে আবার তাতেই বিলয় হওয়ার জন্যে তাঁকে লিঙ্গ বলা হয়।  লীনং বা গচ্ছতি,লয়ং বা গচ্ছতি ইতি লিঙ্গম্” যা লয়প্রাপ্ত হয় তাই লিঙ্গ।আবার কারো মতে সর্ববস্তু যে আধারে লয়প্রাপ্ত হয় তাই লিঙ্গম। এই কারনেই তাকে বিভিন্ন নামে সম্বোধিত করা হয়ে থাকে যেমন প্রকাশ স্তম্ভ/লিঙ্গঅগ্নি স্তম্ভ/লিঙ্গশক্তি স্তম্ভ/লিঙ্গ ইত্যাদি কিন্তু বৈয়াকরণিকগণের মতে লিঙ্গতে চিহ্নতে মনেনেতি লিঙ্গম্”| লিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রতীক’ বা চিহ্ন’| যার দ্বারা বস্তু চিহ্নিত হয়সত্য পরিচয় ঘটে তাই-ই লিঙ্গ। অর্থাৎ যার দ্বারা সত্যবিজ্ঞান লাভ হয়যার সাহায্যে বস্তুর পরিচয় পাওয়া যায় তাকেই বস্তু পরিচয়ের চিহ্ন বা লিঙ্গ বলে। আর এজন্যই দেহ প্রকৃতিতে লীনভাবে অবস্থান করে বলেই চিদ্ জ্যোতিকে বলা হয় লিঙ্গ। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে লিঙ্গ একটি সংস্কৃত শব্দ যা শুন্য,আকাশঅনন্ত ব্রহ্মাণ্ড ও নিরাকার পুরুষের প্রতীক। উপনিষদে সুক্ষ্ম দেহের বর্ণনায় বলা হয়েছে ‘অঙ্গুষ্ঠমাত্রঃ পুরুষঃ’ শিব আমাদের হৃদয় মধ্যে অঙ্গুষ্ঠ পরিমান স্থানে আছেন, শিবপুরাণ ও অন্যান্য সকল শাস্ত্রেই শিবলিঙ্গ’ বলতে পরমব্রহ্মের প্রতীক’-ই বোঝানো হয়েছে। স্কন্দপুরাণে বলা হয়েছে  ‘আকাশং লিঙ্গমিত্যাহুঃ পৃথিবী তস্য পীঠিকা। প্রলয়ে সর্বদেবানাং লয়নাল্লিলিঙ্গমুচ্যতে।।’আকাশ স্বয়ং লিঙ্গধরণী তাঁর পীঠ বা আধার। প্রলয়কালে দেবতা সকল লয় প্রাপ্ত হলে একমাত্র লিঙ্গ রূপী শিবই বর্তমান ছিলেন। সেইকারণে লিঙ্গ শব্দে একমাত্র মহাদেবকেই বোঝায়। একটি সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ীশিবলিঙ্গ শিবের আদি-অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের রূপবিশেষ।হিন্দুরা শিবলিঙ্গকে সৃষ্টির পিছনে নারী ও পুরুষ উভয়ের যে অবদান তার কথা স্মরণ করে  শিবলিঙ্গের পূজা করেন শিবলিঙ্গে যে যোনি চিহ্ন দেখা যায়  তাকে গৌরীপট্ট বা গৌরী পীঠ বলে।এই গৌরীপট্ট বা গৌরী পীঠ হল মহাশক্তির প্রতীক। শিবলিঙ্গ ও যোনি র এই সম্মিলিত রূপটিকে "নারী ও পুরুষের অবিচ্ছেদ্য ঐক্যসত্ত্বা এবং জীবনসৃষ্টির উৎস পরোক্ষ স্থান ও প্রত্যক্ষ কালের প্রতীক" হিসেবে গণ্য করা হয়।পুরো বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড যে অক্ষের উপর ঘুরচ্ছে সেটাই লিঙ্গ... শিব লিঙ্গ। আক্ষরিক বিশ্লেষণে দেখা যায়- শিব’ শব্দের অর্থ মঙ্গল’ আর লিঙ্গ’ শব্দের অর্থ প্রতীক বা চিহ্ন। শাস্ত্র শিব’ বলতে নিরাকার সর্বব্যাপি পরমাত্মা বা পরমব্রহ্মকেই বোঝায়। তাই শিবলিঙ্গ’ হচ্ছে মঙ্গলময় পরমাত্মার প্রতীক। শিবপুরাণ অনুসারে ভগবান শিবই একমাত্র ব্রহ্মরূপ হওয়ায় তাঁকে নিরাকার বলা হয়। যেহেতু তিনি সর্বশক্তিমান’ তাই তিনি জগতকল্যাণের জন্য রূপধারণও করতে পারেন। রূপবান হওয়ায় তাঁকে সাকার বলা হয়। তাই তিনি সাকার ও নিরাকার-দুইই। শিব সাকার ও নিরাকার হওয়ায় তাঁর পূজার আধারভূত লিঙ্গও নিরাকার অর্থাৎ শিবলিঙ্গ  শিবের নিরাকার স্বরূপের প্রতীক। তেমনই শিব সাকার হওয়ায় তাঁর পূজার আধারভূত বিগ্রহ সাকাররূপ। শিব ব্যতীত অন্য যেসকল দেবতা আছেনতাঁরা সাক্ষাৎ ব্রহ্ম ননতাই কোথাও তাঁদের নিরাকার