Monday, 30 November 2015
Tuesday, 10 November 2015
দীপাবলির কিছু তথ্য সঙ্কলন
আমাদের কাছে দীপাবলি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের উপনিষদের সেই অমোঘ বাণীর সন্ধান পাই যা হল
"অসতো মা সদগময়
তমসো মা জ্যোতির্গময়
মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।"
যেখানে প্রার্থনা করা হচ্ছে যে আমাদের কে "অসৎ হইতে সত্যের পথে নিয়ে চল, অন্ধকার হইতে জ্যোতিতে নিয়ে চল, মৃত্যু হইতে অমৃতে পথে নিয়ে চল।"এইদিনেই শ্রীরামচন্দ্র তাঁর চৌদ্দবছরের বনবাস শেষ করে অযোধ্যাতে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সেই আনন্দে ওই দিনে স্বাগত জানানোর চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী অযোধ্যাবাসীরাও ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্বলিত করে শ্রী রামচন্দ্র কে স্বাগত জানান।
আবার বিষ্ণু পুরাণে পাই আজকের দিনে বিষ্ণুর বামন অবতার বলিকে পাতালে পাঠান অজ্ঞতা ও অন্ধকার বিদূরিত করতে,এবং সেই অনুসারে বলিকে অযুত-অযুত প্রদীপ জ্বালিয়ে ভালবাসা ও জ্ঞানের প্রচার করার অনুমতি প্রদান করেন। এই দিনটিতেই আবার লক্ষ্মী-গণেশের পুজোর নিয়ম "দীপাবলি" কথা টির মানে হল প্রদীপের সমষ্টি। এই দিনে ঘরে ঘরে মাটির প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা।তবে আজকাল বেশীরভাগ জায়গায় মাটির প্রদীপ দেখা যায় না, তার বদলে অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক বাতির প্রচলন ই অধিক।তবে এই প্রদীপ জ্বালানোর কারন ছিল অমঙ্গলকে বিদায় দিয়ে মঙ্গল কে বরণ করার প্রতীক, এই দিনে বাড়িঘর পরিষ্কার সাজিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে মা লক্ষ্মী দেবীর আহ্বান করার রীতি। কারো কারো মতে সেই সময় অমঙ্গল বিতাড়নের জন্য আতসবাজিও পোড়ানো হয়। কেহ মনে করেন ক্ষেতের শস্য বিনাশ কারি কীটপতঙ্গ কে বিনাশের জন্য আতস বাজীর শব্দের সাহায্য নেয়া হয়। কোন কোন অঞ্চলে এই দীপাবলির সময় নতুন কাপড় পরার ও আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের মধ্যে ফল মিষ্টি ও বিলানোর রীতি ও দেখা যায়।
জৈনরা এই দিন কে মহাবীরের মোক্ষ লাভের দিন হসেবে পালিত করেন এবং শিখ সম্প্রদায়ের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও ৫২ জন রাজপুত্র এই দিনটিতেই মুক্তি পেয়েছিলেন বলে শিখ সম্প্রদায়রা এই দিনটি বিশেষ ভাবে পালন করেন আলোকসজ্জা, ও মিষ্টি বিতরনের মাধ্যমে।
এই শুভ দীপাবলির আনন্দ মুহূর্তে সকল কে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা, প্রীতি ও শুভকামনা।
Monday, 9 November 2015
মা কালীর ধ্যান ও মায়ের অঙ্গের তাৎপর্য
মা কালীর ধ্যান মন্ত্র
ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্ ।
কালিকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুন্ডমালাবিভূষিতাম্।।
সদ্যশ্ছিন্নশিরঃখড়্গবামাধোর্দ্ধকরাম্বুজাম্ ।
অভয়াং বরদাঞ্চৈব দক্ষিণোর্দ্ধাধঃপাণিকাম্।।
মহামেঘপ্রভাং শ্যামাং তথা চৈব দিগম্বরীম্ ।
কণ্ঠাবসক্তমুন্ডালীগলদ্রুধিরচর্চ্চিতাম্ ।
কর্নাবতংসতানীতশবযুগ্মভয়ানকাম্ ।।
ঘোরদ্রংষ্টাং করালাস্যাং পীনোন্নতপয়োধরাম্।
শবানাং করসংঘাতৈঃ কৃতকাঞ্চীং হসন্মখীম্ ।।
সৃক্কদ্বয়গলদ্রক্তধারাবিস্ফুরিতাননাম্ ।।
ঘোররাবাং মহারৌদ্রীং শ্মশ্মানালয়বাসিনীম্ ।
বালার্কমণ্ডলাকারলোচনত্রিতয়ান্বিতাম্ ।।
দস্তুরাং দক্ষিণব্যাপি-মুক্তালম্বিকচোচ্চয়াং ।
শবরূপ-মহাদেবহৃদয়ো-পরিবংস্থিতাম্ ।।
শিবাভির্ঘোররাবাভিশ্চতুর্দিক্ষু সমন্বিতাম্ ।
মহাকালেন চ সমং বিপরীতরতাতুরাম ।।
সুখপ্রসন্নবদনাং স্মেরাননসরোরুহাম্ ।
এবং সঞ্চিন্তেয়ৎ কালীং সর্বকাম-সমৃদ্ধিদাম্ ।।
মন্ত্রের অনুবাদ-
দেবী দক্ষিণা কালী করালবদনা ভয়ঙ্করী, মুক্তকেশী ও চতুর্ভুজা, তিনি দিব্য জ্যোতি সম্পূর্ণা, মুন্ডমালা ধারিণী । মায়ের বামদিকের নিচের হাতে সদ্যচ্ছিন্নিত মুন্ড, উপরের বাম হাতে খড়গ । ডানদিকের উপরের হাত অভয় মুদ্রায় এবং নিচের হাত বরমুদ্রা ধারণ করে আছেন । মায়ের গায়ের রং কালো মেঘের প্রভার মত শ্যামা । তিনি দিগম্বরী অর্থাৎ বস্ত্রহীনা । উনার গলার মুন্ডমালা গুলো থেকে বের হওয়া রক্ত উনার দেহ কে রঞ্জিত করছে, দুটি শবশিশু তার কর্ণভূষণ হওয়াতে দেবীকে ভয়ঙ্করী দেখাচ্ছে । তিনি তাঁর দাঁত দিয়ে নিজের জিহ্বাকে কামড় দিয়ে আছেন, তিনি কোমরে বেঁধে রেখেছেন হাতের মালা। তাঁর মুখে
মৃদুহাসি এবং উনার মুখ থেকে রক্তের ধারা বের হচ্ছে আর উনার মুখে অনন্ত কোটি সূর্যের তেজ বিদ্যমান । তিনি অতিশয় ক্রোদ্ধা, ভয়ংকর নাদকারিণী, উনার তিনটি চোখ আর সেই সকালের সূর্যের মত লালপ্রভাময় । উনার চারদিকে চিৎকার করছে শিয়ালের দল ।আমি সেই দেবীর ধ্যান করি যিনি শবরুপ মহাদেবের হৃদয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন । যার মুখ সুখ-প্রসন্নতায় ভরা । যিনি মোক্ষদায়িনী এবং সকল ইচ্ছাপূরণকারিণী.
