Thursday, 12 August 2021

নাগপঞ্চমী

 প্রসঙ্গঃ নাগপঞ্চমী

আগামীকাল শ্রীশ্রীনাগপঞ্চমী, আসুন জেনে নেই এই সম্বন্ধে কিছু তথ্য
শ্রাবণ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে পালিত হয় নাগ পঞ্চমী। এই উৎসব নাগ দেবতাকে উৎসর্গীকৃত। এদিন নাগ দেবতার পুজো করা হয় ও উপোস রাখা হয়। ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী নাগ পঞ্চমীর দিনে নাগ দেবতার আরাধনা করলে একাধিক শুভ ফল লাভ করা যায়। বিশেষতঃ যাদের জন্মছকে কালসর্প যোগ আছে তাঁরা এই দিনে অষ্টনাগের পূজা দুধ কলা দ্বারা করলে বিশেষ লাভবান হতে পারেন, জীবনের দুঃখ কষ্ট দূর হয়। অনন্ত, বাসুকি, তক্ষক, কর্কোটক, পদ্ম, মহপদ্ম, শঙ্খপাল ও কুলিক নামক আটটি নাগকে এই পুজোর দেবতা মনে করা হয়। পুরাণ মতে ও পাওয়া যায় , নাগ লোক বা পাতাল থেকে সমস্ত সর্পকুল এইদিন মর্তের মানুষদের আশীর্বাদ করে থাকেন। জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি, অভাব অনটন ঘোচাতে সাপেদের এই আশীর্বাদ অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ বলে অনেকের ধারণা। এইদিনে নাগদেবতার মূর্তির সামনে রাখা হয় দুধ, চন্দন, হলুদ ও সিঁদুর। মূর্তির সামনে জ্বালানো হয় কর্পূরের প্রদীপ। তবে ধূনা জ্বালানো উচিত নয়। পাঠ করা হয় নাগপঞ্চমী ব্রতকথা নাগ পঞ্চমীর দিন পুজোর সময় শিবের পঞ্চামৃত পান করা কার্যকরী ফল দেয় বলে অনেকের মত। এতে বহু বাধা বাপত্তি , রোগ দুর্ভোগ কেটে যায়।
গরুড় পুরাণ’ মতে, ব্রহ্মার পুত্র মহামুনি কাশ্যপের তৃতীয় স্ত্রী কদ্রু ছিলেন নাগ বংশের কন্যা। তিনিই নাগকুলের মাতা। কাশ্যপের আরেক স্ত্রী বিনতা জন্ম দেন গরুড়ের। বিনতাকে সহ্য করতে পারতেন না কদ্রু । ছোট থেকেই গরুড় মায়ের কষ্ট দেখে প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি সর্পকুল ধ্বংস করবেন। কিন্তু পরে তা থেকে বিরত হন। কিন্তু সর্পকুলের সঙ্গে গরুড়ের শত্রুতা থেকেই যায়। তবে এই পুণ্য জন্মের কারণে নাগকুলও পুজো পেতে থাকে।
মহাভারত থেকে জানা যায়, কুরু বংশীয় রাজা পরিক্ষিৎ তক্ষক নাগের আঘাতে মারা গেলে তাঁর পুত্র জন্মেজয় পৃথিবী সর্পশূন্য করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। তিনি এক সর্পযজ্ঞ শুরু করেন, যেখানে মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে কোটি কোটি সাপ যজ্ঞানলে পড়ে মারা যেতে থাকে। এই সময়ে জরৎকারু মুনির পুত্র আস্তিক এই নিষ্ঠুর যজ্ঞ বন্ধ করতে জন্মেজয়ের কাছে পৌঁছান এবং তাঁরই হস্তক্ষেপে জন্মেজয় এই ভয়ঙ্কর কর্ম থেকে নিরস্ত হন। লৌকিক বিশ্বাস মতে, জরৎকারুর স্ত্রী মা মনসা। যে দিনটিতে সর্পযজ্ঞ বন্ধ হয়, সেই দিনটি ছিল শ্রাবণের শুক্লপঞ্চমী। সেই থেকেই এই পূজার প্রচলন।
সঙ্কলক
শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী

