সনাতন ধর্মে যেকোন পূজার আগে গণেশের পূজার বিধি, কিন্তু ‘গুরুপূজা’ গণেশ পূজারও আগে করার বিধান, অর্থাৎ গুরুপূজা অধ্যাত্মসাধনার প্রাথমিক কৃত্য। একথা হিন্দুর প্রাচীনতম শাস্ত্র বেদে বলা হয়েছে। হিন্দু ঐতিহ্যে গুরুর স্থান এমনই গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, গুরু ভিন্ন কোন বিদ্যা কেউ আয়ত্ত করতে পারে না। সে-বিদ্যা ব্রহ্মবিদ্যাই হোক অথবা লোকবিদ্যাই হোক। পরাবিদ্যাই হোক অথবা অপরাবিদ্যাই হোক। বলা হয় “গুরু ছাড়া জ্ঞান লাভ অসম্ভব”সূর্যকে প্রকাশ করিতে মশালের প্রয়োজন হয় না। সূর্যকে দেখিবার জন্য আর বাতি জ্বালিতে হয় না। সূর্য উঠিলে আমরা স্বভাবতই জানিতে পারি যে সূর্য উঠিয়াছে; এইরূপ আমাদিগকে সাহায্য করিবার জন্য লোকগুরুর আবির্ভাব হইলে আত্মা স্বভাবতই জানিতে পারে যে, তাঁহার উপর সত্যের সূর্যালোক-সম্পাত আরম্ভ হইয়াছে। সত্য স্বতঃপ্রমাণ, উহা প্রমাণ করিতে অপর কোন সাক্ষ্যের প্রয়োজন হয় নাই—উহা স্বপ্রকাশ; সত্য আমাদের অন্তস্তলে প্রবেশ করে, উহার সমক্ষে সমগ্র জগৎ দাঁড়াইয়া বলে—‘ইহাই সত্য।’ যে-সকল আচার্যের হৃদয়ে জ্ঞান ও সত্য সূর্যালোকের ন্যায় প্রতিভাত, তাঁহারা জগতের মধ্যে সর্বোচ্চ মহাপুরুষ, আর জগতের অধিকাংশ লোকই তাঁহাদিগকে ঈশ্বর বলিয়া পূজা করে। কিন্তু আমরা অপেক্ষাকৃত অল্পজ্ঞানীর নিকটও আধ্যাত্মিক সাহায্য লাভ করিতে পারি। তবে আমাদের এরূপ অন্তর্দৃষ্টি নাই যে, আমরা আমাদের গুরু বা আচার্যের সম্বন্ধে যথার্থ বিচার করিতে পারি; এই কারণে গুরুশিষ্য উভয়ের সম্বন্ধেই কতকগুলি পরীক্ষা আবশ্যক।শিষ্যের এই গুণগুলি আবশ্যক—পবিত্রতা, প্রকৃত জ্ঞানপিপাসা ও অধ্যবসায়। অশুদ্ধাত্মা পুরুষ কখনও ধার্মিক হইতে পারে না। কায়মনোবাক্যে পবিত্র না হইলে কেহ কখনও ধার্মিক হইতে পারে না। আর জ্ঞানতৃষ্ণা সম্বন্ধে বলা যাইতে পারে যে, আমরা যাহা ছাই, তাহাই পাই—ইহা একটি সনাতন নিয়ম। যে বস্তু আমরা অন্তরের সহিত চাই, তাহা ছাড়া আমরা অন্য বস্তু লাভ করিতে পারি না। ধর্মের জন্য প্রকৃত ব্যাকুলতা বড় কঠিন জিনিষ; আমরা সচরাচর যত সহজ মনে করি, উহা তত সহজ নয়। শুধু ধর্মকথা শুনিলে আর ধর্মপুস্তক পড়িলেই যথেষ্টভাবে প্রমাণিত হয় না যে, হৃদয়ে ধর্মপিপাসা প্রবল হইয়াছে। যতদিন না প্রাণে ব্যাকুলতা জাগরিত হয় এবং যতদিন না আমরা প্রবৃত্তির উপর জয়লাভ করিতে পারি, ততদিন সদাসর্বদা অভ্যাস ও আমাদের পাশব প্রকৃতির সহিত নিরন্তর সংগ্রাম আবশ্যক। উহা দু-এক দিনের কর্ম নয়, কয়েক বৎসর বা দু-এক জন্মেরও কর্ম নয়; শত শত জন্ম ধরিয়া এই সংগ্রাম চলিতে পারে। কাহারও পক্ষে অল্পকালের মধ্যেই সিদ্ধিলাভ ঘটিতে পারে, কিন্তু যদি অনন্তকাল অপেক্ষা করিতে হয়, ধৈর্যের সহিত তাহার জন্যও প্রস্তুত থাকা চাই। যে শিষ্য এইরূপ অধ্যবসায়-সহকারে সাধনে প্রবৃত্ত হয়, তাহার সিদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।
Thursday, 13 October 2022
সনাতন ধর্মে যেকোন পূজার আগে গণেশের পূজার বিধি, কিন্তু কেন?