লিঙ্গ দেখা যায় না। লিঙ্গ সাক্ষাৎ ব্রহ্মের প্রতীক। স্বামী বিবেকানন্দ প্যরিসে হয়ে যাওয়া ধর্মসমূহের ঐতিহাসিক মূল শীর্ষক সম্মেলনে বিশ্ববাসীর সামনে অথর্ববেদের স্কম্ভসুক্তের সাহায্যে তুলে ধরেন যে শিবলিঙ্গ মূলত বিশ্বব্রহ্মান্ডেরই প্রতীক। আমরা স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনায় পাই যে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে শিবলিঙ্গ ধারণাটি এসেছে বৈদিক যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ ধারণা থেকে। যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ হল বলিদানের হাঁড়িকাঠ।এটিকে অনন্ত ব্রহ্মের একটি প্রতীক মনে করা হত। জার্মান প্রাচ্যতত্ত্ববিদ গুস্তাভ ওপার্ট শালগ্রাম শিলা ও শিবলিঙ্গের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে তাঁর গবেষণাপত্রে এগুলিকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে সৃষ্ট প্রতীক বলে উল্লেখ করে তা পাঠ করলেতারই প্রতিক্রিয়ায় বিবেকানন্দ এই কথা বলেছিলেন।বিবেকানন্দ বলেছিলেনশালগ্রাম শিলাকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গ বলাটা এক কাল্পনিক আবিষ্কার মাত্র। শিবলিঙ্গর সঙ্গে পুরুষাঙ্গের যোগ বৌদ্ধধর্মের পতনের পর আগত ভারতের অন্ধকার যুগে কিছু অশাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির মস্তিস্কপ্রসূত গল্প। স্বামী শিবানন্দ সরস্বতী ও বলেন, "এটি শুধু ভুলই নয়বরং অন্ধ অভিযোগও বটে যে শিবলিঙ্গ পুরুষলিঙ্গের প্রতিনিধিত্বকারী"। এমনি আরও অনেক জ্ঞানী,গুণী,সাধু-সন্ত ও মহাপুরুষেরা শিবলিঙ্গ সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা নির্মূলের স্বপক্ষে অনেক মাতবাদ প্রকাশ করেছেন, স্বল্প পরিসরে তার বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বলা যেতে পারে যে আমাদের নিজেদের অজ্ঞতাকে আড়াল করতে গিয়ে ও ভ্রান্ত ধারনার বশবর্তী হয়ে এমন কোন আচরণ বা মন্তব্য করা উচিত নয় যা সমাজে সকল শ্রেণী, সকল জাতির কাছে আমাদের এই মহান ধর্ম এক হাস্যকর বিষয় হয়ে উঠে। আমাদের সকলের কর্তব্য কোন বিষয়ে মন্তব্য করার আগে সেই বিষয় টিকে সঠিক ভাবে জেনে নেওয়া আর আমরা যতটুকু সঠিক জানি তা সকলের মধ্যে বিলিয়ে  দেওয়া যাতে অন্যরাও তাঁদের ভ্রান্ত ধারণা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে ও মিথ্যে সমালোচক দের যোগ্য জবাব দিতে পারে। সবচাইতে গুরুত্ব পূর্ণ হল বর্তমান প্রজন্মের কাছে এইসকল তথ্য তুলে ধরা যাতে তারাও কোন ভুল ধারনার শিকার হয়ে নিজ ধর্মকে অবহেলা করতে শুরু না করে, বরঞ্চ গর্বের সাথে নিজ ধর্মের মহানতা সকলের কাছে  প্রকাশ করতে পারে। বিভিন্ন সূত্রের সাহায্যে এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করা ও সকলের কাছে তা প্রকাশ করার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস তখনই সার্থক মনে হবে যখন সমাজ থেকে এই বিষয় সম্বন্ধে ভুল ধারণার অবসান ঘটবে।
জগন্মাতা দেবী দুর্গার কাছে সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল সদবুদ্ধির প্রার্থনা জানাই।
                                      জয় শিব-শম্ভু... জয় মা দুর্গা। 

