Thursday 21 September 2017

নবরাত্রি-- দেবী শৈলপুত্রী

আজ আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ। আজ থেকে শুরু শরৎকালীন নবরাত্রির আরাধনা। আজ মা শৈলপুত্রীর আরাধনায় আপনাদের জানাই স্বাগত। আসুন এই নবরাত্রিতে মা কে নিয়ে করি আলোচনা।
দেবী শৈলপুত্রী
বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাং| 
বৃষারূঢাং শূলধরাং শৈলপুত্রী য়শস্বিনীম ||
শৈলপুত্রী : নবদূর্গার প্রথম রূপ শৈলপুত্রী। গিরি রাজের কন্যা বলে শৈলপুত্রী নামে খ্যাত হন। ইনি বৃষভ বাহনা। ইনি দ্বিভূজা হাতে ত্রিশূল আর পদ্ম।
দক্ষযজ্ঞে দেবী ভগবতী সতী যখন শিবনিন্দা শুনে দেহত্যাগ করলেন, তখন মহাদেব ক্রোধে উন্মত্ত ও শোকে বিহ্বল হয়ে সেই দক্ষযজ্ঞ ধ্বংস করে সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে উন্মত্তের মতো সারা ত্রিলোক ঘুরতে লাগলেন। ত্রিভুবন তাঁর তাণ্ডবনৃত্যে সন্ত্রস্ত কম্পিত হয়ে উঠল। বিশ্বের এই বিপদ সামলাবার জন্য নারায়ণ তাঁর সুদর্শন চক্রে শিবস্কন্ধস্থিত দেবীর শরীর একটু একটু কবে কেটে ফেলতে লাগলেন। দেবী দেহের সেই টুকরো যেখানে পড়ল সেখানে সৃষ্টি হল একান্নটি শক্তিপীঠ। আর এদিকে ভাববিভোর শংকর তাঁর কাঁধে দেবীর শরীর না পেয়ে আত্মস্থ হয়ে কৈলাসে গিয়ে ধ্যানে বসলেন। শক্তি লাভের জন্য শুরু হল মহাদেবের তপস্যা।
অন্যদিকে স্বর্গরাজ্যে তারকাসুরের অত্যাচারে দেবতারা বিপন্ন হয়ে ব্রহ্মার কাছে গেলে তিনি বিধান দিলেন -উপযুক্ত সেনাপতির অভাবে তোমাদের এই পরাজয়। এই সেনাপতি হবেন,শিব-শক্তির মিলনের ফলে সৃষ্ট হবেন যিনি,সেই কুমার। দেবতারা তখন দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়াকে কাতর হয়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন - ‘মা, তুমি এসো, আবির্ভূত হও, শিবসঙ্গে আবার বিরাজিত হও-আমাদের এই বিপদ থেকে রক্ষার জন্য তোমার ও দেবাদিদেবের মিলনে একটি উপযুক্ত সেনাপতি আমাদের দান কর।’ দেবতাদের এই কাতর প্রার্থনায় মহাদেবী দুর্গা আবার মর্ত্যশরীর ধারনে স্বীকৃতা হলে। এর আগে নাগাধিরাজ হিমালয় ও পত্নী মেনকা স্বয়ং জগদম্বাকে কন্যারূপে পাওয়ার জন্য অনেক তপস্যা করেছিলেন। এখন দেবতাদের ইচ্ছা ও হিমালয়ের প্রার্থনা পূর্ণ করবার জন্য দেবী পার্বতী হৈমবতী কন্যা হয়ে হিমালয়ের গৃহে জন্ম নিলেন। তখনই তাঁর নাম হল শৈলপুত্রী। এই দেবীর সৃষ্টি এইভাবেই হয়েছিল। ইনিই পরে শিবের জন্য তপস্যা তাঁর সঙ্গে মিলিত হয়ে কার্ত্তিকের জন্মদান করেন।
দেবী শৈলপুত্রীর মন্দির রয়েছে কাশীর (বারাণসী) আলাইপুরার মড়িঘাটের কাছে। বর্তমান মন্দিরটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসস্তুপের উপর নির্মিত। তবে মন্দির চত্বরের প্রাচীন কুয়োটি এখনও আছে। মূল মন্দিরটি ছোটো। এই মন্দিরের গর্ভগৃহের পশ্চিম দেওয়ালে রয়েছে শৈলপুত্রীর কষ্টিপাথরের মূর্তিটি। সামনে কুণ্ডের মধ্যে কাশীখণ্ডস্থিত প্রাচীন শিবলিঙ্গ শৈলশ্বর। দেবীমূর্তি ও শিবলিঙ্গ উভয়েরই উচ্চতা এক হাত। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রির প্রথম দিনে এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়। এই দিনটিই সাধকদের নবদুর্গা-আরাধনার প্রথম দিন; সাধকের মন এই দিনে মূলাধার চক্রে অবস্থান করে।
(সংগৃহীত)

No comments:

Post a Comment

কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...