নবম শতাব্দীতে উল্লেখিত বাণমলবর্মদেবের তেজপুর লিপিতে প্রথম কামাখ্যা মন্দিরের শিলালিপি-উল্লেখ পাওয়া যায়। এই শিলালিপি থেকে জানা যায় যে খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতাব্দীতে এখানে একটি বিশাল মন্দির ছিল।
কথিত সুলেমান কিরানির সেনাপতি কালাপাহাড় এই মন্দিরটি তখন ধ্বংস করেছিলেন। আবার ঐতিহাসিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, আনুমানিক ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ কামতা রাজ্য
আক্রমণের সময় এই মন্দির ধ্বংস করেন। কথিত আছে, কোচ
তথা কামতাপুর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বসিংহ এই ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন এবং তিনিই এই মন্দিরে পূজা পুনরায় আরম্ভ করেন। তবে তাঁর পুত্র নরনারায়ণের রাজত্বকালে আনুমানিক ১৫৬৫ খ্রিষ্টাব্দে নরনারায়ণ ও
তাঁর ভাই চিলারায় এই মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করেন। জানা যায় এই মন্দির
পুনর্নির্মাণের সময় পুরনো মন্দিরের উপাদান গুলি আবার ব্যবহৃত করা হয়েছিল। এরপর অহোম রাজারা এই মন্দিরটি আরও বড়ো করে তোলেন।
কোচবিহারের মহারাজা এবং তার ভ্রাতা চিলারায় ছিলেন মা কামাখ্যার বিশেষ ভক্ত। কথিত আছে, সন্ধ্যা আরতির সময় বাজনা শুরু হলে কামাখ্যা দেবী স্বয়ং আবির্ভূত হতেন এবং বাজনার তালে তালে নৃত্য করতেন। কৌতুহল
বশতঃ মহারাজ নরনারায়ণ একদিন পূজারী ব্রাহ্মণ কেন্দুকলাই এর সাহায্যে নৃত্যরতা দেবীকে গোপনে
দর্শন করেন। এর ফলে মা কামাখ্যা দেবী ক্রোধান্বিত হয়ে
রাজাকে অভিশাপ দেন যে, রাজ পরিবারের কেউ এর পর থেকে কামাখ্যা মন্দির দর্শন করতে পারবেন না এবং কোচ-রাজবংশের যিনি কামাখ্যা মন্দির দর্শন করবেন তিনি বা তাঁর পরিবার তৎক্ষণাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হবেন।
রাজা নরনারায়ণ দেবীর নৃত্য দর্শনের সময়েই পূজারী ব্রাহ্মণ কেন্দুকলাই এর মৃত্যু হয়।আজ ও সেই
পুজারী ব্রাহ্মণ
কেন্দু কলাইয়ের প্রস্তুরীকৃত দেহ মন্দির চত্বরে আছে। অভিশাপগ্রস্থ মহারাজা নরনারায়ণ, তাঁর অপরাধেই তাঁর বংশধরগণ মূর্তি দর্শন ও পূজা দিতে পারবেন না এই ভেবে অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে মায়ের কাছে আকুল প্রার্থনা করেন তাঁর আকুল
প্রার্থনায় মা সদয় হয়ে বলেন তিনি বাণেশ্বর শিব মন্দিরের নিকট সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দেবী বিগ্রহে আর তারপাশে কামরাঙ্গা বৃক্ষে দেবীরূপে সর্বদা অবস্থান করবেন। তাঁর বংশধরেরা সেখানে পূজা দিলে ও দর্শন করলে মা কামাখ্যার পুজা ও দর্শন এর ফল লাভ হবে। মহারাজা নরনারায়ণের পরবর্তী সময়ে কোনো মহারাজা বা তাঁর বংশধরেরা আজও কামাখ্যা মন্দির দর্শন করেননি ।