আজ ১৯শে মে, অনেকের কাছে আজকের
দিনটি অন্যান্য দিনের মতো সাধারণ দিন। কিন্তু তা ভাবলে বোধহয় নিজেকে অপরাধী সাজানো হবে, কিন্তু কি আজ? ভাষা দিবস ভাবলে আমাদের কাছে ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিনটি মনে হয়, কিন্তু আজকের দিনের ও যে অনেক গুরুত্ব!!! বিশেষ করে প্রতিটি
বাঙ্গালীদের। এই তথ্য অনেকের কাছে অজানা। আজকের দিনের ইতিহাস হয়তো অনেকেই জানেন না। কারন এই
দিনটির প্রচার তেমন হয়নি কোন ও ভাবে। আসুন জেনে যেই কি ঘটেছিল আজকের দিনে... শুরু
করি প্রথম থেকে...
অক্টোবর ১৯৬০, আসাম বিধানসভায় আসামের সরকারি ভাষা হিসেবে অসমিয়া ভাষাকে
স্বীকৃতি দিয়ে বিল পাস হয়। যার ফলে সবাইকে পড়তে হবে অসমিয়া ভাষায়। এই ঘোষণাকে সহজে
মেনে নিতে পারেননি বরাকের অগুনিত বাঙালিরা।
শুরু হয় এর প্রতিবাদ, যার ফলে ১৯৬১
সালের ফেব্রুয়ারিতে গঠিত হয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ। শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। দাবী উঠে বাংলাকে রাজ্যস্তরে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার।
শুরু হয় বরাক সমস্ত উপত্যকা জুড়ে
প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন। সেই আন্দোলন দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও কাছাড়ে।তারপর এল সেই মর্মান্তিক দিন। ১৯৬১ সালের ১৯ মে শুরু
হলো বাংলা ভাষার দাবিতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন। সেদিন আন্দোলনে শরিক হতে শিলচর স্টেশনে সমগ্র কাছাড়ের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই দলে দলে
অনেক নর-নারী এসে জমা হয়েছিলেন। দুপুরের প্রখর রোদের জ্বালা তুচ্ছ করে দলে দলে
কিশোর-কিশোরী, তরুণ–তরুণীরা ও বয়স্ক নারী-পুরুষেরা রেল লাইনের ওপর অবস্থান
করছিলেন, ক্ষুধায় তৃষ্ণায় অনেকেই তখন কাতর তবুও চলছিল অবস্থান ধর্মঘট। সবার মুখে
মুখে তখন গুঞ্জরিত হয়েছিল বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে নানা স্লোগান। কথা ছিল বিকেল
চারটার মধ্যে এই সত্যাগ্রহ আন্দোলন শেষ হওয়ার । কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে বিকেল
দুইটা পয়ত্রিশ মিনিটে বিনা সতর্কতা বাণী ছাড়া আধাসামরিক বাহিনী অতর্কিতে গুলিবর্ষণ শুরু করে
নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর। সেখানেই শহীদ হন আন্দোলনে যোগ দিতে আসা অসংখ্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে ১১ জন তরুণ-তরুণী আহত হন অর্ধশতাধিক। অবস্থার
অবনতি দেখে রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত পূর্ব সিদ্ধান্ত বাতিল করে আসামে বাংলাকে দ্বিতীয় রাজ্যভাষা হিসাবে ঘোষনা করেন। সেই একাদশ শহীদরা ছিলেন কুমারী কমলা ভট্টাচার্য
(ষোল বছরের তরুণী একমাত্র মহিলা শহীদ),
সুকমল
পুরকায়স্থ, কানাইলাল নিয়োগী, তরনী দেবনাথ, হিতেশ বিশ্বাস, শচীন্দ্র পাল, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, বীরেন্দ্র সূত্রধর,
সত্যেন্দ্র
দেব, সুনীল সরকার ও কুমুদ রঞ্জন
দাস।
আজকের এই দিনে আমি তাঁদের আত্মবলিদানের কথা মনে করে জানাই তাঁদের অমর আত্মার প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম।
চিত্র আমার তৈরি
No comments:
Post a Comment