সনাতন ধর্মে যেকোন পূজার আগে গণেশের পূজার বিধি, কিন্তু ‘গুরুপূজা’ গণেশ পূজারও আগে করার বিধান, অর্থাৎ গুরুপূজা অধ্যাত্মসাধনার প্রাথমিক কৃত্য। একথা হিন্দুর প্রাচীনতম শাস্ত্র বেদে বলা হয়েছে। হিন্দু ঐতিহ্যে গুরুর স্থান এমনই গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, গুরু ভিন্ন কোন বিদ্যা কেউ আয়ত্ত করতে পারে না। সে-বিদ্যা ব্রহ্মবিদ্যাই হোক অথবা লোকবিদ্যাই হোক। পরাবিদ্যাই হোক অথবা অপরাবিদ্যাই হোক। বলা হয় “গুরু ছাড়া জ্ঞান লাভ অসম্ভব”সূর্যকে প্রকাশ করিতে মশালের প্রয়োজন হয় না। সূর্যকে দেখিবার জন্য আর বাতি জ্বালিতে হয় না। সূর্য উঠিলে আমরা স্বভাবতই জানিতে পারি যে সূর্য উঠিয়াছে; এইরূপ আমাদিগকে সাহায্য করিবার জন্য লোকগুরুর আবির্ভাব হইলে আত্মা স্বভাবতই জানিতে পারে যে, তাঁহার উপর সত্যের সূর্যালোক-সম্পাত আরম্ভ হইয়াছে। সত্য স্বতঃপ্রমাণ, উহা প্রমাণ করিতে অপর কোন সাক্ষ্যের প্রয়োজন হয় নাই—উহা স্বপ্রকাশ; সত্য আমাদের অন্তস্তলে প্রবেশ করে, উহার সমক্ষে সমগ্র জগৎ দাঁড়াইয়া বলে—‘ইহাই সত্য।’ যে-সকল আচার্যের হৃদয়ে জ্ঞান ও সত্য সূর্যালোকের ন্যায় প্রতিভাত, তাঁহারা জগতের মধ্যে সর্বোচ্চ মহাপুরুষ, আর জগতের অধিকাংশ লোকই তাঁহাদিগকে ঈশ্বর বলিয়া পূজা করে। কিন্তু আমরা অপেক্ষাকৃত অল্পজ্ঞানীর নিকটও আধ্যাত্মিক সাহায্য লাভ করিতে পারি। তবে আমাদের এরূপ অন্তর্দৃষ্টি নাই যে, আমরা আমাদের গুরু বা আচার্যের সম্বন্ধে যথার্থ বিচার করিতে পারি; এই কারণে গুরুশিষ্য উভয়ের সম্বন্ধেই কতকগুলি পরীক্ষা আবশ্যক।শিষ্যের এই গুণগুলি আবশ্যক—পবিত্রতা, প্রকৃত জ্ঞানপিপাসা ও অধ্যবসায়। অশুদ্ধাত্মা পুরুষ কখনও ধার্মিক হইতে পারে না। কায়মনোবাক্যে পবিত্র না হইলে কেহ কখনও ধার্মিক হইতে পারে না। আর জ্ঞানতৃষ্ণা সম্বন্ধে বলা যাইতে পারে যে, আমরা যাহা ছাই, তাহাই পাই—ইহা একটি সনাতন নিয়ম। যে বস্তু আমরা অন্তরের সহিত চাই, তাহা ছাড়া আমরা অন্য বস্তু লাভ করিতে পারি না। ধর্মের জন্য প্রকৃত ব্যাকুলতা বড় কঠিন জিনিষ; আমরা সচরাচর যত সহজ মনে করি, উহা তত সহজ নয়। শুধু ধর্মকথা শুনিলে আর ধর্মপুস্তক পড়িলেই যথেষ্টভাবে প্রমাণিত হয় না যে, হৃদয়ে ধর্মপিপাসা প্রবল হইয়াছে। যতদিন না প্রাণে ব্যাকুলতা জাগরিত হয় এবং যতদিন না আমরা প্রবৃত্তির উপর জয়লাভ করিতে পারি, ততদিন সদাসর্বদা অভ্যাস ও আমাদের পাশব প্রকৃতির সহিত নিরন্তর সংগ্রাম আবশ্যক। উহা দু-এক দিনের কর্ম নয়, কয়েক বৎসর বা দু-এক জন্মেরও কর্ম নয়; শত শত জন্ম ধরিয়া এই সংগ্রাম চলিতে পারে। কাহারও পক্ষে অল্পকালের মধ্যেই সিদ্ধিলাভ ঘটিতে পারে, কিন্তু যদি অনন্তকাল অপেক্ষা করিতে হয়, ধৈর্যের সহিত তাহার জন্যও প্রস্তুত থাকা চাই। যে শিষ্য এইরূপ অধ্যবসায়-সহকারে সাধনে প্রবৃত্ত হয়, তাহার সিদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।
করবা চৌথ-সনাতন ধর্মেরই এক অন্যতম উৎসব
করবা চৌথ