সুত্রঃ শিবপুরাণ, লিঙ্গপুরাণ, স্কন্দপুরাণ, স্বামীজীর বাণী ও রচনা, তন্ত্র রশ্মি ১ম খণ্ড, "Worship of Siva Linga" by Swami Sivananda Saraswati ইত্যাদি

পিতৃ তর্পণ

পিতৃ তর্পণ
শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী

বর্তমানে বিভিন্ন পরিস্থিতির চাপে ও বিভিন্ন কারনে  আমাদের অনেককিছু আচার-অনুষ্ঠান প্রায় লুপ্ত ।পিতৃ তর্পণ ও তেমনই একটি, বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছে আজ তার অর্থ অজানা। অনেকে হয়তো বা আবেগের বশে পিতৃ তর্পণ করে থাকেন কিন্তু কি করছেন বা কিসের জন্যে করছেন তা রয়ে যাচ্ছে অজানা। দুর্গা পূজার আগে পিতৃ পক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই তর্পণ অনুষ্ঠান, আসুন জেনে নেই তার কিছু তথ্য।শাস্ত্র বিষয়ে আমি নিতান্ত অজ্ঞ বাংলা ভাশাতেও আমার জ্ঞান সীমিত, তাই ভুল ত্রুটি  নিজগুণে মার্জনা করবেন।
প্রথমেই প্রশ্ন আসে এই পিতৃ পক্ষ কি?
   ভাদ্র মাসের পূর্ণিমার পরের তিথি অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে পরের অমাবস্যা বা মহালয়ার দিন পর্যন্ত দিন গুলিকে পিতৃপক্ষ বলে জানা যায় এবং এই  পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পার্বন  শ্রাদ্ধ ও তর্পন করা হয়। কথিত আছে যে এই সময় যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে পিতৃ পুরুষেরা আসেন তাঁদের বংশধরের কাছে এবং তাদেরকে তৃপ্ত করার জন্য তিল,জল দান করা হয়। তাহাদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্যে উল্কাদান ও করা হয়।  আমরা মহাভারতে পাই যে, মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হয় শুধু সোনা আর ধনরত্ন। তার  কারণ কর্ণ ইন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বললেন যে  যেহেতু তিনি  সারাজীবন শুধু সোনাদানাই দান করেছেন এবং পিতৃপুরুষকে জল  দান করার কথা ভুলেই গেছিলেন, তাই তার এই অবস্থা। উত্তরে কর্ণ বলেন যে  তাঁর  পিতৃপুরুষের পরিচয় তিনি যুদ্ধ শুরুর  আগের রাতেই জানতে পেরেছিলেন, যখন তাঁর মা কুন্তী  এসে  তাঁর জন্ম কাহিনিও পরিচয় দেন পরে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের হাতেই তাঁর মৃত্যু হয় সেই হেতু পিতৃতর্পণ তিনি করতে পারেন  নাই ইন্দ্র বুঝলেন যে এতে কর্ণের কোন দোষ নেই। তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দেন  ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করে পিতৃপুরুষকে অন্নজল প্রদান করে নিজের পাপ দূর করেন। সেই পক্ষটি পরিচিত হল পিতৃপক্ষ নামে। এই পিতৃ তর্পণের পরিচয় মার্কণ্ডেয় পুরাণে ও পাওয়া যায় সেখানে বলা হয়েছে যে পিতৃগণ শ্রাদ্ধে তুষ্ট হলে স্বাস্থ্য, ধন, জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু এবং পরিশেষে উত্তরপুরুষকে স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করেন। পিতৃতর্পণে আমরা যাদের উদ্দেশ্যে  জল দান করে থাকি তা কিছুটা এই রকম... তর্পণের শুরুতে করা হয় দেব তর্পণ এই মন্ত্রে ‘ওঁ ব্রহ্মা তৃপ্যতাম্।। ওঁ বিষ্ণুস্তৃপ্যতাম্।