দশহরা বা গঙ্গা পূজা
আগামীকাল জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা দশমী, দশহরা বা গঙ্গা পূজা।এই দিনই রাজা ভগীরথের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মা গঙ্গা পৃথিবীতে নেমে আসেন। সেই দিনের তিথি ছিল জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা দশমী। স্কন্ধপুরাণে আছে এই দিনে গঙ্গায় স্নান করে, গঙ্গাকে দশটি ফুল, দশটি ফল ও দশটি প্রদীপ দিয়ে পুজো করলে আমাদের জ্ঞানে বা অজ্ঞানে করা দশটি পাপ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। দশ পাপ হরণ হয় বলেই এই তিথি কৃত্যের নাম দশহরা, এ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি।
আসুন দেখে নেই এই দশপ্রকার পাপ কি? কি? যা থেকে এই দিনে মুক্তিলাভ সম্ভব
পরদ্রব্য হরণ, অযথা হিংসা অর্থাৎ বৃথা প্রাণী হত্যা ও পরদার গমন অর্থাৎ অবৈধ প্রণয় এই তিনটি হলো আমাদের দেহগত পাপ। অহংকারী বাক্য, মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা এবং অসংবদ্ধ প্রলাপ বা বাজে বকা— এই চারটি হলো আমাদের বাক্যগত পাপ।মনে মনে পরের দ্রব্যের কামনা, পরের অনিষ্ট চিন্তা এবং মিথ্যার প্রতি আসক্তি— এই তিনটি হলো আমাদের মানসিক পাপ।
গঙ্গা নদীর বর্ণনা আমরা বৈদিক যুগ থেকেই পাই, পুরাণ মতে গঙ্গা স্বর্গের দেবী।তপস্যার দ্বারা এই দেবীকে মর্তে এনেছিলেন সগর রাজার বংশজ রাজা ভগীরথ, যিনি আবার ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ। পৌরাণিক আখ্যানে আছে সগর রাজার ছিলো ষাট হাজার পুত্র, কিন্তু সকলেই তাঁদের পাপকর্মের ফলে মহাসাধক কপিল মুনির অভিশাপে পড়েন এবং যোগবলে কপিলমুনি তাঁদের সকলকে ভস্ম করে দেন। কপিল মুনির অভিশাপে ভস্ম হলে,তাদের মুক্তিলাভের জন্য স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে আনতে দেবী গঙ্গার তপস্যা করতে করতে একে একে রাজা সগর, অসমঞ্জ, অংশুমান, দিলীপ রাজা দেহ ত্যাগ করেন,অবশেষে দিলীপ পুত্র ভগীরথ সফল হয়ে গঙ্গাকে মর্তে আনতে পারেন। সেইদিন ছিলো জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা দশমী।
বৈদিক যুগের কোনও এক সময়ে দশহরা তিথি থেকেই বৎসর গণনা শুরু হতো তাই দশহরা সেদিন নববর্ষের পূর্ণ মর্যাদায় ছিলো। দশহরার প্রধান কাজ হলো গঙ্গায় স্নান করা, কিন্তু যারা দূরে আছেন বা বিভিন্ন কারনে অক্ষম তাঁরা কি করবেন??? নিজের স্নানের জলে দু-তিন ফোঁটা গঙ্গা জল মিশিয়ে এই মন্ত্র
‘নমঃ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতীনর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু’
পাঠ করুন, বিশ্বাস এই মন্ত্রের সাহায্যে গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু, ও কাবেরীকে স্মরণ করে স্নানের জলে এই নদীগুলির পবিত্রতা ও শুদ্ধতা এনে নিজের জীবন কে শান্তি ও সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ করা যায়। পরে হাতজোড় করে
‘নমঃ কুরুক্ষেত্র গয়া গঙ্গা প্রভাস পুষ্করিণী চ।তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি স্নানকালে ভবন্ত্বিহ’
এই বলে স্নান করে নিন, গঙ্গা স্নান হয়ে যাবে। অবশ্য এতে আস্থা থাকা চাই, কথায় আছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।
ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
৪ই আষাঢ়,১৪২৮বঙ্গাব্দ
১৯শে জুন,২০২১ইং
ছবিঃ-সৌজন্যেঃ গুগোল
No comments:
Post a Comment