এই উৎসবটি মুলতঃ সনাতন ধর্মের এক অন্যতম উৎসব যা মহিলারা তাঁদের স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় করে থাকেন। সৌর কার্তিক মাসের পূর্ণিমার পর কৃষ্ণা চতুর্থীতে পালিত হয় এই উৎসব। এই উৎসব বিশেষ ভাবে উত্তর ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত সহ দিল্লী,রাজস্থান,পাঞ্জাব, হরিয়ানা বিহার, মধ্যপ্রদেশে ব্যাপক ভাবে পালিত হয়। এইদিনে মহিলারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাসে থেকে সন্ধ্যায় চাঁদ দর্শন করে উপবাস ভঙ্গ করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা সুর্যোদয়ের আগেই কিছু খাবার খেয়ে নেন যা সাধারণতঃ তাঁদের শাশুরিরা রান্না করে থাকেন, আর সেই বিশেষ খাবারকে ‘সার্গি’ বলা হয়। এতে রান্না করা খাবারের সাথে শুকনো ফল ও মিষ্টি ও থাকে।Monday, 2 May 2022
প্রসঙ্গঃ- অক্ষয় তৃতীয়া
আজ অক্ষয় তৃতীয়া অনেক গুরুত্ব পূর্ণ দিন বলে বিবেচিত হয় আজকের দিনটিকে।
অক্ষয় তিথির মাহাত্ম্য::::---
অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথি।এ অক্ষয় তৃতীয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।
বৈদিক বিশ্বাসানুসারে এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। যদি ভালো কাজ করা হয় তার জন্যে আমাদের লাভ হয় অক্ষয় পূণ্য আর যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে লাভ হয় অক্ষয় পাপ।আর এদিন পূজা,জপ,ধ্যান,দান, অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত। যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে।এদিনটা ভালোভাবে কাটানোর অর্থ সাধনজগতের অনেকটা পথ একদিনে চলে ফেলা।এবারের অক্ষয়তৃতীয়া সবার ভালো কাটুক-এই কামনায় করি।
কি কি ঘঠেছিল আজকের এই তিথিতে?
১) এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম আবির্ভুত হন পৃথিবীতে।
২) এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
৩) এদিনই গণপতি গনেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।
৪) এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে।
৫) এদিনই সত্যযুগের সূচনা হয়।
৬) এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন।এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
৭) এদিনই ভক্তরাজ সুদামা শ্রী কৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সকল দুঃখ মোচন করেন।
৮) এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং সখী কৃষ্ণাকে রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ।শরনাগতের পরিত্রাতা রূপে এদিন শ্রী কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন।
৯) এদিনে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয়।
১০) কেদার-বদরী-গঙ্গোত্রী-যমুনত্রীর যে মন্দির শীতকাল ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়।দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।
১১) এদিনই সত্যযুগের শেষ হয়ে প্রতি কল্পে ত্রেতা যুগ শুরু হয়।
আজ দিনটি আরেকটি ব্যাপারেও অনেক গুরুত্ব পুর্ণ
আজ থেকে শ্রীকৃষ্ণের চন্দন যাত্রা উৎসবের ও শুভারম্ভ হয় আর চলে আগামী ২১ দিন পযর্ন্ত।
চন্দন যাত্রা কি?