ওঁ রুদ্রস্তৃপ্যতাম্।। ওঁ প্রজাপতিস্তৃপ্যতাম্। এই চার জন ছাড়া মন্ত্র ও জল দ্বারা দেব, যক্ষ, নাগ, গন্ধবর্ব, অপ্সরা, অসুর, ক্রুরস্বভাব জন্তু, সর্প, সুপর্ণ যা হল গরুড়জাতীয় পক্ষী ও  বৃক্ষ, সরীসৃপ, সাধারন পক্ষী, বিদ্যাধর কিন্নর, জলচর, খেচর, ভূত  এবং পাপে ও ধর্মকার্য্যেরত যত জীব আছে, তাহাদের তৃপ্তির জন্য তর্পণ করা হয় দেব তর্পণের পর করা হয় মনুষ্য তর্পণ মন্ত্রের অর্থ কিছুটা এই সনক, সনন্দ, সনাতন, কপিল,আসুরি, বোঢ়ু ও পঞ্চশিখ আপনারা সকলে আমার প্রদত্ত জলে সর্বদা তৃপ্তিলাভ করুন, এবং মন্ত্র ও জল দ্বারা আমরা মরীচি, অত্রি,অঙ্গিরা,পুলস্ত,পুলহ, ক্রতু,প্রচেতা, বশিষ্ঠ, ভৃগু ও নারদ প্রভৃতি ঋষি গনের তর্পণ করি।দিব্য-পিতৃ-তর্পণে আমরা সাতটি মন্ত্র দ্বারা প্রত্যেককে এক এক অঞ্জলি সতিল জল দিব্য পিতৃ গনের উদ্দেশ্যে দান করে থাকিতারপর, হে আমার পূর্ব্বপুরুযগণ  আসুন, এই অঞ্জলি পরিমিত জল গ্রহণ করুন বাক্যে আবাহন করা হয় পিতৃ পুরুষ গন কে ও ভক্তিসহকারে স্বর্গত পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহী, প্রমাতামহী, বৃদ্ধপ্রমাতামহী, গুরু, জ্যেঠা, খুড়া, বিমাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী, জ্যেঠী, খুড়ী, পিসি,মাসী, মাতুল, মাতুলানী, শ্বশুর, শাশুড়ী, ভগ্নিপতি, জ্ঞাতি, আদি যতজন যে সকল দেহত্যাগ করেছেন তাঁদের সকলের  নামে তর্পণ করা হয়।তর্পণের সবচাইতে সুন্দর যে অংশটি যা আমাকে অতিশয় অভিভূত করে সে হল আমার বংশে যে সকল জীব অগ্নিদ্বারা দগ্ধ হইয়াছেন, অর্থাৎ যাঁহাদের দাহাদি সংস্কার হইয়াছে  বা  যাঁহারা দগ্ধ হন নাই  অর্থাৎ কেহই তাঁহাদের দাহাদি-সংস্কার কার্য্য করেন নাই  তাঁদের তৃপ্তি ও স্বর্গ লাভের জন্যে ওঁ নমঃ অগ্নিদদগ্ধাশ্চ যে জীবা... এই মন্ত্র সহকারে জল দান করা ও  ওঁ নমঃ যে বান্ধবা অবান্ধবা বা...মন্ত্রে আমাদের যে সকল আমাদের বন্ধু ছিলেন এবং যে সকল আমার বন্ধু নন, যে সকল জন্ম-জন্মান্তরে আমাদিগের বন্ধু ছিলেন, এবং যারা আমাদের নিকট হইতে জলের প্রতাশা করেন, তাঁদের সম্পূর্ণরূপে তৃপ্তি লাভের জন্যে ও তর্পণ করা হয়। এরপর আমরা করি ভীষ্ম-তর্পণ, এই মন্ত্রের অর্থ কিছুটা এই যে    বৈয়াঘ্রপদ্য যাঁহার গোত্র,সাঙ্কৃতি যাঁহার প্রবর, সেই অপুত্রক ভীষ্মবর্ম্মাকে এই জল দিতেছি।শান্তনু-তনয় বীর, সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয় ভীষ্মবর্ম্মা এই জল দ্বারা পুত্র-পৌত্রচিত তর্পণাদি-ক্রিয়া-জনিত তৃপ্তি লাভ করুন। ভীষ্ম- তর্পণের পর করা হয় রাম-তর্পণ, সম্পূর্ণ তর্পণ করা সম্ভব না হলে  শুধু এই তর্পণ  করলেই হয় বলে বিশ্বাসশ্রীরামচন্দ্র বনবাস কালে এই মন্ত্রেই তর্পণ করেছিলেন বলে বর্ণিত আছে
