Thursday 26 October 2017

ছট পূজা

ছট পূজা

সঙ্কলক
শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
 

ছট পূজা একমাত্র বৈদিক পূজা যা সূর্যদেবের নামে উৎসর্গিত। এই পুজার মাধ্যমে সূর্য দেবকে জীবজগত ও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের উপর কৃপাদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয় । দীপাবলির ছয় দিন পরে উত্তর ভারত বিশেষত বিহার, ঝাড়খন্ড ও উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে পালিত হয় ছট পুজো। ভারতবর্ষের হিন্দিভাষী হিন্দুদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পূজা ছট্‌ পূজা। ছট্‌ অর্থাৎ ছটা বা রশ্মির পূজা। এই রশ্মি সূর্য থেকেই পৃথিবীর বুকে আসে। সুতরাং এই পূজা আসলে সূর্যদেবের পূজা। প্রত্যক্ষভাবে ‘ছট;-এর পূজা হলেও এই পূজার সঙ্গে জড়িত আছেন স্বয়ং সূর্যদেব, আছেন মা গঙ্গা এবং দেবী অন্নপূর্ণা।তবে বর্তমানে ভারতের অনেক স্থানের মানুষরা মহানন্দে ছট পুজো উদযাপন করে থাকেন।
চার দিন ব্যাপী উদযাপিত হয় এই ছট পুজো। কার্তিক শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিকের শুক্লা সপ্তমী তিথি পর্যন্ত চলে এই পূজা, ব্রত কারীদের ছত্রিশ ঘন্টার উপবাস রেখে এই পুজো করে থাকেন।এই পূজাতে অনেক রীতি-নীতি মেনে করতে হয়। সূর্যোদয়ের আগে স্নান সারতে হয়, সমস্ত দিন জল পর্যন্ত না খেয়ে উপবাস রাখতে হয়, সূর্যাস্ত থেকে পরদিন সূর্যোদয় পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ঠাণ্ডায় জলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। 
কার্তিক শুক্লা চতুর্থীতে ব্রতকারীরা নিজেদের বাডি ঘর কে পরিষ্কার করে পুণ্যস্নান সেরে নিরামিষ অন্ন গ্রহন করেন।এদিনে লাউ ভাত খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে ।এইদিন থেকেই ব্রতকারীরা লাউ,ভাত ও ছোলার ডাল খেয়ে ব্রত শুরু করেন।
পরের দিন অর্থাত্ কার্তিক শুক্লা পঞ্চমীতে সারাদিন ব্রতকারীরা উপোস থেকে সন্ধ্যায় ভোজন করেন।একে খান্না বলা হয় ।এদিন রাতে খান্নার প্রসাদ হিসেবে গুড় ও দুধের পায়েস ও ঘিযের রুটি বানিয়ে সকল আশে পাশের মানুষ কে খাওয়ানো হয় । এই প্রাসাদে লবন ও চিনির ব্যবহার করা যায় না। 
তৃতীয় দিনে ব্রতকারীরা একসাথে এই পূজোর প্রসাদ তৈরী করেন এই পূজোতে সম্পূর্ণ ঘরের তৈরি করা দ্রব্যই পূজো তে দেওয়া হয় ।এই পূজোর মূখ্য প্রসাদই হলো ঠেকুয়া ও কাসার।ঠেকুয়া গুড় ও আটা দিয়ে বানানো হয় ও কাসার চালের আটা ও গুড় দিয়ে বানান খাদ্যদ্রব্য ।এছাড়া এই পূজোতে ফল ও সবজির বিশেষ ব্যবহার হয় ।এদিন সব আয়োজন করে বাড়ির মহিলারা বিকেলে নদী কিংবা পুকুরে পূজোর ঘাটে যান এবং একহাঁটু জলে নেমে সূর্য দেবাতার আরাধনা করেন ও জল ও দুধের অর্ঘ প্রদান করেন ।
চতুর্থ দিনে দেওয়া হয় উষা অর্ঘ।কার্তিক শুক্লা সপ্তমীর সকালে উদিত সূর্য কে এই অর্ঘ দেওয়া হয় পূর্ব দিনের মতো এই দিন ও সূর্য দেবতাকে পূজো করা হয় এবং কুলোতে সাজানো সকল দ্রব্যের উপর ও অর্ঘ প্রদান করা হয় ।এদিন ব্রতকারীদের পাশাপাশি বাড়ির সকল সদস্যরা জলে নেমে সূর্য দেবতার উদ্যেশ্যে অর্ঘ দেন এবং পূজো শেষে সরবত ও ফলমূল খেয়ে ব্রতকারীরা তাদের পূজো সম্পূর্ণ করেন। 
পৌরাণিক কাহিনিতে রয়েছে — বর্ষার আগমন ঘটেছে। কিন্তু বৃষ্টি তেমন হয়নি। চাষিদের মাথায় হাত। মাঠের ফসল মাঠেই মারা যাচ্ছে। মা অন্নপূর্ণা ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকেন। সকল দেবতা মা অন্নপূর্ণার এহেন দুর্দশায় ব্যথিত। ঘরে ঘরে অন্নাভাব হাহাকার ওঠে। সূর্যের তাপ হ্রাস করে বাঁচার জন্য মা অন্নপূর্ণা সূর্যদেবের ধ্যান করতে শুরু করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। সূর্যের প্রখর ছটায় মা অন্নপূর্ণা দিন দিন শ্রীভ্রষ্টা হয়ে ক্ষীয়মান হতে থাকেন। দেবলোকে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দেবতারা সম্মিলিতভাবে সূর্যদেবের কাছে গেলে তিনি মা অন্নপূর্ণার এই দশার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। এবং বলেন, মা অন্নপূর্ণা যেন গঙ্গাদেবীর আশ্রয় নেন। সূর্যদেব আরও বলেন, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর অস্তগমনকাল থেকে সপ্তমীর উদয়কাল পর্যন্ত মা অন্নপূর্ণা ও গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে উদীয়মান ছটা বা রশ্মিকে দেখে আমার স্তব বা দ্বাদশ নাম উচ্চারণ করলে সমস্ত পৃথিবী অন্নে পরিপূর্ণ থাকবে ও পৃথিবী শস্য শ্যামলা থাকবে। 
তাই ছট্‌ পূজা বা ব্রত একাধারে সূর্যদেব, মা অন্নপূর্ণা ও গঙ্গাদেবীর পূজা। বিজ্ঞানসম্মতভাবে বলা যায়, গঙ্গার জলে সেচ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে অনাবৃষ্টিতেও খেত-খামার অন্নে পূর্ণ হয় এবং স্বাভাবিকভাবে মনুষ্যসমাজে খাদ্যের অভাব থাকবে না।