উৎকলখণ্ডে বর্ণিত আছে,শ্রীজগন্নাথদেব মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নকে বৈশাখী শুক্লা অক্ষয় তৃতীয়াতে সুগন্ধি চন্দন দ্বারা জগন্নাথের অঙ্গে লেপন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।সেদিন থেকে চন্দন যাত্রা উৎসব শুরু হলো।শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে দেখা যায়,বৃন্দাবনে পরম বৈষ্ণব শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীকে স্বপ্নে তাঁর আরাধ্য শ্রীগোপাল বলছেন,"আমার শরীরের তাপ জুড়াচ্ছে না। মলয় প্রদেশ থেকে চন্দন নিয়ে এসো এবং তা ঘষে আমার অঙ্গে লেপন কর,তা হলে তাপ জুড়াবে।"তার পর পূর্বভারতে বৃদ্ধ মাধবেন্দ্র পুরী নীলাচলে জগন্নাথ পুরীতে এসে সেবকদের কাছ এক মণ মলয়জ চন্দন ও কর্পূর নিয়ে বৃন্দাবনে ফিরছিলেন।পথে রেমুণাতে শ্রীগোপীনাথ মন্দিরে আসেন।সেই রাত্রে সেখানে শয়ন কালে স্বপ্ন দেখেন,গোপাল এসে বলছেন,"হে মাধবেন্দ্র পুরী,আমি ইতিমধ্যেই সমস্ত চন্দন ও কর্পূর গ্রহণ করেছি।এখন কর্পূর সহ ঐ চন্দন ঘষে ঘষে শ্রীগোপীনাথের অঙ্গে লেপন কর।গোপীনাথ ও আমি অভিন্ন।গোপীনাথের অঙ্গে চন্দন লাগালেই আমার অঙ্গ শীতল হবে।"গ্রীষ্ম ঋতুতে শ্রীহরির অঙ্গে কর্পূর চন্দন লেপন করলে ভগবান শ্রীহরি প্রীত হন। আজ থেকে ২১ দিন ভগবানের শরীরে চন্দন লেপন করতে পারেন জগতের মঙ্গল কামনা করে ।
Friday, 26 November 2021
প্রসঙ্গঃ- শনিদেব বা শনিশ্চর
প্রসঙ্গঃ- শনিদেব বা শনিশ্চর
সঙ্কলক
শ্রীদেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
Friday, 3 September 2021
প্রসঙ্গঃ- শ্রীমতি রাধারাণী
শ্রীমতি রাধারাণী
সঙ্কলকঃ শ্রীদেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
আমাদের মধ্যে
অনেকেরই মনে এক প্রশ্ন বার বার ঘুরপাক খায়, শ্রী কৃষ্ণ নামের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত
যে শ্রী রাধার নাম সে রাধা আসলে কে?
...সে প্রশ্নের
উত্তর খুজতে খুজতে এক বিশাল সাগরে ডুব মারার অবস্থা হয়েছে, আমি নিজেও চেষ্টা করছি সেই প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধানের । এই প্রচেষ্টায় যে টুকু
প্রাপ্ত জ্ঞান তা আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরার যথাসাধ্য প্রয়াস করে যাবো... আগেই
বলেছি এ এক বিশাল ব্যাপার তাই আমি শুরু করার আগে পরমেশ্বরের কাছে আশীর্বাদ
কামনা করে নিচ্ছি এই যে তিনি যেন আমার সাথে এই কাজে সহায়তা করে থাকেন...।
ঋষি বঙ্কিম
চন্দ্র তাঁর রচিত 'কৃষ্ণচরিত্র' প্রবন্ধে যেভাবে রাধাকে বর্ণণা করেছেন তা
কিছুটা এইরূপ...
"ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আর জয়দেবের কাব্য ভিন্ন
কোন প্রাচীন গ্রন্থে রাধা নেই। ভাগবতের এই রাসপঞ্চাধ্যায়ের মধ্যে 'রাধা' নাম কোথাও পাওয়া যায় না। বৈষ্ণবাচার্যদিগের অস্থিমজ্জার ভিতর রাধা নাম
প্রবিষ্ট। তাঁহারা টীকা টিপ্পনীর ভিতর পুনঃপুনঃ রাধা প্রসঙ্গ উত্থাপিত করিয়াছেন
কিন্তু মূলে কোথাও রাধার নাম নাই। গোপীদিগের অনুরাগাধিক্যজনিত ঈর্ষার প্রমাণ
স্বরূপ কবি লিখিয়াছেন যে তাহারা পদচিহ্ন দেখিয়া অনুমান করিয়াছিলেন যে, কোন এক গোপীকে লইয়া কৃষ্ণ বিজনে প্রবেশ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাও গোপীদিগের
ঈর্ষাজনিত ভ্রম মাত্র। শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্হিত হইলেন এই কথাই আছে, কাহাকে লইয়া অন্তর্হিত হইলেন এমন কথা নাই এবং রাধার নামগন্ধও নাই।
রাসপঞ্চাধ্যায়ে
কেন, সমস্ত ভাগবতে কোথাও রাধার নাম নেই। ভাগবতে কেন, বিষ্ণুপুরাণে, হরিবংশে বা মহাভারতে কোথাও রাধার নাম নেই।
অথচ এখনকার কৃষ্ণ উপাসনার প্রধান অঙ্গ রাধা! রাধা ভিন্ন এখন কৃষ্ণ নাম নেই। রাধা
ভিন্ন এখন কৃষ্ণের মন্দির নেই বা মূর্তি নেই। বৈষ্ণবদিগের অনেক রচনায় কৃষ্ণের অপেক্ষাও
রাধা প্রাধান্য লাভ করিয়াছেন, তবে এ 'রাধা' আসিলেন কোথা হইতে?"।
শুধু তিনিই নন, 'বৈষ্ণব পদাবলী পরিচয়' এর লেখক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক,ডঃ শশীভূষন
দাশগুপ্ত, ডঃ নীহার রঞ্জন রায় প্রমুখ ব্যক্তিরাও
শ্রীমতি রাধার চরিত্রকে ভ্রান্ত এবং মধ্যযুগ পরবর্তী গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদী সম্প্রদায়
কর্তৃক নতুন করে আবিষ্কৃত এক পৃথক সত্বা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বেদে রাধার বর্ণনা ????