মন্ত্রটি হল, মন্ত্রের তাৎপর্য এই যে ব্রহ্মলোক অবধি যাবতীয় লোক সমীপে অবস্থিত জীবগণ,যথা যক্ষ, নাগাদি, দেবগণ, যথা ব্রহ্মা , বিষ্ণু, শিব প্রভৃতি, ঋষিগণ যথা মরীঢি, অত্রি, অঙ্গিরাদি, পিতৃগণ,মনুষ্যগণ সনক, সনন্দ প্রভৃতি, পিতৃ-পিতামহাদি এবং মাতামহাদি সকলে তৃপ্ত হউন ।আমার কেবল এই জন্মের নয়, আমার বহুকোটিকুল, বহু জন্মান্তরে গত হইয়াছেন, সেই সকল কুলের পিতৃ-পিতামহাদি, সপ্তদ্বীপবাসী যথা জম্বু, প্লক্ষ, শাল্মলি, কুশ, ক্রৌঞ্চ, শাক, পুষ্কর, সমুদয় মানবগণের পিতৃ-পিতামহাদি এবং ত্রিভুবনের যাবতীয় পদার্থ আমার প্রদত্ত জলে তৃপ্ত হউনতারপরে করা হয় লক্ষণ-তর্পণ, এও বিশ্বাস যে রাম-তর্পণেও অশক্ত হইলে এই তর্পণ করা হয়, কারণ বনবাসকালে রাম ও সীতার সেবায় ব্যাস্ত থাকার সময় সময়াভাবে, লক্ষণ শুধু যে মন্ত্রে তর্পণ করতেন তার অর্থ হল—‘ব্রহ্মা হইতে তৃণ পর্ষ্যন্ত জগৎ,জগতের লোক, স্থাবর জঙ্গমাদি, সকলে তৃপ্ত হউনতারপর বস্ত্র নিংড়ানো জলে যাঁহাদের কেহ কোথাও নাই তাঁহাদের তর্পণ করা হয় মন্ত্রে বাংলায় যার অর্থ এই দাঁড়ায় —‘যাঁহারা আমাদের বংশে জন্মিয়া পুত্রহীন ও বংশহীন হইয়া গত হইয়াছেন, তাঁহারা আমার এই  বস্ত্র-নিংড়ানো জলে তৃপ্ত হউনএরপর ওঁ নমঃ পিতা-স্বর্গঃ পিতা-ধর্ম্মঃ...মন্ত্রে করা হয় পিতৃস্তুতি
যার অর্থ... পিতাই স্বর্গ, পিতাই ধর্ম্ম, পিতাই পরম তপস্যা অর্থাৎ পিতা সেবাই তপস্যা, পিতা প্রসন্ন হইলে সকল দেবতাই প্রীত হন ও পিতৃপ্রণাম করা হয় যে মন্ত্রে তার অর্থ এই যে যাঁহারা স্বর্গে মূর্ত্তি ধারণ করিয়া বিরাজ করিতেছেন, যাঁহারা শ্রাদ্ধান্ন ভোজন করেন, অভীষ্ট-ফলের কামনা করিলে যাঁহারা সকল বাঞ্ছিত-ফল দান করিতে সমর্থ এবং কোন ফলের কামনা না করিলে যাঁহারা মুক্তি প্রদান করেন , সেই পিতৃগণকে প্রণাম করিসূর্য্যদেবের উদ্দেশে  পূর্ব্বদিকে মুখ করে ওঁ নমো বিবস্বতে ব্রহ্মণ, ভাস্বতে... মন্ত্রে জল দেয়া হয় তারপর  অর্থাৎ  হে পরম ব্রহ্মস্বরূপ সবিত্রিদেব ! আপনি তেজস্বী, দীপ্তিমান ; বিশ্বব্যাপী তেজের আধার, জগতের কর্ত্তা, পবিত্র, কর্ম্মপ্রবর্ত্তক; আপনাকে প্রণাম করি। ওঁ নমঃ জবাকুসুম-সংঙ্কাশং, কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং... মন্ত্রে প্রণাম জানাই সূর্য্যকে যার অর্থজবাফুলের ন্যায় রক্তবর্ণ, কশ্যপের পুত্র, অতিশয় দীপ্তশালী, তমোনাশী, সর্ব্বপাপ নাশকারী দিবাকরকে প্রণাম করি।সর্বশেষে অচ্ছিদ্রাবধারণ,বৈগুণ্য-সমাধান ও জপের দ্বারা আমরা তর্পণের সমাপ্তি করে থাকি
পরিশেষে এতটুকুই বলা যায় যে তর্পণ, পূর্বপুরুষ দের সাথে পরবর্তী প্রজম্মের এক পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা যেতে পারেযার মাধ্যমে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ দের স্মরণ করতে পারি, যাদের করুণায় আমাদের এই মানবদেহ অর্জন, তাঁদের প্রতি আমরা এই সামান্য জল ও তিলের দ্বারা কৃতজ্ঞতা প্রদান করে থাকি। এই তিল-জল দানে তাঁদের কতটুকু তৃপ্তি লাভ হয় সেটা হয়তো অনেকের কাছে তর্কের বিষয়, কিন্তু আমাদের মনের কোনে হয়তো বা এই আচার কিছুটা তৃপ্তি বোধ আনে বা এনে দিতে পারেআজকালের এই লুপ্তপ্রায় আচার-অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে এই পিতৃ পক্ষে কিছু সংখ্যক মানুষের তর্পণের আগ্রহ দেখে মনে হয় যে আমাদের কাছে আমদেরই পূর্বজের অনুষ্ঠিত কিছু আচার অনুষ্ঠান এখনও সমাদৃত আছে। তবে তা কতদিন থাকবে সেটাই বিচার্য। তর্ক-যুক্তির প্রভাবে এই  অনুষ্ঠান ও কোনদিন হারিয়ে যাবে আমাদের সমাজ থেকে।
       মা ভগবতী সবার মঙ্গল করুন। সবাই সুখে থাকুন... জয় মা।


