হে
জনদরদী, পরিবেশ দরদী মানবসকল খানিক সময় নিয়ে আমার এই প্রতিবেদন পড়ে দেখুন কিছু সত্যতা
হয়তো এর মধ্যেও আছে, দেবাশীষ চক্রবর্ত্তীর এই লেখা পড়ে আপনাদের ধারণা যদি কিঞ্চিৎ বদলায়
তবে আমার এই পরিশ্রম সার্থক। আমি কোন জ্ঞানীপন্ডিত নই আমি নিতান্ত সামান্য এক মানুষ,
আর আমি আমার ধারণা ও উপলব্ধির সহায়তায় লিখেছি
এই বিষয় বস্তু……
প্রতিবারই
শ্রাবণ মাস আসলে সকলের দুধের অপচয়ের কথা, অনাথ,দরিদ্র ও রোগীদের কথা মনেহয় আবার এই
মাস ফুরোলে সেই বিষয় আবার একবছরের জন্যে স্তিমিত থাকে। ঠিক তেমনই কালীপুজা ও দেওয়ালীতে
আমাদের পরিবেশ দুষণের জন্যে হৃদয় ব্যাকুলিত হয়ে উঠে……দোল্পুর্ণিমা বা হোলিতে রঙ খেলার
সময় ‘জলের আরেক নাম জীবন জল বাঁচান , পরিবেশ বাঁচান’ এই কথা খুব মনে পরে বাদ বাকী সময়
তা কিন্তু খুব একটা মনে পরে না।
এবারে
আসি শ্রাবণ মাসে দুধের অপচয় বিষয় নিয়ে, বাকী গুলো না হয় সময়ে বলবো এই আবেগ গুলো তো
seasonal, season শেষ আবেগ ও শেষ। শ্রাবণ মাসে
কিছু জিনিস খাওয়ার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে আমাদের আয়ুর্বেদে, আয়ুর্বেদ
অনুসারে, এই চতুর্মাসে শাক-পাতার সাথে সাথে দুধ বা দুধ জাতীয় যেমন দই, রায়তা ইত্যাদি খাওয়া
নিষিদ্ধ করা আছে । শ্রাবণ মাসে এসব খাবার থেকে অনেক প্রকার রোগের
প্রকোপে পরতে হবে। শ্রাবণ
মাসে দুধ বা দই দিয়ে
তৈরি কিছু খাওয়া উচিত নয়। এতে করে অনেক ধরনের রোগের সম্মুখীন হতে পারেন। এর পাশাপাশি কাঁচা
দুধ খাওয়াও এড়িয়ে চলতে হবে। ধর্মীয় বিশ্বাসে বলা হয়েছে যে শ্রাবণ মাসে
ভগবান শিবকে কাঁচা দুধ নিবেদন করা হয়, তাই এই মাসে কাঁচা
দুধ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত
জিনিস খাওয়া নিষিদ্ধ। দই তৈরিতে দুধ
ব্যবহার করা হয়, তাই শ্রাবণ মাসে দই বা দুধ
এবং দই সম্পর্কিত জিনিস
খাওয়া নিষিদ্ধ। শ্রাবণ মাসে অধিক বৃষ্টি হয়, এর ফলে সকল আনাচেকানাচে ঘাস জন্মাতে
শুরু করে এবং এর সাথে অনেক
ধরনের বিষাক্ত পোকামাকড়
এই সকল ঘাস-লতা-পাতাতে আশ্রয় নেয়। সেই
সকল বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ ঘাসের সাথে গরু-মহিষএর শরীরে প্রবেশ করে, যা তাদের দুধের
মধ্যে প্রভাব ফেলে।
তাই সেই সকল দুধ
স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও উপকারী নয় বরঞ্চ অপকারী। অনেকে আবার আয়ুর্বেদ
বিশ্বাস করেন না, তাদেরকে জানাই অনেক ডাক্তারেরাও এই
ঋতুতে দুধ এবং দই সম্পর্কিত বস্তু খাওয়া
নিষিদ্ধ বা যতটা সম্ভব
কম ব্যবহার করার পরামর্শ করেন। এই সময়ে দই খেলে পরিপাকতন্ত্রের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে কারণ দইয়ে অ্যাসিড থাকায় নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। আয়ুর্বেদ অনুসারে, শ্রাবণ মাসে হজম প্রক্রিয়া ধীরগতির হয়, এমন পরিস্থিতিতে দই এবং দই
জাত যে কোন পদার্থ আমাদের হজমে
অসুবিধা সৃষ্টি করতে
পারে। এই ব্যাপারে ৩১/০৭/২০২৩
তে প্রকাশিত মেডিকভার হস্পিটালের একটি প্রতিবেদন পড়ে দেখতে পারেন, লিঙ্ক টা দিলাম
https://www.medicoverhospitals.in/articles/foods-to-avoid-in-rainy-season#:~:text=Dairy%20products%2C%20especially%20unpasteurized%20milk,dairy%20products%20from%20reliable%20brands.