Thursday 19 October 2017

মা কালীর অঙ্গের তাৎপর্য

দেবীর অঙ্গের তাৎপর্যঃ
দেবীর মাথায় অর্দ্ধচন্দ্র তাঁহার মোক্ষ-প্রদান শক্তির পরিচায়ক।তাহা হইতে নিঃসৃত অমৃত সাধক কে অমৃতত্ব বা মোক্ষ প্রদান করিয়া থাকে। দেবী মুক্তকেশী ।তাঁর মুক্তকেশ চির-বৈরাগ্যের প্রতীক। জ্ঞান-অসির আঘাতে তিনি অক্টপাশ ছেদনকারী মা চির বৈরাগ্যময়ী। তাই তাঁর কালো চুল বিস্তৃত।
দেবীর তিন চোখ তিনটি আলোর প্রতীক, চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি। অন্ধকার বিধ্বংসী তিন শক্তির প্রকাশ। অজ্ঞতা, চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি অজ্ঞানতারূপ অন্ধকার থেকে মুক্ত করে। তিনটি চোখে দেবী অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে প্রত্যক্ষ করেন। কারণ,এই শক্তিই হল সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের কর্তা। দেবীর কানে দুতি বালকের শব যার অর্থ নির্ব্বিকার, নিস্কাম,শিশু্ভাবাপন্ন সাধক মায়ের অতি প্রিয়। দেবী রক্তবর্ণের জিহ্বাকে সাদা দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখেছেন। লাল রং রজোগুণের প্রতীক, সাদা রং সত্ত্বগুণের প্রতীক। সাদা দাঁত দিয়ে লাল জিহবাকে চেপে রাখা। অর্থাৎ সত্ত্বগুণর দ্বারা রজোগুণকে দমন করে রাখা। রজোগুণ ভোগের গুন, ঈশ্বর বিমুখ করে। রজোগুণ দমনের জন্য এই প্রতীক। অনেক সময় আমরা কোন অন্যায় বা মিথ্যাচার করলে জিহ্বার কামড় দেই অর্থাৎ অন্যায় করার স্বীকৃতি।
দেবীর গলায় পঞ্চাশটি মুন্ড দিয়ে মালা পরানো। পঞ্চাশটি মুন্ড পঞ্চাশটি অক্ষরের প্রতীক। ১৪ টি স্বরবর্ণ এবং ৩৬ টি ব্যঞ্জনবর্ণ, অক্ষর ব্রহ্ম, যার ক্ষয় নেই, শব্দ ব্রহ্ম, অক্ষরের দ্বারাই শব্দের উৎপত্তি হয়। এর অবস্থান মস্তকে। আমরা মন্ত্রোচ্চারণের দ্বারা দেব বা দেবীর বন্দনা করি। এই মন্ত্রের অবস্থান মাথার তালুতে সহস্রার পদ্মের মধ্যে। তাই অক্ষরের প্রতীক মুন্ড তাঁর গলায় হাত কর্মের প্রতীক। আমাদের সকল কর্মের ফলদাতা তিনি । সকাম ভক্ত যারা তারা অতৃপ্ত কামনা নিয়ে দেহত্যাগ করে বলে পুনরায় মাতৃ জঠরস্থ হয়, হস্ত মেখলা প্রতীকে সকাম ভক্তের পুণর্জন্ম লাভ করার তত্ত্ব নিহিত। 
দেবীর চাইতে বড়তো কিছুই নেই। তাই তিনি কি পরিধান করবেন? বিশ্বব্যাপী শক্তির অবস্থান। শক্তিকে আবরিত করা যায়না। তিনি স্বয়ং প্রকাশ। তাই দেবী উলঙ্গ।দেবী কখন দক্ষিণ পদ কখন বাম্পদ, অগ্রে স্থাপন করেন ইহার অর্থ এক পদে অতীতকে অন্যপদে ভবিষ্যত কে অধিকার করিয়া আছেন।
কালো রং সকল বর্ণের অনুপস্থিত। তাই কালো। কখনো বা তিনি শ্যমা-শ্যামবর্ণা। কালো রং ভয়ের উদ্রেক করলেও শ্যাম রং কোমলতা জাগায়। স্নিগ্ধতা ও কমনীয়তা জাগায়। তাই মাতৃসাধক কালী শ্যামবর্ণা রূপেও দর্শন করেছেন।
মা কালী শবরূপী শিবের বুকে দন্ডায়মানা। শিব স্থির, কালী গতিময়ী। গতি ঠিক রাখতে হলে স্থিরের উপর তার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। শিব শুভ্রবর্ণ, কালী কালো বর্ণ। সাধক কূটস্থ দর্শন কালে এই শুভ্র রং বেষ্ঠিত কালো রং সাধনায় দেখে থাকেন

কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...