আজকের প্রসঙ্গ উত্থাপন করার
আগে আমি কিছু আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই। বিষয়টি প্রাসঙ্গিক কিন্তু 'স্পর্শকাতর' তাই আমি বলে রাখছি আমি কিন্তু কারো ভাব বা বিস্বাসে আঘাত
দেওয়ার পক্ষপাতী নই। শ্রীভগবান গীতায় বলছেন- যে "যথা মাং প্রপদ্যন্তে
তাংস্তথৈব ভজাম্যহম" যে আমাকে যে ভাবে ভজনা করে, আমিও তাকে সেইভাবে ভজনা করি।
কথা হল ভক্তিতে ভাব থাকা চাই, ভালোবাসা দ্বারা ভক্তি চাই। আমার কাছে তেমন কোন
তথ্য না থাকায় বহুলাংশে আমি ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন ভাষায় উপলব্ধ
বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে আমার এই পরিবেশন অতএব অজ্ঞানবশতঃ ভুল ভ্রান্তির সম্ভাবনা প্রবল
শুধুমাত্র নিজের কৌতূহল ও পাঠকদের অনুপ্রেরনা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।
আমি আজ আমাদের আদিগ্রন্থ 'বেদ' এ দেখবো কি আছে? কেননা কিছু ব্যাক্তিরা দাবী
করছেন যে বেদে রাধার বর্ণনা আছে। সত্যি কি তাই???
ব্যাকরণের দিক দিয়ে বিশ্লেষণ
করলে পাই , যিনি
আরাধনা করেন, তাকে এক
কথায় তাকেই বলা হয় রাধা। বৈদিক শব্দ কোষেও রাধ্ শব্দের অর্থ আরাধনা করা এই অর্থে
সকল ভক্ত যারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভজনা বা আরাধনা করেন, তারাই রাধা তাই পরমাত্মার
প্রতি জীবাত্মার আত্মসমর্পণই কৃষ্ণের প্রতি রাধার আত্মসমর্পনের রূপ পেয়েছে। আবার যেমন বিরহের প্রচণ্ড
ব্যাকুলতা ছাড়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করা সম্ভব নয়, তাই রাধা রূপী জীবাত্মাও, ভক্তের কাছে নারী রূপী রাধায় পরিণত হয়ে উঠেছে।
এবার দেখে নেবো কিছু সংখ্যক
ব্যাক্তিরা যারা দাবী করে চলেছেন যে রাধার বর্ণনা বেদেও আছে, তাঁদের যুক্তি কতটুকু গ্রহন
যোগ্য।
“য়দিন্দ্র চিত্রম ইহ নাস্তি
ত্বাদাতমন্দ্রিবঃ।
রাধস্তন্নো বিদপূস উভয়া
হস্ত্য আভব”।।
এ মন্ত্রে রাধস্তন্নো যে
শব্দটি রয়েছে তা কিন্তু সেই 'রাধা’ নয় এখানে রাধ শব্দের অর্থ হলো আরাধ্য শক্তি। এই
মন্ত্রটির যথার্থ ভাবার্থ অনুধাবন করলে আমরা পাই..।।
হে (ইন্দ্র) ইন্দ্র
পরমাত্মন! আপনি (য়ৎ) এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে যাহা কিছু (চিত্র) নানা প্রকার চিত্র
বিচিত্র রূপে ( আদ্রিবঃ) বিশাল সমুদ্র বা জলাদির ধারায় পর্বত সদৃশ্য
বিশ্বব্রহ্মান্ডের স্বামী কর্তা বিধাতা হন। আপনি কৃপয়া (মে) আমাদেরকে (ত্বাদাতম)
