বদ্রীনাথ মন্দির
বিখ্যাত বদ্রীনাথ মন্দিরটি উত্তর ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চামোলি জেলায় গাড়ওয়াল পার্বত্য অঞ্চলে অলকানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। প্রাচীন বৈদিক ধর্মগ্রন্থগুলিতে এই মন্দিরের প্রধান দেবতা বদ্রীনাথের উল্লেখ আছে, যা থেকে বোঝা যায়। যে বৈদিক যুগে এই মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল।গর্ভগৃহে বদ্রীনারায়ণের যে মূর্ত্তি টি আছে তা প্রায় ৩.৩ফুট উচ্চতার, কষ্টি পাথরের বিগ্রহ। একটি বদ্রী গাছের তলায় সোনার চাঁদোয়ার নীচে রাখা।বদ্রীনারায়ণের মূর্তির উপরের দুই হাতে শঙ্খ ও চক্র আর নীচের দুই হাত যোগ মুদ্রায় । শোনা যায় ৯ম শতাব্দীতে আদি শঙ্করাচার্য প্রথম বদ্রীনাথকে একটি তীর্থস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ৮১৪ থেকে ৮২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছর তিনি এই অঞ্চলে ছিলেন। কথিত আছে বদ্রীনাথের মুর্তিটিকে অসুরের হাত থেকে রক্ষার জন্যে মন্দিরের পুরোহিতরা অলকানন্দার জলের তলায় লুকিয়ে রেখেছিলেন কিন্তু পরে সেই জায়গাটী ভুলে যাওয়ায় মুর্তি উদ্ধার সম্ভব হয় নি, যোগাবলে শঙ্করাচার্য এই বদ্রীনাথের মূর্তিটির সন্ধান পান এবং তিনিই অলকানন্দা নদী থেকে উদ্ধার করে তপ্তকুণ্ড উষ্ণ প্রস্রবণের কাছে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। পুরাণ অনুসারে, এক ঋষি লক্ষ্মীকে বিষ্ণুর পাদসেবা করতে দেখেন, এবং তাই দেখে তিনি বিষ্ণুকে তিরস্কার করেছিলেন। সেই জন্য বিষ্ণু বদ্রীনাথে এসে দীর্ঘ সময় পদ্মাসনে বসে তপস্যায় রত ছিলেন। তখন হিমালয়ের একটি অঞ্চলে মাংসভুক সন্ন্যাসী ও অসাধু লোকজনেরা বাস করত, কিন্তু এই স্থানটি তার থেকে দূরে ছিল বলে বিষ্ণু ধ্যানের জন্য এই স্থানটিকেই ঠিক করেন। ধ্যানের সময় বিষ্ণু এখানকার দারুণ শীত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তার স্ত্রী লক্ষ্মী একটি বদ্রী গাছের আকারে তাকে রক্ষা করেন। লক্ষ্মীর ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু এই অঞ্চলের নাম দেন বদরিকাশ্রম। আবার বিষ্ণুপুরাণে বদ্রীনাথের উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি গল্প আছে। সেখানে আছে , ধর্মের দুই পুত্র ছিল – নর ও নারায়ণ, এঁরা হিমালয়ে পর্বতরূপ ধারণ করেছিলেন। তারা ধর্মপ্রচারে জন্য এই স্থানকে নির্বাচিত করেন এবং হিমালয়ের বিভিন্ন বৃহৎ উপত্যকাগুলিকে বিবাহ করেছিলেন। আশ্রম স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গার অনুসন্ধানে এসে তারা পঞ্চবদ্রীর অন্যান্য চার বদ্রীর সন্ধান পান। এগুলি হল বৃধাবদ্রী, যোগবদ্রী, ধ্যানবদ্রী ও ভবিষবদ্রী। অবশেষে তারা অলকানন্দা নদী পেরিয়ে উষ্ণ ও শীতল প্রস্রবনের সন্ধান পান এবং এই স্থানটির নামকরণ করেন বদ্রীবিশাল। ভাগবত পুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও মহাভারত-এর মতো প্রাচীন গ্রন্থেও কিন্তু বদ্রীনাথ মন্দিরের উল্লেখ আছে, ভাগবত পুরাণ অনুসারে, বদরিকাশ্রমে ভগবান বিষ্ণু নর ও নারায়ণ ঋষি রূপে অবতার গ্রহণ করেছিলেন এবং সকল জীবের কল্যাণের জন্য তাঁরা এখানে স্মরণাতীত কাল থেকে এখানে তপস্যা করেন। স্কন্দপুরাণ-র বলা হয়েছে, স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল লোকে অনেক পবিত্র তীর্থ আছে। কিন্তু বদ্রীনাথের মতো পবিত্র তীর্থ কোথাও নেই। পদ্মপুরাণ-এ বদ্রীনাথের আশেপাশের এলাকাটিকে আধ্যাত্মিক সম্পদে পরিপূর্ণ বলে উল্লেখ আছে। মহাভারতে পাওয়া যায় যে অন্যান্য তীর্থে মোক্ষ অর্জন করতে হলে ধর্মানুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। কিন্তু বদ্রীনাথের কাছে এলেই ভক্তের মোক্ষ লাভ হয়ে যায়।
জানেন কি? বদ্রীনাথে শঙ্খ বাজানো নিষিদ্ধ!!!! কেন?
পুরাকালে হিমালয়ের পাদদেশে ঋষি-মুনিদের উপর অসুরদের অত্যাচার খুব বৃদ্ধি পায়। প্রায়ই অসুরেরা ঋষি মুনিদের আক্রমন করে তাঁদের আশ্রম লন্ডভন্ড করে বির্বিচারে হত্যা করতে লাগলো। শত শত ঋষি মুনিদের বন্দি করে দাস বানিয়ে রাখতো। তখন সকল ঋষি মুনিরা অগস্ত্য মুনির শরণাপন্ন হয়েছিলেন। অগস্ত্য মুনি তখন অসুরদের নিধনের জন্যে দেবী দুর্গা কে আহ্বান করেন। অগস্ত্যমুনির প্রার্থনায় দেবী কুষ্মান্ডা রূপে আবির্ভাব হয়ে অসুর নিধন শুরু করেন, একে একে সকল অসুর দেবীর হাতে পরাজিত ও নিহত হয় কিন্তু আতাপি ও বাতাপি নামক দুই অসুর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আতাপি অলকানন্দা নদীতে গিয়ে আত্মগোপন করে আর বাতাপি বদ্রীনাথ ধামে গিয়ে শঙ্খের ভিতরে লুকিয়ে পরে সেই থেকে বদ্রীনাথ ধামে শঙ্খ বাজানো নিষিদ্ধ হয় এবং সেই প্রথা আজও চলে আসছে। এই এক মাত্র মন্দির যেখানে শঙ্খ বাজানো যায় না।