এইবার
আসি ধর্মীয় বিশ্বাস কি বলে……
সেই
জন্যেই হয়তো প্রাচীন কালে এই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় বা শিবলিঙ্গের উপর দুধ ঢালার
প্রচলন করা হয়। এবারে প্রশ্ন করতে পারেন কেন শিবকে সেই বিষাক্ত দুধ ঢালা হবে? আশাকরি
সমুদ্র মন্থনের সেই পৌরাণিক কাহিনী সকলেই জানেন, সেই সময় অমৃত নির্গত হওয়ার পুর্বে
নির্গত হয়েছিল সেই প্রাণনাশি গরল বা বিষ, এর প্রভাবে যখন প্রকৃতি নাশের সম্মুখীন তখন
দেবতাদের অনুরোধে দেবাদিদেব মহাদেব সেই গরলকে আকন্ঠ পান করে বিশ্বকে রক্ষা করেন আর
সেই থেকে তাঁর নাম হয় নীলকন্ঠ। এবারে শ্রাবণ মাসে এই বিশ্বাসে শিবের মাথায় দুধ ঢালা
হয় যাতে শিব দুধের সেই সব বিষাক্ত প্রভাব দুর করে প্রকৃতিকে রক্ষা একমাত্র শিবই করতে
পারেন।
তবে
এ খবরে হয়তো অনেকের মনে কিছু আশ্বাস পেতে পারেন, শিবের মাথায় ঢেলে দেওয়া সেই সব দুধ বা দুধ জাতীয় পদার্থ একটি বাসনে সংগ্রহ করা
হয় এবং ভক্তদের প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় কিন্তু যেসব মন্দিরে প্রচুর পরিমাণে দুধ ঢালা হয় দেই সকল অনেক জায়গায় আজকাল ক্ষীর বা অন্যান্য মিষ্ট দ্রব্য তৈরি করে প্রসাদ
হিসেবে দেওয়া হয় যেন প্রসাদের অপচয় না হয়।
আরেকটি
কারণ আছে শিবের মাথায় দুধ দই ঘি মধু ইত্যাদি ঢালার, শুধু শিব নয় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে
যেসকল মন্দির আছে তার অধিকাংশতেই পাথরের প্রতিমা বিদ্যমান, এবারে খোঁজ নিয়ে দেখুন সেই
সকল প্রতিমা অভিষেক-শৃঙ্গারের সময় এই সকল পদার্থ ছাড়াও আরো অনেক কিছু দিয়ে স্নান
করানো হয়। এর পিছনে কিন্তু আছে এক বৈজ্ঞানিক যুক্তি। বৈজ্ঞানিকদের মতে এই সকল প্রক্রিয়ার
কারণেই সেই সকল প্রতিমা ও শিবলিঙ্গ হাজার হাজার বছর পরও আজ বিদ্যমান আছে। আবহবিকার বা
weathering of rocks সম্বন্ধে আপনারা সকলেই জানেন, এই দুধ,দই,ঘি মধু আবহবিকার থেকে প্রতিমা ও শিবলিঙ্গ গুলিকে আজ অবদি
রক্ষা করে আসছে, এ দেবাশীষ চক্রবর্ত্তীর মত নয় বৈজ্ঞানিকদের ধারণা। খোঁজ নিয়ে দেখুন সেই একই সময়ের তৈরি করা যে সকল মুর্ত্তি অলংকরণের জন্যে নির্মাণ করা হয়ে ছিল বিভিন্ন
মন্দিরের গায়ে বা অন্যান্য রাজপ্রাসাদে, আজ সেই গুলি ভঙ্গুর বা ধ্বংশপ্রাপ্ত অবস্থায় আছে।
আমাদের স্বভাব আমরা আমাদের সনাতন শাস্ত্রের সকল কিছু ভালোভাবে না জেনেই হই-হুল্লোড় শুরু করে
দেই ,অথচ নিজেরা একটু চিন্তা করলেই এর সমাধানে আসা যায়। বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্ম ব্যবস্থায়
প্রাচীন ঋষি মুনিরা এমন কিছু করে যান নি যা অবাস্তব। সেই সব ব্যাক্তিগন আমাদের চাইতে
কিছু অংশে কম জ্ঞানী যে ছিলেন না তার বিস্তর প্রমাণ আছে এমনকি পাশ্চাত্য ও সে বিষয়ে
একমত। আয়ুর্বেদের অধিকাংশ বিষয় আজকাল বিদেশী চিকিৎসকেরা অনুসরণ করছেন, দুর্ভাগ্যের
কথা সেই সব প্রাচীন বিদ্যা আমাদের কাছে অবহেলিত তাই তো আমাদের এই অবস্থা। যে যা বলে
তার বিচার না করে আমরাও সেই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে চলি।
যে
বিষয় আমাকে সবচাইতে ব্যাথিত করে সে হল যে কেন সনাতন ধর্মকেই বারংবার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় তার
আচার অনুষ্ঠানের যথার্ততা প্রমাণ করতে? বিশ্বের এই প্রাচীনতম ব্যবস্থায় প্রত্যেকটি
করনীয় অনুষ্ঠানের পিছনে প্রশ্ন করলে তার যথাযত উত্তর পাওয়া যাবে। আর যেসকল বিষয়ে তার সঠিক উত্তর
নাই সে কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু নয়, আর সেই সকল কুসংস্কার বিশ্বের সকল প্রান্তে সকল ধর্মে আছে মিলিয়ে নিবেন।
‘সর্বে ভবন্তু সুখিন, সর্বে সন্তু নিরাময়া, সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু, মা কশ্চিদ দুঃখ মাপ্নুয়াত।।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ হরি ওম তৎ সৎ শ্রী রামকৃষ্ণায় অর্পণমস্তু