তথ্যসুত্রঃ তর্পণ বিধি- শ্রীযুক্ত শশধর ভট্টাচার্য। 

Tuesday 11 October 2016

মানস পূজা...

'পূজা' এই শব্দটির 'প' অর্থে 'মূলাধার' - 'ঊ' অর্থে 'বলপূর্বক' - আর 'জ' অর্থে 'কূটস্থে থাকা' অর্থাৎ বলপূর্বক প্রাণবায়ুকে যা কল্পনা করা হয় মূলাধারে অবস্থিত, তাকে কূটস্থে স্থিতি করানো – অর্থাৎ প্রাণকর্ম করা |
এবার আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে পূজার সময় আমরা কেন পূর্বদিকে বা উত্তরদিকে মুখ করে পূজা করি। তার সরল ব্যাখ্যা এই ভাবে করা যেতে পারেঃ- সূর্য হলো পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস, আলোর প্রতীক, অন্ধকার নিবারক। তাই যুগ যুগ ধরে আমাদের জীবনের শক্তিদায়ী ভাবনার প্রতীক হিসেবে সূর্য কেই চিহ্নিত করা হয়ে আসছে । তাই পূর্ব মুখী হয়ে বসলে আমাদের মনে সূর্যের কথা বা সেই উজ্জ্বল আলকের কথা সহজে মনে আসে ও মনের মধ্যে এক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। আবার উত্তর দিক কে কল্পনা করা হয় ব্রহ্মলোক পথ, তাই উত্তরমুখী হয়ে বসলে ব্রহ্মলোকের কথা অর্থাৎ মনকে ইশ্বরমুখী রাখতে সাহায্য করে ।
আমরা জানি যে পূজায় অনেক উপাচারের প্রয়োজন এবং সেই সব উপাচার সংগ্রহ করতে অর্থের প্রয়োজন, প্রয়োজন পরে অন্যের সাহায্যের ও। কিন্তু আমরা অনেকে জানি না, যে পূজা শুধু ব্যাহিক ভাবেই নয় মানসিক ভাবেও করা যায় বরঞ্চ ব্যাহিক পূজার একটি অঙ্গ হলো মানস পূজা। এই মানস পূজায় প্রয়োজন হয় না কোন প্রকার উপাচারের ভক্তি মাত্র সার। কিভাবে হয় এই মানস পূজা? মহানির্বাণ তন্ত্রে আদ্যাকালীর মানস পূজার বিধান কিছুটা এই প্রকার ‘দেবীর আসন হলো আমাদের হৃৎপদ্ম, সহস্রার (মাথার তালুতে যে কল্পিত অধঃ মুখী সহস্রদল পদ্ম) থেকে যে জলের ধারা তা দিয়ে দেবীর পা ধোয়ানো, নিজের মনকে দেবীর কাছে অর্ঘ্য স্বরূপ প্রদান করা, আচমন ও স্নানের জন্যেও সেই সহস্রার থেকে অমৃত স্বরূপ বারি ধারা প্রদান করা, দেবীর পরিধানের বস্ত্র হলো দেহের মধ্যে আকাশ তত্ত্ব, গন্ধ হলো দেহস্থ গন্ধতত্ত্ব। মনকে পুষ্প রূপে,প্রাণ কে ধূপ হিসেবে, মনের তেজ কে দীপ হিসেবে নিবেদন করা হয়।মনের অমৃতকে নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদন করা হয়। আরতির উপাচার ও আমাদের দেহের মধ্যেই কল্পিত যেমন হৃদয়ের স্পন্দন বাদ্য,বায়ুতত্ত্ব চামর, মাথায় যে সহস্রদল পদ্ম তা হল সহস্রার ছত্র, সঙ্গীত রূপে দেহস্থ শব্দ তত্ত্ব ও যাবতীয় ইন্দ্রিয় কর্ম ও মনের চাঞ্চল্যতাকে নৃত্য স্বরূপ দেবিকে উৎসর্গ করা হয়। অহিন্সা,ইন্দ্রিয় নিগ্রহ,দয়া, ক্ষমা এবং জ্ঞান এই পাঁচটি কে পঞ্চ পুষ্প রূপে দেবীকে উৎসর্গ করার বিধান ও আছে তাছাড়াও আছে দশটি ভাব পুষ্প যেমন অমায়া,অনহঙ্কার,অরাগ বা অনাসক্তি, অমদ,অমোহ,অদম্ভ,অদ্বেষ, অক্ষোভ,অমাৎসর্য, অলোভ নিজের ভাবসিদ্ধির জন্যে এই সকল কে ভাব পুষ্প হিসেবে দেবীকে প্রদান করার ও বিধান আছে। তাই দেখা যাচ্ছে যে পূজা শুধু মন্ত্র-উপাচার প্রধান নয়, প্রয়োজন ভাব-ভক্তি ও নিষ্ঠার। আসুন আমরা সকলে মিলে সেই ভাব,ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে আরাধনা করি জগন্মাতার। মা ভগবতী সকলের মঙ্গল করুন, এই প্রার্থনা জানাই। জয় ঠাকুর, জয় মা জয় স্বামীজী...
অনিচ্ছাকৃত ভুল যদি করে থাকি তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থী...