যাহা কিছু প্রদান করেন তাহারা বিস্তৃতভাবে (তৎ) এ (রাধঃ) আরাধ্য শক্তি (বিদৎ বসো)
বিদ্বান যোগী তপস্বী সাধক জনদের মধ্যে সাধনার দ্বারা লব্ধ ওই শক্তি (নঃ) আমাদের
জন্য ( উভয়া হস্ত ভব) উভয় হাতে উন্মুক্তভাবে প্রদান করুন।
বেদের অপর একটি শ্লোকে আছে
যে
ইদং হ্যন্বোজসা সুতং রাধানাং
পতে।
পিবা ত্বাস্য গিবর্ণঃ।।
এখানে " রাধানাং
পতে" শব্দটির অর্থ শ্রীকৃষ্ণ নয়। এখানে এই শব্দ দুটির অর্থ হল সৃষ্টির
জ্ঞান-ধন-প্রজা ঐশ্বর্য ইন্দ্রিয় ইত্যাদির মালিক।
মন্ত্রটির ভাবার্থটি
এইপ্রকার
হে মনুষ্য! ( রাধানাম পতে)
এই অনন্ত ব্রহ্মান্ডের মধ্য সৃষ্টির জ্ঞান -ধন- প্রজা ঐশ্বর্য ইন্দ্রিয় আদির মালিক
যিনি ( ইদং) বিশ্বজগৎকে নিজের শক্তি বল পরাক্রমের দ্বারা (সুতং) নিখুঁত ভাবে সৃজন
করে, তাহার সমস্ত জ্ঞান প্রাপ্তির
উপাই (গিবর্ণ) দেব বাণী আদির প্রদান করে (তু) তোমরা সকলে তাহাকে ভালোভাবে গ্রহন
করে (আপিব) ঈশ্বরের জ্ঞান কে পান করো।
আরেকটি শ্লোকে পাই
অভীষুণঃ সখীনামবিতা
জরিতৃণাম।
শতং ভবাস্যুতয়ে।।
এখানে কিন্তু সখীনাম শব্দের
অর্থ রাধা নয়।যা অনেকে দাবী করে থাকেন ।এর আসল অর্থ হচ্ছে সখার চেয়েও মহান সখা
অর্থাৎ পরমেশ্বর।
মন্ত্রটির অর্থ হলো
হে পরমেশ্বর! (নঃ) আপনি
আমাদের একমাত্র (অভি) চারিদিক থেকেই (সু আবিতা) সুরক্ষা করে থাকেন। সেই জন্য সকলে
আপনারই (সখীনাম) সখার চেয়েও সখা যুক্ত মহান সখারূপে আপনি সর্বদাই (জরিতৃণাম)
স্তুতি প্রার্থনা উপাসনা কারীদের প্রতি আপনি (শতম) শত সহস্র হাজার হাজার উপায়ে
আমাদেরকে (উতয়ে) সুরক্ষা করে নিরন্তরই (ভবাসি) নিজের স্বরূপেই বিদ্বমান থাকেন।
আরেক জায়গায় আছে
ইন্দ্রস্য সোমরাধসে পুনানো
হাদিচোদয়।
দেবনং য়োণিমাসদম।।
এই মন্ত্রে
"রাধসে" শব্দটি আরাধনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কোন
বিশিষ্ট ব্যক্তিবাচক নাম হিসেবে
ব্যবহার হয়নি।
মন্ত্রটির অর্থ খুজলেই তা
পাওয়া যায়।
হে মনুষ্য (রাধসে)
পরমেশ্বরের সাধন ভজন আরাধনার জন্য প্রথমে হৃদয় সহকারে (দেবানং) পঞ্চ ভৌতিক শরীরের
সমস্ত দিব্য গুন কর্ম স্বভাবকে নিয়ে জড় চেতন তত্ত্বের জ্ঞান লাভ করে (অসদম) মূল
তত্ত্ব জ্ঞানের শরীর বিজ্ঞান -আত্ম বিজ্ঞান এবং পরমাত্মা বিজ্ঞানের (য়োনীং) মূল
কারনকে (চোদয়) কেবলমাত্র ইশ্বরের দিকেই নিরন্তর প্রেরন করতে থাকে। কেননা অনন্ত
সৃষ্টির মূল কারন বা বীজ পরমাত্মাই।
অপর একটি শ্লোকে আছে...