Saturday, 17 July 2021

বদ্রীনাথ মন্দির

বদ্রীনাথ মন্দির

সঙ্কলকঃ-শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী

বিখ্যাত বদ্রীনাথ মন্দিরটি উত্তর ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চামোলি জেলায় গাড়ওয়াল পার্বত্য অঞ্চলে অলকানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত।  প্রাচীন বৈদিক ধর্মগ্রন্থগুলিতে এই মন্দিরের প্রধান দেবতা বদ্রীনাথের উল্লেখ আছে, যা থেকে বোঝা যায়। যে বৈদিক যুগে এই মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল।গর্ভগৃহে  বদ্রীনারায়ণের  যে মূর্ত্তি টি আছে তা প্রায় ৩.৩ফুট উচ্চতার, কষ্টি পাথরের বিগ্রহ। একটি বদ্রী গাছের তলায় সোনার চাঁদোয়ার নীচে রাখা।বদ্রীনারায়ণের মূর্তির উপরের দুই হাতে শঙ্খ ও চক্র আর নীচের দুই হাত যোগ মুদ্রায় । শোনা যায় ৯ম শতাব্দীতে আদি শঙ্করাচার্য প্রথম বদ্রীনাথকে একটি তীর্থস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ৮১৪ থেকে ৮২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছর তিনি এই অঞ্চলে ছিলেন। কথিত আছে বদ্রীনাথের মুর্তিটিকে অসুরের হাত থেকে রক্ষার জন্যে মন্দিরের পুরোহিতরা অলকানন্দার জলের তলায় লুকিয়ে রেখেছিলেন কিন্তু পরে সেই জায়গাটী ভুলে যাওয়ায় মুর্তি উদ্ধার সম্ভব হয় নি, যোগাবলে শঙ্করাচার্য এই  বদ্রীনাথের মূর্তিটির সন্ধান পান এবং  তিনিই অলকানন্দা নদী থেকে উদ্ধার করে তপ্তকুণ্ড উষ্ণ প্রস্রবণের কাছে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। পুরাণ অনুসারে, এক ঋষি লক্ষ্মীকে বিষ্ণুর পাদসেবা করতে দেখেন, এবং  তাই দেখে তিনি বিষ্ণুকে তিরস্কার করেছিলেন। সেই জন্য বিষ্ণু বদ্রীনাথে এসে দীর্ঘ সময় পদ্মাসনে বসে তপস্যায় রত ছিলেন। তখন হিমালয়ের একটি অঞ্চলে মাংসভুক সন্ন্যাসী ও অসাধু লোকজনেরা বাস করত, কিন্তু এই স্থানটি তার থেকে দূরে ছিল বলে বিষ্ণু ধ্যানের জন্য এই স্থানটিকেই ঠিক করেন। ধ্যানের সময় বিষ্ণু এখানকার দারুণ শীত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তার স্ত্রী লক্ষ্মী একটি বদ্রী গাছের আকারে তাকে রক্ষা করেন। লক্ষ্মীর ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু এই অঞ্চলের নাম দেন বদরিকাশ্রম। আবার  বিষ্ণুপুরাণে বদ্রীনাথের উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি গল্প আছে। সেখানে আছে , ধর্মের দুই পুত্র ছিল – নর ও নারায়ণ, এঁরা হিমালয়ে পর্বতরূপ ধারণ করেছিলেন। তারা ধর্মপ্রচারে জন্য এই স্থানকে নির্বাচিত করেন এবং হিমালয়ের বিভিন্ন  বৃহৎ উপত্যকাগুলিকে বিবাহ করেছিলেন। আশ্রম স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গার অনুসন্ধানে এসে তারা পঞ্চবদ্রীর অন্যান্য চার বদ্রীর সন্ধান পান।  এগুলি হল বৃধাবদ্রী, যোগবদ্রী, ধ্যানবদ্রী ও ভবিষবদ্রী। অবশেষে তারা অলকানন্দা নদী পেরিয়ে উষ্ণ ও শীতল প্রস্রবনের সন্ধান পান এবং এই স্থানটির নামকরণ করেন বদ্রীবিশাল। ভাগবত পুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও মহাভারত-এর মতো প্রাচীন গ্রন্থেও কিন্তু বদ্রীনাথ মন্দিরের উল্লেখ আছে, ভাগবত পুরাণ অনুসারে, বদরিকাশ্রমে ভগবান বিষ্ণু নর ও নারায়ণ ঋষি রূপে অবতার গ্রহণ করেছিলেন এবং সকল জীবের কল্যাণের জন্য তাঁরা এখানে স্মরণাতীত কাল থেকে এখানে  তপস্যা করেন। স্কন্দপুরাণ-র বলা হয়েছে, স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল লোকে অনেক পবিত্র তীর্থ আছে। কিন্তু বদ্রীনাথের মতো পবিত্র তীর্থ কোথাও নেই। পদ্মপুরাণ-এ বদ্রীনাথের আশেপাশের এলাকাটিকে আধ্যাত্মিক সম্পদে পরিপূর্ণ বলে উল্লেখ আছে।  মহাভারতে পাওয়া যায় যে  অন্যান্য তীর্থে মোক্ষ অর্জন করতে হলে ধর্মানুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। কিন্তু বদ্রীনাথের কাছে এলেই ভক্তের মোক্ষ লাভ হয়ে যায়।



জানেন কি? বদ্রীনাথে শঙ্খ বাজানো নিষিদ্ধ!!!! কেন?

পুরাকালে হিমালয়ের পাদদেশে ঋষি-মুনিদের উপর অসুরদের অত্যাচার খুব বৃদ্ধি পায়। প্রায়ই অসুরেরা ঋষি মুনিদের আক্রমন করে তাঁদের আশ্রম লন্ডভন্ড করে বির্বিচারে হত্যা করতে লাগলো। শত শত ঋষি মুনিদের বন্দি করে দাস বানিয়ে রাখতো। তখন সকল ঋষি মুনিরা অগস্ত্য মুনির শরণাপন্ন হয়েছিলেন। অগস্ত্য মুনি তখন অসুরদের নিধনের জন্যে দেবী দুর্গা কে আহ্বান করেন। অগস্ত্যমুনির প্রার্থনায় দেবী কুষ্মান্ডা রূপে আবির্ভাব হয়ে অসুর নিধন শুরু করেন, একে একে সকল অসুর দেবীর হাতে পরাজিত ও নিহত হয় কিন্তু আতাপি ও বাতাপি নামক দুই অসুর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আতাপি অলকানন্দা নদীতে গিয়ে আত্মগোপন করে আর বাতাপি বদ্রীনাথ ধামে গিয়ে শঙ্খের ভিতরে লুকিয়ে পরে সেই থেকে বদ্রীনাথ ধামে শঙ্খ বাজানো নিষিদ্ধ হয় এবং সেই প্রথা আজও চলে আসছে। এই এক মাত্র মন্দির যেখানে শঙ্খ বাজানো যায় না।