দেবতা বিসর্জন...কিছু কথা




দশমী পূজার সাথে সাথেই সমাপ্তি ঘটলো পাঁচ দিন ব্যাপি শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা আকাশে বাতাসে যেন কেমন বিষাদের পরিবেশ
, মানসিক অবস্থা ও তদ্রূপ। আসলে সেই মানসিক অবস্থার কারণ হল এই কয়েক দিনের বাঁধন ছাড়া আনন্দের অবসান ঘটবে বলে। দেবী কোথায় যাবেন সন্তান কে ছেড়ে তিনি কি যেতে পারেন আর দেবী যদি সত্যি সত্যি চলে যান তাহলে এই জীব সকল কি প্রাণ ধারণ করে থাকতে পারবে? এই মহামায়ার আশীর্বাদের ফলে আমরা বেঁচে আছি। তবে কেন আমরা মন খারাপ করবো? মা এতদিন মণ্ডপে বসে আমাদের পুজা-আরাধনা গ্রহণ করেছেন, আজ পূজার সমাপ্তিতে তিনি আবার আমদের মনের আসনে আমাদের হৃদয়ে ফিরে আসবেন। এই ঘটনা প্রসঙ্গে একটা কাহিনী উল্লেখ্য
'একবার রাণী রাসমণি জানবাজারের বাড়িতে দুর্গাপূজার ব্যাবস্থা করেছেন | জামাই মথুর সারাক্ষণ মায়ের পূজার তদারকি করছেন | এবার এল সেই বিজয় দশমীর দিন | বিসর্জনের সময় হঠাৎই মথুরবাবু হুকুম দিলেন | এই সুন্দর মাকে বিসর্জন দিয়ে পারব না | অসম্ভব, মথুরবাবু শুধু মায়ের দিকে তাকিয়ে কাঁদছেন | দুখে মনটা যেন ভেঙে যাচ্ছে | সবাই তো একবারে হকচকিয়ে গেছে | কি হবে তাহলে ? মায়ের কি তাহলে বিসর্জন হবে না ? কিন্তু মথুরবাবুর নির্দেশ তাই কেউ ভয়ে অমান্যও করতে পারবে না | এই অবস্থায় একজন মাত্র উদ্ধার করতে পারেন ! আর তিনি হলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব | কারন মথুরবাবু তাঁর কথা কখনও অমান্য করতে পারেন না | সবাই মিলে গিয়ে ধরলেন ঠাকুরকে , এই অবস্থার থেকে উদ্ধার করার জন্য | ঠাকুর এলেন বললেন, ' মথুর এতদিন মা বাইরে পূজা নিলেন এবার তোমার হৃদয়ে বাস করবেন |' মথুরের বুকে হাত বুলিয়ে দিলেন , ব্যাস মথুরবাবু শান্ত হলেন |'
আমাদের শাস্ত্র ও তাই বলে, পূজার সময় ধ্যান মন্ত্র পাঠ করে হৃদয়স্থিত দেব/দেবী কে ধ্যানের পুস্পের মধ্যে এনে ঘটে স্থাপন করা হয়, আবার পূজার শেষে ঘটের পুষ্পের থেকে দেব/দেবী কে আবার স্ব-হৃদয়ে স্তাপনা করা হয়। তাহলে মা দুর্গা যাচ্ছেন কোথায়?
 বিসর্জনের সময় যারা চিৎকার করে  বলেন ‘ও মা যাইও না...মাগো যাইওনা’ তাঁদের কাছে বিনম্র অনুরোধ এমন আচরণ থেকে বিরত থাকুন ও অন্যদের ও বলুন। এই সকল আচরণ ভিন ধর্মী মানুষদের মনে ও  বাচ্চাদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। আরেকটা বিষয় বিসর্জনের সময় এতো উল্লাস কিসের? সেই উল্লাস দেবতাকে ভাসানোর বা জলে ফেলার নয় সেই উল্লাস নির্বিঘ্নে পূজা যজ্ঞ সম্পাদন করার উল্লাস, আমরা যেকোনো কাজ সফল ভাবে করতে পারলে যে উল্লাস প্রকাশ করি এখানে সেই উল্লাস মাত্র। যদিও কিছু ক্ষেত্রে আজকাল সেই উল্লাস, মাত্রা ছাড়িয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে এবং যার ফলে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষের কাছে তা এক কৌতূহলের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।   আমাদের দেহ পঞ্চ তত্ত্ব দিয়ে তৈরি, দেহ থেকে প্রাণ চলে গেলে সেই নিষ্প্রাণ দেহকে হয় অগ্নি দ্বারা দাহ করা হয় নয়তো মাটি চাপা দেওয়া হয়  তার তাৎপর্য এই যে, পঞ্চত্তত্ব দ্বারা তৈরি দেহকে আবার সেই পঞ্চ তত্ত্ব তে বিলীন করে দেওয়া। ঠিক সেই ভাবে মাটি দ্বারা তৈরি প্রতিমা তে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে দেহস্থ দেবতা কে পূজা করা হয়, পূজার শেষে আবার সেই দেবতাকে  স্ব হৃদয়ে স্থাপন করে দেবতা কে করা হয় মন্ত্র বিসর্জন, এবং সেই নিষ্প্রাণ মাটির মূর্তিকে জলে বিসর্জনের মাধ্যমে আবার সেই পঞ্চ-তত্ত্বে মিলিয়ে দেওয়া হয়।

