Sunday 23 October 2016

চৌদ্দ শাক কি এবং কেন?

চৌদ্দ শাক কি এবং কেন?

শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
(সঙ্কলিত)

আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে চৌদ্দ পুরুষের আত্মাকে তুষ্ট করার জন্যে চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে এবং এও বিশ্বাস যে তার ফলে অশুভ শক্তিকে দূরে  রাখা যায় এই দিনটাকে  সাধারণত ভূতচতুর্দশী বলা হয়তবে এর সাথে চৌদ্দ শাকের সম্পর্ক কি তার সঠিক কারণ জানা নাই। অনেকের মতে ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বিভিন্ন রোগের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে এই শাকগুলি খাওয়া হনব্য-স্মৃতিশাস্ত্রকার রঘুনন্দনের মতে এই চৌদ্দ শাক হল
১) ওল ২)কেউ ৩)বেতো ৪) কালকাসুন্দে ৫) নিম পাতা ৬) জয়ন্তী ৭) সরিষা 8) শাঞ্চে ৯) হিলঞ্চ ১০) পলতা ১১) শুলফা ১২) গুলঞ্চ ১৩) ঘেঁটু ১৪) শুষনি
(বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকায় উল্লেখ্য)
এবার দেখা যাক এই চৌদ্দ শাকের কি কি ঔষধি গুণ আছে
১) ওল  যা হল  অর্শ, রক্ত আমাশা, বাত, চর্মরোগ, গ্যাস-অম্বল নাশক
২) কেও  যা হল  কৃমিনাশক, হজমকারক, ক্ষুধাবর্ধক
৩) বেতো  যা হল কৃমিনাশক, কোষ্ঠবদ্ধতা ও অম্বল প্রতিরোধক৪) কালকাসুন্দা  যা  অ্যান্টি-অ্যালার্জিক, কোষ্ঠবদ্ধতা, অর্শ, ফিসচুলা, হুপিং কাশি, দাদ ইত্যাদির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়
৫) নিম যা  কুষ্ঠ, যে কোন চর্মরোগ, জণ্ডিস, বহুমূত্র, একজিমার ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়
৬) সরিষা যা মানব দেহের চামড়া, যকৃত এবং চোখের পক্ষে এই শাক অত্যন্ত উপকারি
৭)শালিঞ্চা বা শাঞ্চে  সাধারণত ক্ষুধাবর্ধক হিসাবে পরিচিত; এদের ব্যবহারে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়
৮) জয়ন্তী  যা  উদরাময়, বহুমূত্র, শ্বেতী , জ্বর এবং কৃমি নাশকের কাজ করে;
সদ্য প্রসূতিদের জন্য এই শাক উপকারী
৯) গুলঞ্চ  এই শাক সেবনে বাত, রক্তচাপ, একজিমা ও জন্ডিস নির্মূল হয়। তাছাড়া গুলঞ্চ শাক পরিপাকেও সাহায্য করে
১০) পটুক পত্র বা পলতা  এই শাক যে কোন শ্বাসের রোগে কার্যকরী। এরা রক্তবর্ধক এবং লিভার ও চামড়ার রোগ সরাতে এদের প্রভূতভাবে ব্যবহার করা হয়।
১১) ভন্টাকি (ঘেঁটু) বা ভাঁট  ফ্ল্যাভোনয়েড থাকার জন্য এটি ক্যানসার দমনে সহায়ক। এছাড়াও কৃমি, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার ও উদরাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে এই শাক সাহায্য করে।
১২) হিলমোচিকা বা হিঞ্চে  এই শাক ভক্ষণে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। শুধুমাত্র পিত্তনাশক হিসাবেই নয়, রক্তশোধক হিসাবে, ক্ষুধাবর্ধক এবং জ্বর নির্মূলকারী হিসাবে এর ব্যবহার অপরিসীম
১৩) সুনিষন্নক বা শুষুনী বা শুষনি  শুষনি শাক স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এরা নিদ্রাকারক, মেধা এবং স্মৃতিবর্ধক। হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক অস্থিরতা কমানোর জন্য এই শাক ব্যবহৃত হয়।
১৪) শেলু বা শুলকা এদের ব্যবহারে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে এবং ছোটদের পেটের রোগ সারাতে এই শাক অত্যন্ত উপকারি।
              অন্য মতে চৌদ্দ শাক হল  পালং শাক, লাল শাক, সুষণি শাক, পাট শাক, ধনে শাক, পুঁই শাক, কুমড়ো শাক, গিমে শাক, মূলো শাক, কলমি শাক, সরষে শাক, নোটে শাক, মেথি শাক, লাউ শাক অথবা হিঞ্চে শাক
                  তবে আজকাল বাজারে চৌদ্দ শাকের আঁটি কিনতে পাওয়া যায়। তাতে সচরাচর এসব খুব কমই পাওয়া যায়, তবে নামে চৌদ্দ প্রকারের পাতা পাওয়া যায় এবং  তাই দিয়ে নিয়ম রক্ষার শাক খাওয়া হয়। আবার অনেকে ভাবেন তা নেহাতই বুজরুকি, তাই অনেক ঘরে তার প্রচলন উঠে গেছে। আমার মনে হয় আমাদের পূর্বপুরুষ রা কিছু একটা জেনে এইসবের প্রচলন করেছিলেন কিন্তু যেহেতু আমরা সেই সবের আসল তথ্য জানি না তাই নিজের অজ্ঞতা ঢাকতে এই সব কে বুজরুকি বা কুসংস্কার বলে চালিয়ে দেই।


No comments:

Post a Comment

কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...