সমাপ্ত

চিত্র সৌজন্যেঃ- গুগোল চিত্র


Wednesday, 14 July 2021

জয় মা বিপদতারিণী বা বিপদনাশিনী!!

 আসুন জেনে নেই কে এই দেবী?


যিনি সমগ্র বিপদ থেকে রক্ষা করেন বা যিনি বিপদ সমূহ নাশ করেন তিনিই বিপদতারিনী। যিনি দুর্গা তিনিই বিপদতারিনী, তিনিই আবার পুরাণে কৌশিকীদেবী নামে খ্যাতা, আবার তিনিই জয়দুর্গা। তিনি দেবী সঙ্কটনাশিনী এবং দেবী দুর্গার ১০৮ রূপের এক অন্যতম।, ভক্তেরা মূলত বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য এই দেবীর পূজা করেন। বিশ্বাস অনুযায়ী, বিপত্তারিণী ব্রত পালন করলে সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় এবং সমস্ত বিপদ, বাধা বিঘ্ন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আমরা বিপদতারিণী বা বিপদনাশিনী দেবীর যে ধ্যান মন্ত্র পাঠ করি তা হল ‘ওঁ কালাভ্রাভাং কটাক্ষৈররিকুলভয়দাং মৌলীবন্ধেন্দুরেখাম্ । শঙ্খং চক্রং কৃপাণং ত্রিশিখমপি করৈরুদ্বহন্তীং ত্রিনেত্রাম্ । সিংহাস্কন্ধাধিরুঢ়াং ত্রিভুবন – মখিলং তেজসা পুরয়ন্তীম্ । ধ্যায়েদ্ দুর্গাং জয়াখ্যাং ত্রিদশপরিবৃতাং সেবিতাং সিদ্ধিকামৈঃ ।
এখানে, কালাভ্র আভাং এর অর্থ কিন্তু দুই প্রকার হয়, একটি স্বর্ণ বর্ণা অপরটি কালো মেঘের ন্যায়), কটাক্ষে শত্রুকূলত্রাসিণী, কপালে চন্দ্রকলা শোভিতা, চারি হস্তে শঙ্খ, চক্র, খড়্গ ও ত্রিশূল ধারিণী, ত্রিনয়না, সিংহোপরি সংস্থিতা, সমগ্র ত্রিভুবন স্বীয় তেজে পূর্ণকারিণী, দেবগণ-পরিবৃতা।সিদ্ধসঙ্ঘ সেবিতা জয় দুর্গার ধ্যান করি।
এই জয়দুর্গা বা কৌশিকীদেবী ( এই কৌশিকীদেবীর উৎপত্তি হয়েছিলো পরমেশ্বর ভগবান শিবের অর্ধাঙ্গিনী দেবী পার্বতীর কৃষ্ণ কোশ থেকে- তাই তিনি কৌশিকী), বিপদতারিণীদুর্গা যিনি পঞ্চদেবতার একজন। ভারতবর্ষে বিভিন্ন স্থানে এই দেবীর অনেক রূপ দেখা যায়, উত্তর ভারতে অষ্টাদশ রূপের ধ্যান ও পূজা হয়, আবার কোথাও তাঁকে দশভুজা রূপে পূজা হয়, কোথাও আবার চতুর্ভুজা স্বর্ণ বর্ণা আবার কোথাও কৃষ্ণ বর্ণা রূপে পূজিতা হয় । আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষ দ্বিতীয়ার পরের মঙ্গল ও শনিবারে মায়ের পূজো হয় । যেখানে তেরো প্রকার ফল, পুস্প, মিষ্টি, পান সুপারী দিয়ে মাকে পূজা করা হয়। তবে, বাংলাদেশে দেবীর পূজার নিয়ম বিধি সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে গ্রামাঞ্চলে বিপত্তারিণী পূজা চলে চারদিন ধরে। প্রথম দিনে দেবীর “আরাধনা” (পূজা) করা হয়। মেয়েরা দণ্ডী কাটেন, তারপর দুই রাত্রি ধরে রাতে বাংলা লোকগান, ভজন ও কীর্তন চলে। চতুর্থ দিনে হয় বিসর্জন। বিপত্তারিণী পূজা উপলক্ষে মেয়েরা উপবাস করেন। প্রথা অনুসারে হাতে “তাগা” (এক গুচ্ছ পবিত্র লাল সুতো ও দূর্বাঘাস) বাধা হয়। কিন্তু কেন এই দেবীকে তেরো প্রকারের দ্রব্য দিয়ে পূজা করা হয়? তার কারণ কোন ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ নেই, এ হয়তো বা লোকাচার।
কিছু কিছু অঞ্চলে আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীতে, সন্তান কামনার জন্য পালন করা হয় ষষ্ঠীব্রত সেই ষষ্ঠীর নাম ‘কোঁড়া ষষ্ঠী’ বা ‘কার্দমী ষষ্ঠী’ বা ‘কর্দ্দমষষ্ঠী’। এই ষষ্ঠীব্রতের দিনে মায়েরা দেবী ষষ্ঠীকে তেরোটি ফুল, তেরোটি ফল, তেরোটি পান, তেরোটি সুপারি, তেরোটি দুর্বা দিয়ে পূজা করেন। সম্ভবতঃ সেখান থেকে এই তেরো ফল-ফুল-পান –সুপারী ইত্যাদি এই পূজায় অন্তর্গত হয়েছে যেহেতু এই দুই পূজার সময়কাল প্রায় এক। আবার অনেকে মনে করেন এই ষষ্ঠীদেবী আর মা বিপদ-তারিণী একই দেবী। তবে সে যাই হোক ভক্তের ভক্তিভাব স্ফুরণের জন্যে, শ্রদ্ধার জন্যে দেবীকে যে ভাবেই পূজা করা হোক না কেন, তিনি আমাদের আরাধ্যা হউন। ভক্তের ত্রাস দূর করে জগতকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বিপদন্মুক্ত করুন এই প্রার্থনা রাখি।
নীচের চিত্রগুলি দেবীর বিভিন্ন রূপের প্রকাশ, ভক্ত মানসে তিনি যেভাবে স্থান নিয়েছেন। উপরের ছবি আমাদের ঘরের দেবী কিন্তু নীচের ছবি গুলি গুগোল চিত্র থেকে সংগৃহীত
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সোনারপুর অঞ্চলের রাজপুরে বাবা দুলাল নামে এক ভক্তসাধক মায়ের বিপত্তারিণী রূপের সাধনা করেন ও তিনি মাকে সিংহবাহিনী চতুর্ভুজা কালী রূপে দর্শন করেন। সেই বাবা দুলালের সাধনা এখন সর্বজনবিদিত। রাজপুরের এই মা বিপত্তারিণী চন্ডীর মহিমা এখন প্রায় সকলেই জানেন।
এর মধ্যে আপনারা দেবীর কোনরূপে আরাধনা করেন?? বা আর অন্য কোন রূপ আছে কি? জানতে দেবেন।
সঙ্কলক
শ্রীদেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
সাধারনতঃ পঞ্জিকায় আমরা যে ছবি পাই