দুক্ষ্যং সুদানং
তবিষীভিরাবৃতং গিরিং ন পুরুভোজসম।
ক্ষমন্তং বাজং শতিনং
সহস্রিনং মক্ষু গোমন্তমীমহে।।
যার আসল অর্থ এই রূপ
হে সাধক মনুষ্য! (দুক্ষং)
দিব্যগুন কর্ম স্বভাব যুক্ত (সুদানং) উত্তম দাতা (তবিষীভি) নানা প্রকার বল শক্তি
দ্বারা (আবৃতঃ) চতুর্দিকে আবৃত অবস্থায় (শতিনং) শত ( সহস্রিনং) হাজার হাজার
(গোমন্তা) গো বংশে ইন্দ্রিয় বৃত্তি সমূহ তথা বাণীর ধারা দিয়ে (বাজং) বল বীর্য
পরাক্রমে সর্বদাই আমরা (ঈমহে) প্রাপ্তির জন্য শুভ কামনা করে থাকি।
এখানে "গোমন্ত"
শব্দের সাথে রাধা নামের মিল খুঁজে পেয়েছেন কিছু সংখ্যক ব্যাক্তি, কিন্তু আসলে শব্দের অর্থ হলো গো বংশে
ইন্দ্রিয় বৃত্তিসমূহ।
আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর আগে লেখা মহাভারত সেখানেও রাধার কোন উল্লেখ নেই অতএব গীতাতেও রাধার কথা থাকা সম্ভব নয়। এমন কি বিষ্ণুপুরানে ও রাধার কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে রাধার উল্লেখ আছে, এছাড়াও বৈষ্ণব পদাবলী, যা রাধার, কৃষ্ণের প্রতি প্রেম বিরহ নিয়ে লেখা একাধিক কবির পদ্য এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, এইসবে রাধার উল্লেখ আছে। এইসকল দিক দিয়ে চিন্তা করলে রাধার বিষয় নিয়ে একটি সংশয় থেকেই যায়। আপনারা লক্ষ্য করলে দেখে থাকবেন যে প্রাচীন হাজার বছরের পুরানো যতগুলো মন্দির আছে সেই সব কোন মন্দিরেই কৃষ্ণের রাধাকে দেখা যায় না। কারণ রাধার জন্মই হয়েছে মধ্যযুগের কবিদের কল্পনায়! রাধাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল সাহিত্যরস সৃষ্টির খাতিরে। সেই জন্যে আমরা রাধাকে ব্যাপকভাবে দেখতে পাই সাহিত্য জগতে। বৈষ্ণব কাব্যে কবি জয়দেব, কবি চণ্ডীদাস, কবি বিদ্যাপতি, কবি জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, কবি বলরাম দাস প্রভৃতি কবিদের রচনার ছত্রে ছত্রে রাধা আছেন। নানা ভাব মাধুর্যের লীলা রসে সদাই রাধা বিচরণশীল।
রাধা আসলেই
কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নয়। গৌড়ীয় বৈষ্ণব দার্শনিকরা দার্শনিকতত্ত্ব রূপে যা কিনা
মাত্র কয়েকশো বছরের প্রাচীন শ্রীকৃষ্ণের লীলা শক্তির যে প্রধান তিন ভাগের
স্বরূপ শক্তি, জীবশক্তি ও মায়া শক্তির বর্ণণা করেছেন সেই
তিনটি মূখ্য উপভাগ রয়েছে (অর্থাৎ সৎ, চিৎ ও আনন্দ) সেই উপভাগের মধ্যে আনন্দ
তত্ত্বটি বা হ্লাদিনী তত্ত্বের মানবী রূপ হিসেবে কল্পনা করেছেন রাধাকে। অর্থাৎ
রাধা হলেন সম্পূর্ণত গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের এবং গৌড়ীয় দার্শনিকদের আনন্দ বা হ্লাদিনী
নামক তত্ত্বের কাল্পনিক মানবিক চরিত্র মাত্র! রাধার কোন ঐতিহাসিকতা বা বাস্তব
অস্তিত্ব কোন কালেও ছিল না।
পরিশেষে
এতটুকুই বলবো যে
শ্রী কথার
অর্থ শক্তি অর্থাৎ রাধা। কৃষ্ণ যদি শব্দ হন তাহলে রাধা তার অর্থ, কৃষ্ণ যদি বাঁশী হন তাহলে রাধা তার সুর, কৃষ্ণ সমুদ্র হলে রাধা তার তরঙ্গ, কৃষ্ণ যদি ফুল হন রাধা তার সুগন্ধি। আসলে রাধা হলেন শ্রী কৃষ্ণের হ্লাদিনী
শক্তি। তাঁরা একে অন্যের থেকে পৃথক নন। ভক্তের জন্যে তাঁরা পৃথক রূপ ধারন করেন ও
পৃথক পৃথক ভাবে লীলা করে থাকেন। রাধা এক আধ্যাত্মিক রূপ যেখানে দ্বৈত ও অদ্বৈতের
