দশমী পূজার সাথে সাথেই সমাপ্তি ঘটলো পাঁচ দিন ব্যাপি শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা আকাশে বাতাসে যেন কেমন বিষাদের পরিবেশ, মানসিক অবস্থা ও তদ্রূপ। আসলে সেই মানসিক অবস্থার কারণ হল এই কয়েক দিনের বাঁধন ছাড়া আনন্দের অবসান ঘটবে বলে। দেবী কোথায় যাবেন সন্তান কে ছেড়ে তিনি কি যেতে পারেন আর দেবী যদি সত্যি সত্যি চলে যান তাহলে এই জীব সকল কি প্রাণ ধারণ করে থাকতে পারবে? এই মহামায়ার আশীর্বাদের ফলে আমরা বেঁচে আছি। তবে কেন আমরা মন খারাপ করবো? মা এতদিন মণ্ডপে বসে আমাদের পুজা-আরাধনা গ্রহণ করেছেন, আজ পূজার সমাপ্তিতে তিনি আবার আমদের মনের আসনে আমাদের হৃদয়ে ফিরে আসবেন। এই ঘটনা প্রসঙ্গে একটা কাহিনী উল্লেখ্য
'একবার রাণী রাসমণি জানবাজারের বাড়িতে দুর্গাপূজার ব্যাবস্থা
করেছেন | জামাই মথুর সারাক্ষণ
মায়ের পূজার তদারকি করছেন |
এবার এল
সেই বিজয় দশমীর দিন | বিসর্জনের সময় হঠাৎই
মথুরবাবু হুকুম দিলেন | এই সুন্দর মাকে
বিসর্জন দিয়ে পারব না | অসম্ভব, মথুরবাবু শুধু মায়ের দিকে
তাকিয়ে কাঁদছেন | দুখে মনটা যেন ভেঙে
যাচ্ছে | সবাই তো একবারে
হকচকিয়ে গেছে | কি হবে তাহলে ? মায়ের কি তাহলে বিসর্জন হবে
না ? কিন্তু মথুরবাবুর
নির্দেশ তাই কেউ ভয়ে অমান্যও করতে পারবে না | এই অবস্থায় একজন মাত্র উদ্ধার করতে পারেন ! আর তিনি হলেন
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব | কারন মথুরবাবু তাঁর
কথা কখনও অমান্য করতে পারেন না |
সবাই
মিলে গিয়ে ধরলেন ঠাকুরকে ,
এই
অবস্থার থেকে উদ্ধার করার জন্য |
ঠাকুর
এলেন বললেন, ' মথুর এতদিন মা বাইরে
পূজা নিলেন এবার তোমার হৃদয়ে বাস করবেন |' মথুরের বুকে হাত বুলিয়ে দিলেন , ব্যাস মথুরবাবু শান্ত হলেন |'
আমাদের শাস্ত্র ও তাই বলে,
পূজার সময় ধ্যান মন্ত্র পাঠ করে হৃদয়স্থিত দেব/দেবী কে ধ্যানের পুস্পের মধ্যে
এনে ঘটে স্থাপন করা হয়, আবার পূজার শেষে ঘটের পুষ্পের থেকে দেব/দেবী কে আবার
স্ব-হৃদয়ে স্তাপনা করা হয়। তাহলে মা দুর্গা যাচ্ছেন কোথায়?
বিসর্জনের সময় যারা চিৎকার করে বলেন ‘ও মা যাইও না...মাগো যাইওনা’ তাঁদের কাছে
বিনম্র অনুরোধ এমন আচরণ থেকে বিরত থাকুন ও অন্যদের ও বলুন। এই সকল আচরণ ভিন ধর্মী
মানুষদের মনে ও বাচ্চাদের কাছে ভুল বার্তা
পৌঁছে দিচ্ছে। আরেকটা বিষয় বিসর্জনের সময় এতো উল্লাস কিসের? সেই উল্লাস দেবতাকে
ভাসানোর বা জলে ফেলার নয় সেই উল্লাস নির্বিঘ্নে পূজা যজ্ঞ সম্পাদন করার উল্লাস,
আমরা যেকোনো কাজ সফল ভাবে করতে পারলে যে উল্লাস প্রকাশ করি এখানে সেই উল্লাস
মাত্র। যদিও কিছু ক্ষেত্রে আজকাল সেই উল্লাস, মাত্রা ছাড়িয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে
এবং যার ফলে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষের কাছে তা এক কৌতূহলের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের
দেহ পঞ্চ তত্ত্ব দিয়ে তৈরি, দেহ থেকে প্রাণ চলে গেলে সেই নিষ্প্রাণ দেহকে হয় অগ্নি
দ্বারা দাহ করা হয় নয়তো মাটি চাপা দেওয়া হয় তার তাৎপর্য এই যে, পঞ্চত্তত্ব দ্বারা তৈরি দেহকে
আবার সেই পঞ্চ তত্ত্ব তে বিলীন করে দেওয়া। ঠিক সেই ভাবে মাটি দ্বারা তৈরি প্রতিমা
তে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে দেহস্থ দেবতা কে পূজা করা হয়, পূজার শেষে আবার সেই দেবতাকে স্ব হৃদয়ে স্থাপন করে দেবতা কে করা হয় মন্ত্র বিসর্জন, এবং সেই
নিষ্প্রাণ মাটির মূর্তিকে জলে বিসর্জনের মাধ্যমে আবার সেই পঞ্চ-তত্ত্বে মিলিয়ে
দেওয়া হয়।
বিসর্জনের এই তত্ত্ব হয়তো
অনেকেই জানেন, যাদের কাছে তা অজানা, আমি যতটুকু জেনেছি তা জানিয়ে দেবার চেস্থা
করেছি মাত্র। বিসর্জনের সময় তাই অন্য ভাবনা ভুলে দেবতার সেই তেজোময় রূপ আমাদের হৃদয়ে
প্রবেশ করছে এমন ভাবনা করুন এবং প্রার্থনা
করুন যেন আগামী এক বৎসর আমাদের হৃদয়ে
বিরাজিত থেকে আমাদেরকে সকল রকম বাধা, বিপত্তি, রোগ, শোক, বিপদ থেকে রক্ষা করেন। এক
বৎসর পরে আবার তাঁকে যেন আরাধনা করার সুযোগ ও শক্তি প্রদান করেন আমাদের এই প্রার্থনা
করা প্রয়োজন। জয় মা...।
No comments:
Post a Comment