বিসর্জনের এই তত্ত্ব হয়তো অনেকেই জানেন, যাদের কাছে তা অজানা, আমি যতটুকু জেনেছি তা জানিয়ে দেবার চেস্থা করেছি মাত্র। বিসর্জনের সময় তাই অন্য ভাবনা ভুলে দেবতার সেই তেজোময় রূপ আমাদের হৃদয়ে প্রবেশ করছে এমন ভাবনা করুন  এবং প্রার্থনা করুন যেন আগামী এক বৎসর আমাদের  হৃদয়ে বিরাজিত থেকে আমাদেরকে সকল রকম বাধা, বিপত্তি, রোগ, শোক, বিপদ থেকে রক্ষা করেন। এক বৎসর পরে আবার তাঁকে যেন আরাধনা করার সুযোগ ও শক্তি প্রদান করেন আমাদের এই প্রার্থনা করা প্রয়োজন। জয় মা...।

Tuesday 4 October 2016

দেবী প্রতিমা ও দেবী ধ্যান

ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ বলতেন প্রতিমায় আবির্ভাব হতে গেলে তিনটি জিনিসের দরকার,- “প্রথম পূজারীর ভক্তি, দ্বিতীয় প্রতিমা সুন্দর হওয়া চাই, তৃতীয় গৃহস্বামীর ভক্তি”। আধুনিক কালের পূজাতে সেই ভক্তির অভাব অনেক ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। প্রতিমা পূজার প্রধান অঙ্গ হল প্রতিমা, সেই প্রতিমা সুন্দর না হলে পূজার সার্থকতা থাকে না, আবার প্রতিমা ধ্যানাযায়ী না হলে পূজারীর কাছে পূজা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় । পূজার সাত্বিকতা হারিয়ে আজ অনেক ক্ষেত্রে তা রাজসিকতা ও তামসিকতায় পরিনত হয়েছে। মাতৃ আরাধনার প্রকৃত লক্ষ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আমরা তার আনুসঙ্গিকতায় অধিক মনোনিবেশ করেছি।আজকাল দেবী প্রতিমা আমাদের কাছে মনোরঞ্জনের এক বিষয় বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে, অধিকাংশ স্থানে মূর্তি তৈরি করা হয় বিভিন্ন আদলে, বিভিন্ন রূপে যার ফলে আমরা নিজেরা মাতৃ রূপ সম্বন্ধে বিভ্রান্ত। সত্যি কথা বলতে কি আমরা অনেকেই জানি না আমাদের জগন্মাতা দেবী দুর্গার প্রকৃত স্বরূপ কি? ধ্যানে আমরা দেবীর যে রূপ বর্ণিত পাই তা আমাদের অনেকের কাছে অজানা তাই আজ যেখানে যেখানে সেই ধ্যানে বর্ণিত রূপে প্রতিমা তৈরি হয় তা আমাদের মনোগ্রাহী হয় না বরঞ্চ আমাদের কাছে কৌতূহলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ধ্যানে শুধু মায়ের রূপের বর্ণনাই নয়, মার কোন হস্তে কোন অস্ত্র তার ও বর্ণনা আছে। সকলের জ্ঞাতার্থে দেবীর ধ্যান মন্ত্র ও তার যথাসাধ্য অর্থ সকলের কাছে তুলে ধরছি,ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন নিজের অজ্ঞতার জন্য আমি নিজেই ক্ষমাপ্রার্থী।
             দেবী দুর্গার ধ্যানমন্ত্র
ওঁ হ্রীং জটাজুটসমাযুক্তামর্দ্ধেন্দুকৃতশেখরাম্।
লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্।।
অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্।
(তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্।)
নবযৌবন-সম্পন্নাং সর্ব্বাভরণ-ভূষিতাম্।।
সূচারুদশনাং তদ্বৎ পীনোন্নত-পয়োধরাম্।
ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং মহিষাসুরমর্দ্দিনীম্।।
মৃণালায়াত-সংস্পর্শ-দশবাহুসমন্বিতাম্।
ত্রিশুলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খড়্গং-চক্রং ক্রমাদধঃ।।
তীক্ষ্ণবাণং তথাশক্তিং দক্ষিণেন বিচিন্তয়েৎ।
খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেবচ।।
ঘণ্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ।
অধস্থান্মহিষং তদ্বদ্ধিশিরস্কং প্রদর্শয়েৎ।।
শিরোশ্ছেদোদ্ভবং তদ্বদ্দানবং খড়্গপাণিনম্।
হৃদিশূলেন নির্ভিন্নং নির্য্যদন্ত্রবিভূষিতম্।।
রক্তারক্তী কৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্।
বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রূকুটিভীষণাননম্।।
সপাশবামহস্তেন ধৃতকেশঞ্চ দুর্গয়া।
বমদ্রুধিরবক্ত্রঞ্চ দেব্যাঃ সিংহং প্রদর্শয়েৎ।।
দেব্যাস্তু দক্ষিণং পাদং সমং সিংহোপরিস্থিতম্।
কিঞ্চিদূর্দ্ধং তথা বামমঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি।।
স্তুয়মানঞ্চ তদ্রূপমমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ।
প্রসন্নবদনাং দেবীং সর্ব্বকাম ফলপ্রদাং।।
উগ্রচণ্ডা প্রচণ্ডা চ চণ্ডগ্রাচণ্ডনায়িকা।
চণ্ডাচণ্ডবতী চৈব চণ্ডরূপাতিচণ্ডিকা।।
অষ্টাভিঃ শক্তিভিস্তাভিঃ সততঃ পরিবেষ্টিতাম্।
চিন্তয়েজ্জগতাং ধাত্রীং ধর্মকামার্থমোক্ষদাম্।।
ব্যাখ্যা
দেবীর মাথায় জটা, সাথে অর্ধচন্দ্রের মত কপাল। পূর্ণিমার চাঁদের মত মুখ তাঁর ও গায়ের রঙ অতসীফুলের মতো। তিনি সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত এবং তাঁর সর্বাঙ্গ বিভিন্ন অলঙ্কার দ্বারা ভূষিত।
তাঁর দাঁত সুন্দর এবং ধারালো, স্তন সম্পূর্ণ। তিন ভাঁজে দাঁড়িয়ে তিনি দৈত্য নিধন করছেন। দশহাতভর্তি অস্ত্র তাঁর যা দেখতে শাখা-প্রশাখা সমন্বিত পদ্ম গাছের মতো। ডানদিকের উপরের হাতে অবস্থান করে ত্রিশুল, তারপর ক্রমান্বয়ে খর্গ এবং চক্র।
দেবীর দক্ষিণের সর্বনিম্ন দুই হাতের অস্ত্র ধারালো তীর এবং বর্শা। দেবীর ধ্যানে বর্ণিত হয় তাঁর বাঁ হস্ত। সেদিকে সবচেয়ে নিচের হাতে থাকে চামড়ার ঢাল ও তার উপরের হাতে ধনুক। সেগুলির উপরের হাতে থাকে সর্প, অঙ্কুশ এবং কুঠার (ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে)। দেবীর পায়ের কাছে দৈত্যরাজের মাথার স্থান।
মহিষের কাটা মাথা থেকে মহিসাসুরের দেহ অর্ধেক উত্থাপিত, হাতে তাঁর খর্গ এবং হৃদয়ে দেবীর ত্রিশূল দ্বারা বিদ্ধ। তাঁর পেট থেকে নাড়িভূঁড়ি নির্গত হয়েছে। শরীর রক্তলিপ্ত। দেবীর হাতে ধরা সাপ দ্বারা অসুরের দেহ বেষ্টিত। তবে উত্থিত ভ্রূ তে দৈত্যের রূপও ভয়ঙ্কর। ।
দেবী তাঁর বাম হাত দিয়ে দৈত্যরাজের চুল টেনে রেখেছেন। দেবীর ডান পা বাহন সিংহের উপরে এবং বাঁ পা কিঞ্চিৎ উর্ধে মহিষের উপরে অবস্থান করে। প্রবল যুদ্ধরত অবস্থাতেও দেবী তাঁর শান্তিপূর্ণ মুখাবয়ব ও আশীর্বাদী রূপ বজায় রেখেছেন এবং সমস্ত দেবতা দেবীর এই রূপের স্তুতি করেন। ।
দেবীর উপরোক্ত রূপ দেবতাদের আট শক্তি উগ্রচন্ডা, প্রচন্ডা, চন্ডোগ্রা, চন্ডনায়িকা, চন্ডা, চন্ডবতী, চন্ডরূপ ও অতিচন্ডিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত। গৃহকর্তার মানব জীবনের সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ করেন এই দেবী। তাই ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভের জন্য জগন্মাতৃকা দেবী দুর্গার ধ্যানই মানবজাতির করা উচিত। ।

কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...