রাজপুরের বিপদতারিণী চন্ডী বাড়িতে মা



Saturday, 19 June 2021

দশহরা বা গঙ্গা পূজা

 দশহরা বা গঙ্গা পূজা






গামীকাল জ্যৈষ্ঠ  মাসের শুক্লা দশমী,  দশহরা বা গঙ্গা পূজা।এই দিনই রাজা ভগীরথের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মা গঙ্গা পৃথিবীতে নেমে আসেন। সেই দিনের তিথি ছিল জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা দশমী। স্কন্ধপুরাণে আছে এই দিনে গঙ্গায় স্নান করে, গঙ্গাকে দশটি ফুল, দশটি ফল ও দশটি প্রদীপ দিয়ে পুজো করলে আমাদের জ্ঞানে বা অজ্ঞানে করা দশটি পাপ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। দশ পাপ হরণ হয় বলেই এই তিথি কৃত্যের নাম দশহরা, এ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি।
আসুন দেখে নেই এই দশপ্রকার পাপ কি? কি? যা থেকে এই দিনে মুক্তিলাভ সম্ভব
পরদ্রব্য হরণ, অযথা হিংসা অর্থাৎ বৃথা প্রাণী হত্যা ও পরদার গমন অর্থাৎ অবৈধ প্রণয় এই তিনটি হলো আমাদের দেহগত পাপ। অহংকারী বাক্য, মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা এবং অসংবদ্ধ প্রলাপ বা বাজে বকা— এই চারটি হলো আমাদের বাক্যগত পাপ।মনে মনে পরের দ্রব্যের কামনা, পরের অনিষ্ট চিন্তা এবং মিথ্যার প্রতি আসক্তি— এই তিনটি হলো আমাদের মানসিক পাপ।
গঙ্গা নদীর বর্ণনা আমরা বৈদিক যুগ থেকেই পাই, পুরাণ মতে গঙ্গা স্বর্গের দেবী।তপস্যার দ্বারা এই দেবীকে মর্তে এনেছিলেন সগর রাজার বংশজ রাজা ভগীরথ, যিনি আবার ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ। পৌরাণিক আখ্যানে আছে সগর রাজার ছিলো ষাট হাজার পুত্র, কিন্তু সকলেই তাঁদের পাপকর্মের ফলে মহাসাধক কপিল মুনির অভিশাপে পড়েন এবং যোগবলে কপিলমুনি তাঁদের সকলকে ভস্ম করে দেন। কপিল মুনির অভিশাপে ভস্ম হলে,তাদের মুক্তিলাভের জন্য স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে আনতে দেবী গঙ্গার তপস্যা করতে করতে একে একে রাজা সগর, অসমঞ্জ, অংশুমান, দিলীপ রাজা দেহ ত্যাগ করেন,অবশেষে দিলীপ পুত্র ভগীরথ সফল হয়ে গঙ্গাকে মর্তে আনতে পারেন। সেইদিন ছিলো জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা দশমী।
বৈদিক যুগের কোনও এক সময়ে দশহরা তিথি থেকেই বৎসর গণনা শুরু হতো তাই দশহরা সেদিন নববর্ষের পূর্ণ মর্যাদায় ছিলো। দশহরার প্রধান কাজ হলো গঙ্গায় স্নান করা, কিন্তু যারা দূরে আছেন বা বিভিন্ন কারনে অক্ষম তাঁরা কি করবেন??? নিজের স্নানের জলে দু-তিন ফোঁটা গঙ্গা জল মিশিয়ে এই মন্ত্র
‘নমঃ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতী
নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু

