Thursday 13 October 2022

করবা চৌথ-সনাতন ধর্মেরই এক অন্যতম উৎসব

 রবা চৌথ

এই উৎসবটি মুলতঃ সনাতন ধর্মের এক অন্যতম উৎসব যা মহিলারা তাঁদের স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় করে থাকেন। সৌর কার্তিক মাসের পূর্ণিমার পর কৃষ্ণা চতুর্থীতে পালিত হয় এই উৎসব। এই উৎসব বিশেষ ভাবে উত্তর ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত সহ দিল্লী,রাজস্থান,পাঞ্জাব, হরিয়ানা বিহার, মধ্যপ্রদেশে ব্যাপক ভাবে পালিত হয়। এইদিনে মহিলারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাসে থেকে সন্ধ্যায় চাঁদ দর্শন করে উপবাস ভঙ্গ করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা সুর্যোদয়ের আগেই কিছু খাবার খেয়ে নেন যা সাধারণতঃ তাঁদের শাশুরিরা রান্না করে থাকেন, আর সেই বিশেষ খাবারকে ‘সার্গি’ বলা হয়। এতে রান্না করা খাবারের সাথে শুকনো ফল ও মিষ্টি ও থাকে।
 করবা চৌথের  সন্ধ্যায় শুরু হয় আসল উৎসব। গয়না আর নতুন পোশাকে সেজে, মেহেন্দিতে হাত রাঙিয়ে, এক জায়গায় জড়ো হন সবাই, যাঁরা ব্রত রেখেছেন। ‘করবা চৌথ’-এর পোশাক সাধারণত লাল, হলুদ বা সোনালি রঙের হয়। গান গাওয়া হয় একসঙ্গে। কোনও প্রবীণা বা কোনও পুরোহিত ব্রতকথা পাঠ করেন। আকাশে চতুর্থীর চাঁদ দেখা গেলে তা চালুনির মধ্যে দিয়ে দেখতে হয়। সঙ্গে থাকে প্রদীপ। চন্দ্রদেবতার কাছে স্বামীর মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন স্ত্রী। তারপর সেই প্রদীপের আলোয় দেখতে হয় স্বামীর মুখ। বরণডালা থেকে জলের পাত্র নিয়ে স্ত্রীর মুখে ধরেন স্বামী। সেই জল পান করেই ভঙ্গ হয় উপবাস।

এই ব্রত ছিল মূলত সৈন্যদের স্ত্রীদের জন্য। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সমাজের অন্য স্তরে। এখন তো সার্বিকভাবেই বিবাহিত মহিলারা এই ব্রত পালন করেন স্বামীর মঙ্গল কামনায়। সন্তান এবং স্ত্রীকে রেখে স্বামী যেতেন দূর দেশে, যুদ্ধক্ষেত্রে। পেশায় সৈন্য স্বামীর জন্য উদ্বেগের প্রহর গুনতেন স্ত্রী। তাঁর মঙ্গল কামনায় বিশেষ উপবাস ব্রত করতেন কার্তিক মাসের প্রথম পূর্ণিমার পরে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে।
এক মতবাদ অনুযায়ী ভারতীয় কৃষি সভ্যতার সঙ্গে এই ব্রত জড়িয়ে আছে। এই সময়েই রবি শস্যের চাষ শুরু হয়। বপন করা হয় গমের দানা। আর যে বড় পাত্রে গমের দানা রাখা হয়, তাকেও ‘করবা’ বলা হয়। আবার অনেকের মতে যেহেতু ‘করবা’ শব্দের অর্থ কড়াই এবং ‘চৌথ’ মানে চতুর্থী তিথি। তাই এই দুয়ে মিলে ব্রতের নামকরণ। এই ব্রতে কড়াইয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা ব্রত রাখেন, তাঁরা নতুন কড়াই কেনেন। আর সেখানে রাখেন নতুন কাপড়, কাচের চুড়ি এবং বাড়িতে তৈরি মুখরোচক খাবার ও মিষ্টি। এইসময়ে একে অন্যের সঙ্গে সেই কড়াই আদানপ্রদানও করে থাকেন।
‘করবা চৌথ’ ব্রতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু পৌরাণিক কাহিনী । কথিত আছে যে রাণী বীরবতী তাঁর পিতৃগৃহে এই ব্রত পালন করছিলেন। কিন্তু উপবাসরত বোনের কষ্ট হচ্ছে ভেবে তাঁর সাত ভাই অশ্বত্থ গাছে আয়না রেখে দিলেন। যাতে মনে হয়, আকাশে চাঁদ উঠেছে। আয়নাকে চাঁদ ভেবে ভুল করে উপবাস ভঙ্গ করেন বীরবতী। তার পরেই স্বামীর মৃত্যুর খবর পান। শোকে মুহ্যমান হলেও বীরবতী আবার ‘করবা চৌথ’ পালন করে তাঁর স্বামীর প্রাণভিক্ষা করেন। প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে যমরাজ ফিরিয়ে দেন তাঁর স্বামীর প্রাণ।
আবার অনেক লোককথা অনুযায়ী, ‘করবা’ নামের এক পতিব্রতা নারী ছিলেন। তিনি যমরাজের মুখোমুখি হয়ে কুমিরের গ্রাস থেকে উদ্ধার করেছিলেন স্বামীকে। তাঁর নাম অনুসারে এই ব্রতের নামকরণ হয় করবা চৌথ।

No comments:

Post a Comment

কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...