মিলন। রাধা এক সম্পূর্ণ কালের উদ্গম যা শ্রীকৃষ্ণ সমুদ্রে বিলীন হয়ে
যায়।শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধা প্রেমঘন মূর্তিরূপে বিরাজিত। কৃষ্ণ প্রেমের পরিমান কেউ
মাপতে পারেনি। সেই প্রেমের আধার শিলা রাধাই স্থাপন করেছিলেন। সমগ্র ব্রহ্মান্ডের
আত্মা হলেন গিয়ে রাধা আর শ্রী কৃষ্ণের আত্মা হলেন গিয়ে রাধা। আত্মাকে কি কেউ কখনো
দেখতে পেরেছে? না তা সম্ভব নয়। সেই ভাবে রাধা ও চিরকাল
ভক্ত-মানসে রহস্য হয়ে থাকবেন।
সমাপ্ত।
হরি ওম তৎ সৎ।
শ্রী রামকৃষ্ণায় অর্পনোমস্তু।।
Saturday, 14 August 2021
তিলভান্ডেশ্বর শিব
তিলভান্ডেশ্বর শিব
সঙ্কলকঃ- শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
আমরা সকলেই জানি বারাণসীর প্রতিটি স্থানে মিশে আছে শিবের অস্তিত্ব, কারণ সে যে শিবের আপন নগর। এখানে ভৈরবের মন্দির, কাশী বিশ্বনাথের মন্দির ছাড়াও আরেকটি বিখ্যাত মন্দির আছে যা আমরা তিলভান্ডেশ্বর মন্দির হিসেবে জানি। কথিত এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ আপনা আপনি প্রকট হয়েছিলেন। কিংবদন্তী অনুসারে প্রত্যেক মকর সংক্রান্তিতে এই শিবলিঙ্গ এক তিল করে আকারে বৃদ্ধি হয়। সত্যযুগ থেকে আজ পর্যন্ত এই শিবলিঙ্গ প্রত্যেক বছর ধরে এক তিল করে বৃদ্ধি হয়ে আসছেন। শিবপুরাণেও এই শিবলিঙ্গের বর্ণনা আছে। বারাণসীর এই মন্দিরটি আনুমানিক ২৫০০ বছর আগে (১৮শ শতাব্দীতে) তৈরী করা হয়। বারাণসীতে ভেলুপুর বাঙ্গালী টোলাতে এই মন্দিরটি অবস্থিত।
এই শিবলিঙ্গ সম্বন্ধে অনেক কাহিনী প্রচলিত
আছে। মোঘল আমলে এই মন্দিরের উপর অনেক বার আক্রমণ করা হয়েছিল কিন্তু প্রতিবারেই তা ধ্বংস
করতে বিফল হয়, অলৌকিক কারনে প্রতিবারই মোঘল সেনারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। ব্রিটিশ শাসন
কালেও এই মন্দিরের উপর ব্রিটিশেরা চড়াও হয়েছিল। কথিত আছে একবার এই শিবলিঙ্গকে ব্রিটিশেরা
পরীক্ষার জন্যে দড়ি দিয়ে বেধে রেখে ছিলেন কিন্তু আশ্চর্য ভাবে পরদিন্ যখন মন্দির খোলা
হয় তখন দড়ি গুলো ছেঁড়া অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই মন্দিরে শিবলিঙ্গের উপর ফুল, বেলপাতা জল ছাড়াও তিল অর্পন করা হয়। তিল অর্পন করা হয় বলে এই মন্দিরে পূজা দিলে শনির প্রকোপ থেকেও মুক্তি লাভ হয় বলে বিশ্বাস। এই শিবলিঙ্গের আরাধনার ফলে জীবনের তিলমাত্র পাপ অবশিষ্ট থাকে না।
হর হর মহাদেব
- ছবি সৌজন্যেঃ গুগোল
- Picture curtsy: Google image
Thursday, 12 August 2021
নাগপঞ্চমী
প্রসঙ্গঃ নাগপঞ্চমী
কৌশিকী অমাবস্যা
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...
-
আমাদের ব্রহ্মান্ডের ১৪টি ভুবন ১ । সত্যলোক ২ । তপোলোক ৩ । জনলোক ৪ । মহর্লোক ৫ । স্বর্গলোক ৬ । ভুবর্লোক ৭ । ভ...
-
মা কালীর ধ্যান মন্ত্র ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্ । কালিকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুন্ডমালাবিভূষিতাম্ ।। সদ্যশ্ছিন্...
-
পুজার উপাচার অনুযায়ী পূজা অনেক প্রকার হয় যেমন-পঞ্চোপচার, দশোপচার, ষোড়শোপচার,অষ্টাদশ-উপচার— ইত্যাদি। পঞ্চ-উপচার— “গন্ধম্ পুষ্প...