পাঠ করুন, বিশ্বাস এই মন্ত্রের সাহায্যে গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু, ও কাবেরীকে স্মরণ করে স্নানের জলে এই নদীগুলির পবিত্রতা ও শুদ্ধতা এনে নিজের জীবন কে শান্তি ও সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ করা যায়। পরে হাতজোড় করে
‘নমঃ কুরুক্ষেত্র গয়া গঙ্গা প্রভাস পুষ্করিণী চ
তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি স্নানকালে ভবন্ত্বিহ’

এই বলে স্নান করে নিন, গঙ্গা স্নান হয়ে যাবে। অবশ্য এতে আস্থা থাকা চাই, কথায় আছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।
ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
৪ই আষাঢ়,১৪২৮বঙ্গাব্দ
১৯শে জুন,২০২১ইং
ছবিঃ-সৌজন্যেঃ গুগোল

Tuesday, 8 June 2021

সাবিত্রী চতুর্দ্দশী ব্রত


ছবিঃগুগল চিত্র

প্রসঙ্গঃ সাবিত্রী চতুর্দ্দশী ব্রত
আজ থেকে শুরু হয়েছে সাবিত্রী চতুর্দ্দশী ব্রত, এই তিনদিন দেবী সাবিত্রী, সাবিত্রী সত্যবান ও ধর্মরাজের পূজা হয়ে থাকে। সাবিত্রী চতুর্দ্দশী ব্রতকথা অনুযায়ী -- মদ্র দেশের রাজা ছিলেন অশ্বপতি এবং তাঁর স্ত্রী ছিলেন মালবী। তাঁদের কোন সন্তানাদি ছিলো না, তাই সন্তানের প্রত্যাশায় তাঁরা দেবীসাবিত্রীর আরাধনা করতে লাগলেন। সাবিত্রীদেবী খুশি হয়ে বর দিলেন এক কন্যা সন্তানের। সূর্যের অধিষ্ঠাত্রী সাবিত্রীদেবীর বরে জন্ম বলে কন্যার নাম রাখলেন সাবিত্রী। দেখতে দেখতে সাবিত্রী বিবাহযোগ্যা হয়ে উঠলেন। অশ্বপতি কন্যাকে নিজেই নিজের উপযুক্ত পাত্রের অন্বেষণ করতে বললেন। সাবিত্রী বিভিন্ন স্থান ঘুরে এসে পিতাকে জানালেন যে শাল্ব দেশের রাজা দ্যুমৎসেনের পুত্র সত্যবানকে তিনি মনে মনে স্বামী হিসেবে বরণ করেছেন। এবারে রাজা অশ্বপতি দেবর্ষি নারদের শরণাপন্ন হলেন সত্যবানের পরিচয় জানতে, এতে দেবর্ষি বলেন সত্যবান হলেন শাল্বদেশের রাজা দ্যুমৎসেন ও তাঁর স্ত্রী শৈব্যার একমাত্র পুত্র সন্তান ও শাল্বদেশের যুবরাজ, কিন্তু ঘটনাক্রমে দ্যুমৎসেন অন্ধ হয়ে গেলে তাঁর শত্রুরা তাঁকে রাজ্যচ্যুত করেন। এরফলে রাজা সপরিবারে বনবাসী হন এবং বনে এসে দ্যুমৎসেন সস্ত্রীক তপস্যা করতে থাকেন। সত্যবানও তাঁর মাতাপিতার সেবা করে তাপসের জীবনযাপন করতে শুরু করেন। বাল্যকালে সত্যবান ঘোড়া ভালোবাসতেন এবং মাটি দিয়ে অশ্বমূর্তি নির্মাণ করতেন। সে জন্য সত্যবানের অপর নাম চিত্রাশ্ব।রাজা অশ্বপতির এই ব্যাপারটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। তখন রাজা তাঁর পরামর্শ জানতে চাইলেন। তখন নারদ জানালেন আরো ভয়ানক কথা, সত্যবান সুদর্শন, সত্যবাদী, দাতা ও ব্রাহ্মণসেবী সত্যি কিন্তু তার আয়ু আর এক বছর। এক বছর পরই তার মৃত্যু ঘটবে। অশ্বপতি সে কথা শুনে কন্যাকে অন্য কোন পাত্রকে বরণ করতে বললেন। কিন্তু সাবিত্রী এতে রাজি হলেন না। সবিত্রী বললেন, ‘মনে মনে যাকে একবার স্বামী হিসেবে বরণ করে নিয়েছি। তিনিই আমার স্বামী। আমি আর অন্য কাউকে নিজের স্বামী হিসেবে বরণ করতে পারবো না।’ কন্যার যুক্তি মেনে নিলেন অশ্বপতি। সত্যবানের সঙ্গেই সাবিত্রীর বিয়ে হল। সাবিত্রী হিসাব রাখছিলেন, কখন এক বছর পূর্ণ হয়। অবশেষে যখন একবছর পূর্ণ হতে আর মাত্র চার দিন বাকী তখন তিনি উপবাস শুরু করলেন। যে দিন সত্যবানের মৃত্যুর দিন সেদিন সাবিত্রী সত্যবানের সাথে সাথে থাকলেন প্রতি মুহূর্ত। সে দিন সত্যবান বন থেকে কাঠ ও ফলমূল সংগ্রহ করতে বনের গভীরে যাচ্ছেন দেখে সাবিত্রীও তাঁর সঙ্গ নিলেন। যদিও সাবিত্রী উপবাসে দুর্বল দেখে সত্যবান নিতে চাইছিলেন না, কিন্তু সাবিত্রী তা মানলেন না। সত্যবানের সাথেই গেলেন। এক মুহূর্তের জন্যও তাকে চোখের আড়াল হতে দিলেন না। কাঠ কাটতে কাটতেই সত্যবান অসুস্থ বোধ করলো। বললো প্রচণ্ড মাথা ধরেছে। সাবিত্রী সত্যবানকে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়তে বললেন। সত্যবান তাই করলো। শুয়ে চোখ বন্ধ করলো। তখন এক ভয়ঙ্কর পুরুষ এসে একহাতে সত্যবানের প্রাণ আর হাতে প্রাণহীন দেহ নিয়ে চলতে শুরু করলে সাবিত্রীও কোন কথা না বলে তাঁর পিছু পিছু চলতে শুরু করলেন। যম সাবিত্রীকে বললেন যে, স্বামীর প্রতি ওঁর যা কর্তব্য তা সম্পন্ন হয়েছে, এখন বাড়ি ফিরে যেতে, কিন্তু সাবিত্রী থামলেন না। যমকে বললেন, স্বামীছাড়া কোন নারীর পক্ষে নির্জন বনে ধর্ম মেনে চলা সম্ভব না। তারপর তিনি যমকে ধর্মকথা শোনাতে লাগলেন। যম তাতে তুষ্ট হয়ে সত্যবানের জীবন ছাড়া আর যে কোনও বর চাইতে বললেন। সাবিত্রী তখন যমের কাছে তাঁর শ্বশুরের অন্ধত্ব দূর করে দিতে বললেন। যম সেই বর দিয়ে ক্লান্ত সাবিত্রীকে ফিরে যেতে বললেন। কিন্তু কোনকথা না শুনে সাবিত্রী চলতেই থাকলেন। বললেন যে, প্রাণপতির কাছাকাছি থাকলে কোন স্ত্রী কখনো ক্লান্ত হয় না। এছাড়া যম সজ্জন, সুতরাং উনি সাধুসঙ্গ করছেন। যম তখন তুষ্ট হয়ে পতির জীবন ছাড়া আরেকটি বর দিতে চাইলেন। সাবিত্রী এবার বর চাইলেন যেন ওঁর শ্বশুর পুনর্বার তাঁর রাজ্য লাভ করেন। যম সেই বর দিলেন তারপর সাবিত্রীকে বললেন আর পরিশ্রম না করে ফিরে যেতে। সাবিত্রী না ফিরে যমকে সনাতন ধর্মের কথা শোনালেন। যম তাতে প্রীত হয়ে সাবিত্রীকে পতির জীবন ছাড়া অন্য কোনও বর চাইতে বললেন। সাবিত্রী বললেন যে, ওঁর পিতা রাজা অশ্বপতি আজও পুত্রহীন - তাঁর যেন শতপুত্র হয়। যম বর দিয়ে বললেন, অনেক দূরে চলে এসেছো, এবার ফিরে যাও সাবিত্রী। সাবিত্রী বললেন, এটা আমার কাছে দূর নয়, আমি আমার স্বামীর সাথে সাথেই রয়েছি। তারপর যমের প্রশংসা করে বললেন যে, যম সমবুদ্ধিতে প্রজাশাসন করেন বলে তিনি ধর্মরাজও। যম হলেন সজ্জন। নিজের চেয়েও সজ্জনদের উনি বেশি বিশ্বাস করেন। সুতরাং নিজের ক্ষতি নিয়ে তাঁর কোন দুশ্চিন্তা নেই। যম খুশি হয়ে বললেন, সত্যবানের জীবন ছাড়া তিনি আরেকটি বর দিতে চান। সাবিত্রী এবার চাইলেন, ‘আমার গর্ভে যেন সত্যবানের ঔরসে বলশালী শতপুত্র হয়’। যম সাবিত্রীর প্রার্থিত বর দিয়ে বললেন, ধর্মকন্যা, এবার ফিরে যাও। কিন্তু সাবিত্রী আবারো যেতে থাকলেন আর ধর্মকথা শুনাতে থাকলেন। সাবিত্রীর ধর্মসম্মত কথা শুনে যম খুব সন্তুষ্ট হয়ে আর একটা বর দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তখন সাবিত্রী বলেন যে যমরাজ স্বয়ং ধর্মপ্রাণ ও নিতীপরায়ন তিনিই বর দিয়েছিলেন যে সাবিত্রী সত্যবানের ঔরসে পুত্রলাভের সৌভাগ্য লাভ করবেন এবং সেই সত্য রাখতে যমরাজকে সত্যবানের প্রাণ ফিরিয়ে দিতেই হবে। এবারে নিজের বাক্যের সত্য রক্ষা করতে গিয়ে যম সাবিত্রীকে পঞ্চম বর দিতে বাধ্য হন এবং অঙ্গুষ্ঠ প্রমাণ সত্যবানের আত্মা সাবিত্রীকে ফিরিয়ে দিয়ে
সাবিত্রীকে আশীর্বাদ করে বিদায় নেন। এরপর সাবিত্রী সত্যবানের অচেতন শরীরের কাছে এসে, তাঁর মাথা কোলে তুলে নিয়ে বসেন এবং অঙ্গুষ্ঠ প্রমাণ সত্যবানের আত্মা সত্যবানের দেহে স্থাপন করেন। পরে সত্যবানের সংজ্ঞা ফিরে এলে, উভয়েই আশ্রমে ফিরে যান।এইভাবে ধর্ম দিয়ে, সততা দিয়ে সাবিত্রী তাঁর স্বামীর জীবন রক্ষা করলেন। পরদিন আশ্রমে ফিরে ব্রতের পারনা করেন ও সকল আশ্রম বাসীর কাছে সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করেন, তখন সকল আশ্রম বাসীরা সাবিত্রীর জয়গান করতে থাকেন এদিকে যমের আশীর্বাদে দ্যুমৎসেনের চক্ষু ও রাজ্যলাভ এবং অশ্বপতির শতপুত্র ও লাভ হয়। সাবিত্রীর স্বামীর প্রতি এই প্রগাঢ় ভালোবাসা তাঁকে আজও অমর করে রেখেছে সতী নারী হিসেবে।
সঙ্কলকঃ শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী

