Tuesday 11 October 2016

মানস পূজা...

'পূজা' এই শব্দটির 'প' অর্থে 'মূলাধার' - 'ঊ' অর্থে 'বলপূর্বক' - আর 'জ' অর্থে 'কূটস্থে থাকা' অর্থাৎ বলপূর্বক প্রাণবায়ুকে যা কল্পনা করা হয় মূলাধারে অবস্থিত, তাকে কূটস্থে স্থিতি করানো – অর্থাৎ প্রাণকর্ম করা |
এবার আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে পূজার সময় আমরা কেন পূর্বদিকে বা উত্তরদিকে মুখ করে পূজা করি। তার সরল ব্যাখ্যা এই ভাবে করা যেতে পারেঃ- সূর্য হলো পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস, আলোর প্রতীক, অন্ধকার নিবারক। তাই যুগ যুগ ধরে আমাদের জীবনের শক্তিদায়ী ভাবনার প্রতীক হিসেবে সূর্য কেই চিহ্নিত করা হয়ে আসছে । তাই পূর্ব মুখী হয়ে বসলে আমাদের মনে সূর্যের কথা বা সেই উজ্জ্বল আলকের কথা সহজে মনে আসে ও মনের মধ্যে এক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। আবার উত্তর দিক কে কল্পনা করা হয় ব্রহ্মলোক পথ, তাই উত্তরমুখী হয়ে বসলে ব্রহ্মলোকের কথা অর্থাৎ মনকে ইশ্বরমুখী রাখতে সাহায্য করে ।
আমরা জানি যে পূজায় অনেক উপাচারের প্রয়োজন এবং সেই সব উপাচার সংগ্রহ করতে অর্থের প্রয়োজন, প্রয়োজন পরে অন্যের সাহায্যের ও। কিন্তু আমরা অনেকে জানি না, যে পূজা শুধু ব্যাহিক ভাবেই নয় মানসিক ভাবেও করা যায় বরঞ্চ ব্যাহিক পূজার একটি অঙ্গ হলো মানস পূজা। এই মানস পূজায় প্রয়োজন হয় না কোন প্রকার উপাচারের ভক্তি মাত্র সার। কিভাবে হয় এই মানস পূজা? মহানির্বাণ তন্ত্রে আদ্যাকালীর মানস পূজার বিধান কিছুটা এই প্রকার ‘দেবীর আসন হলো আমাদের হৃৎপদ্ম, সহস্রার (মাথার তালুতে যে কল্পিত অধঃ মুখী সহস্রদল পদ্ম) থেকে যে জলের ধারা তা দিয়ে দেবীর পা ধোয়ানো, নিজের মনকে দেবীর কাছে অর্ঘ্য স্বরূপ প্রদান করা, আচমন ও স্নানের জন্যেও সেই সহস্রার থেকে অমৃত স্বরূপ বারি ধারা প্রদান করা, দেবীর পরিধানের বস্ত্র হলো দেহের মধ্যে আকাশ তত্ত্ব, গন্ধ হলো দেহস্থ গন্ধতত্ত্ব। মনকে পুষ্প রূপে,প্রাণ কে ধূপ হিসেবে, মনের তেজ কে দীপ হিসেবে নিবেদন করা হয়।মনের অমৃতকে নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদন করা হয়। আরতির উপাচার ও আমাদের দেহের মধ্যেই কল্পিত যেমন হৃদয়ের স্পন্দন বাদ্য,বায়ুতত্ত্ব চামর, মাথায় যে সহস্রদল পদ্ম তা হল সহস্রার ছত্র, সঙ্গীত রূপে দেহস্থ শব্দ তত্ত্ব ও যাবতীয় ইন্দ্রিয় কর্ম ও মনের চাঞ্চল্যতাকে নৃত্য স্বরূপ দেবিকে উৎসর্গ করা হয়। অহিন্সা,ইন্দ্রিয় নিগ্রহ,দয়া, ক্ষমা এবং জ্ঞান এই পাঁচটি কে পঞ্চ পুষ্প রূপে দেবীকে উৎসর্গ করার বিধান ও আছে তাছাড়াও আছে দশটি ভাব পুষ্প যেমন অমায়া,অনহঙ্কার,অরাগ বা অনাসক্তি, অমদ,অমোহ,অদম্ভ,অদ্বেষ, অক্ষোভ,অমাৎসর্য, অলোভ নিজের ভাবসিদ্ধির জন্যে এই সকল কে ভাব পুষ্প হিসেবে দেবীকে প্রদান করার ও বিধান আছে। তাই দেখা যাচ্ছে যে পূজা শুধু মন্ত্র-উপাচার প্রধান নয়, প্রয়োজন ভাব-ভক্তি ও নিষ্ঠার। আসুন আমরা সকলে মিলে সেই ভাব,ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে আরাধনা করি জগন্মাতার। মা ভগবতী সকলের মঙ্গল করুন, এই প্রার্থনা জানাই। জয় ঠাকুর, জয় মা জয় স্বামীজী...
অনিচ্ছাকৃত ভুল যদি করে থাকি তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থী...

No comments:

Post a Comment

কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...