Friday, 23 April 2021

গোপালের ডান বুকে একটি পায়ের ছাপ আছে......কার সেটি?

 আপনাদের যাদের ঘরে গোপালের মুর্ত্তি আছে তাঁরা হয়তো লক্ষ্য করেছেন গোপালের ডান বুকে একটি পায়ের ছাপ আছে। জানেন কি এই পায়ের ছাপটি কার? হয়তো বা আপনারা অনেকেই জানেন। যারা জানেন না তাঁদের জন্যে তুলে ধরছি এর কারন।

এক কাহিনী  অনুসারে

একবার সকল দেবতারা ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের মধ্যেকে শ্রেষ্ঠ কে, তা জানার জন্য মহর্ষি ভৃগুর শরণাপন্ন হন। মহর্ষি ভৃগু তখন এই তিন দেবতাদের পরীক্ষার জন্য সর্ব প্রথম ব্রহ্মার কাছে যান এবংতিনি ইচ্ছা করে ব্রহ্মার প্রতি সম্মান না দেখালে, ব্রহ্মা তাঁর প্রতি তীব্র ক্রোধ প্রকাশ করেন। পরে স্তব দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট করে মহাদেবের কাছে যান। মহাদেবকে সম্মান না দেখানোর কারণে, মহাদেব তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হন, এবারও ভৃগু স্তব করে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করেন। এরপর ইনি বিষ্ণুকে পরীক্ষা করার বিষ্ণুর আবাসস্থল গোলকধামে যান। সেখানে বিষ্ণুকে নিদ্রিত অবস্থায় দেখে ইনি বিষ্ণুর বক্ষে পদাঘাত করেন।বিষ্ণু ঘুম থেকে জেগে উঠে ভৃগুর পায়ে আঘাত লেগেছে মনে করে  পদসেবা করতে থাকেন।   বিষ্ণু মহর্ষি ভৃগুর পা ধরলেন এবং এমনভাবে হাত বুলাতে লাগলেন, যাতে ঋষির আরাম বোধ হয়। বেদে আছে, ঋষি ভৃগুর পায়ের পাতায় একটি অতিরিক্ত চোখ ছিল। এই কাজ করার সময় বিষ্ণু ঋষির অতিরিক্ত চোখটিতে চাপ দিলেন। কথিত আছে, ঋষির এই অতিরিক্ত চোখটি ছিল তার অহংকারের প্রতীক। ঋষি তখন  তাঁর  ভুল বুঝতে পেরে বিষ্ণুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। সেই থেকে তাঁর বোধ হল ত্রিমূর্তির মধ্যে বিষ্ণুই শ্রেষ্ঠতম।এরপর ভৃগু বিষ্ণুকেই শ্রেষ্ঠ দেবতা হিসাবে স্বীকৃতি দেন। উল্লেখ্য এরপর থেকে বিষ্ণুর বুকে ভৃগুর পদচিহ্নের ছাপ পড়ে যায়।

ভগবান শ্রী বিষ্ণু বা গোপালের বিগ্রহ যখনই তৈরি করা হয় তখনি ভগবানের ডান বক্ষের দিকে ভৃগু মুনির চরণ অঙ্কন করা হয়। ভৃগু মুনির চরণের ছাপ ছাড়া গোপাল ঠাকুরের বিগ্রহ সম্পূর্ণ হয় না।

(চলবে)

Saturday, 17 April 2021

প্রসঙ্গঃ- গীতা

প্রসঙ্গঃ- গীতা 

 আমরা জানি শ্রীমদ্ভাগবত গীতাতে সর্বমোট ৭০০ টি শ্লোক ও ১৮টি অধ্যায় আছে আর সেই আঠারোটি অধ্যায় নিয়ে শ্রীমদ্ভাগবত গীতাতে ব্যাসদেব সর্বমোট আঠারোটি যোগের উল্লেখ করেছেন। সেই আঠারোটি যোগ হল

১ অর্জুন বিষাদ-যোগ
২ সাংখ্য যোগ
৩ কর্ম যোগ
৪ জ্ঞান যোগ
৫ সন্ন্যাস যোগ
৬ ধ্যান যোগ
৭ জ্ঞান বিজ্ঞান যোগ
৮ অক্ষর ব্রহ্মযোগ
৯ রাজ যোগ
১০ বিভুতি যোগ
১১ বিশ্বরূপ দর্শন যোগ
১২ ভক্তি যোগ
১৩ ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ
১৪ গুনত্রয়বিভাগযোগ
১৫ পুরুষোত্তমযোগ
১৬ দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ
১৭ শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ
১৮ মোক্ষযোগ
যোগশাস্ত্রের প্রণেতা মহর্ষি পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগের সব উপদেশ গীতা থেকেই সংগৃহীত
গীতা-কে গীতোপনিষদ বলা হইয়ে থাকে কারন গীতা উপনিষদ্‌ এর অন্তর্গত। যদিও "উপনিষদ্‌" ধর্মগ্রন্থগুলি শ্রুতিশাস্ত্রের অন্তর্গত কিন্তু গীতা মহাভারত-এর অংশ বলে গীতা কিন্তু স্মৃতিশাস্ত্রের অন্তর্গত। আবার উপনিষদের শিক্ষার সারবস্তু গীতা-য় সংকলিত হয়েছে বলে একে বলা হয় "উপনিষদ্‌সমূহের উপনিষদ্‌"।গীতা-কে অনেক ক্ষেত্রে মোক্ষশাস্ত্র নামেও অভিহিত করা হয়।

গীতা-র বিষয়বস্তু হল ভগবান শ্রী কৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু ঠিক আগে অর্জুন যখন শত্রুপক্ষে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও গুরুকে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। এই সময় কৃষ্ণ তাকে ক্ষত্রিয় যোদ্ধার ধর্ম স্মরণ করিয়ে এবং বিভিন্ন প্রকার যোগশাস্ত্র ও বৈদান্তিক দর্শন ব্যাখ্যা করে তাকে যুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করেন। তাই গীতা-কে হিন্দুদের জীবনচর্যার একটি ব্যবহারিক পথনির্দেশিকা হিসেবে গণ্য করা হয়। গীতাতে শ্রী কৃষ্ণ যোগশাস্ত্র ব্যাখ্যার সম্রিষন নিজের "স্বয়ং ভগবান" রূপটি উন্মোচিত করেন এবং বিশ্বরূপে অর্জুনকে দর্শন দেন। অর্জুন ছাড়াও প্রত্যক্ষভাবে কৃষ্ণের মুখ থেকে গীতা শুনেছিলেন সঞ্জয়, হনুমান কারন তখন হনুমান অর্জুনের রথের চূড়ায় ছিলেন আর ঘটোৎকচের পুত্র বর্বরিক যিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সব ঘটনা দেখেছিলেন।

মূল গীতার আঠারটি অধ্যায় আবার ঐ আঠারটি অধ্যায়ের প্রকৃতি বিচার করলে দেখা যায় যে ওই অধ্যায় গুলি কোন না কোন যোগের অন্তর্গত বলে মনে হয়। প্রথম, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায় কে ভক্তি যোগ , দ্বিতীয়, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম অধ্যায় কে জ্ঞানযোগ, তৃতীয় কর্ম যোগ ও চতুর্থ অধ্যায়কে ধ্যানযোগের অন্তর্গত করা যায়।

জ্ঞানযোগ কি? ঈশ্বর কি এবং কেমন তা বিচার করে জানার উপায়, ভক্তিযোগ হল ঈশ্বরকে ভালোবেসে তাঁকে পাওয়ার উপায়, ধ্যানযোগ বা রাজযোগ হল মনকে একাগ্র করে তাঁর স্বরূপ কে প্রত্যক্ষ করার চেষ্ঠা আর সকল কর্মের ফল ঈশ্বরে সমর্পন করে নিষ্কাম চিত্তে কর্তব্য সম্পন্ন করে তাঁকে লাভ করাকে কর্মযোগ বলে। সব যোগের একই উদ্দেশ্য জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন। এই মধুর মিলনকেই জ্ঞানীরা বলেন ব্রহ্মানুভুতি, যোগীরা বলেন আত্মজ্ঞান লাভ বা সমাধি,ভক্তদের কাছে এ ঈশ্বরলাভ, কর্মযোগীদের কাছে এ কর্মবন্ধন থেকে মুক্তিলাভ। অনেকেই সাধারন ভাবে এই মিলনকে সিদ্ধিলাভ বলে মনে করেন।


কৌশিকী অমাবস্যা

  ছবি  কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...