দেবীর অঙ্গের তাৎপর্যঃ
দেবীর মাথায় অর্দ্ধচন্দ্র তাঁহার মোক্ষ-প্রদান শক্তির
পরিচায়ক।তাহা হইতে নিঃসৃত অমৃত সাধক কে
অমৃতত্ব বাঁ মোক্ষ প্রদান করিয়া থাকে। দেবী মুক্তকেশী
।তাঁর মুক্তকেশ চির-বৈরাগ্যের
প্রতীক। জ্ঞান-অসির আঘাতে তিনি অক্টপাশ ছেদনকারী মা চির
বৈরাগ্যময়ী। তাই তাঁর কালো
চুল বিস্তৃত।
দেবীর তিন
চোখ তিনটি আলোর প্রতীক, চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি। অন্ধকার বিধ্বংসী
তিন শক্তির প্রকাশ। অজ্ঞতা, চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি অজ্ঞানতারূপ অন্ধকার থেকে মুক্ত করে। তিনটি
চোখে দেবী অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে প্রত্যক্ষ করেন। কারণ,এই শক্তিই হল
সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের কর্তা। দেবীর
কানে দুতি বালকের শব যার অর্থ নির্ব্বিকার, নিস্কাম,শিশু্ভাবাপন্ন সাধক মায়ের অতি
প্রিয়। দেবী রক্তবর্ণের জিহ্বাকে
সাদা দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখেছেন। লাল রং রজোগুণের প্রতীক, সাদা রং সত্ত্বগুণের প্রতীক। সাদা
দাঁত দিয়ে লাল জিহবাকে চেপে রাখা। অর্থাৎ সত্ত্বগুণর দ্বারা রজোগুণকে দমন করে রাখা।
রজোগুণ ভোগের গুন, ঈশ্বর
বিমুখ করে। রজোগুণ দমনের জন্য এই প্রতীক। অনেক সময় আমরা কোন অন্যায় বা মিথ্যাচার
করলে জিহ্বার কামড় দেই অর্থাৎ অন্যায় করার স্বীকৃতি।
দেবীর গলায়
পঞ্চাশটি মুন্ড দিয়ে মালা পরানো। পঞ্চাশটি মুন্ড পঞ্চাশটি অক্ষরের প্রতীক। ১৪ টি
স্বরবর্ণ এবং ৩৬ টি ব্যঞ্জনবর্ণ, অক্ষর ব্রহ্ম, যার
ক্ষয় নেই, শব্দ
ব্রহ্ম, অক্ষরের
দ্বারাই শব্দের উৎপত্তি হয়। এর অবস্থান মস্তকে। আমরা মন্ত্রোচ্চারণের
দ্বারা দেব বা দেবীর বন্দনা করি। এই
মন্ত্রের অবস্থান মাথার তালুতে সহস্রার
পদ্মের মধ্যে। তাই অক্ষরের প্রতীক মুন্ড তাঁর গলায় হাত কর্মের প্রতীক। আমাদের সকল
কর্মের ফলদাতা তিনি । সকাম ভক্ত যারা তারা অতৃপ্ত কামনা নিয়ে দেহত্যাগ করে
বলে পুনরায় মাতৃ জঠরস্থ হয়, হস্ত মেখলা প্রতীকে সকাম ভক্তের
পুণর্জন্ম লাভ করার তত্ত্ব নিহিত।
দেবীর চাইতে বড়তো কিছুই নেই। তাই তিনি কি পরিধান করবেন? বিশ্বব্যাপী শক্তির অবস্থান।
শক্তিকে আবরিত করা যায়না। তিনি স্বয়ং প্রকাশ। তাই দেবী উলঙ্গ।দেবী কখন দক্ষিণ পদ কখন বাম্পদ, অগ্রে স্থাপন করেন ইহার
অর্থ এক পদে অতীতকে অন্যপদে ভবিষ্যত কে অধিকার করিয়া আছেন।
কালো রং সকল বর্ণের অনুপস্থিত। তাই কালো। কখনো বা তিনি
শ্যমা- শ্যামবর্ণা। কালো রং ভয়ের উদ্রেক করলেও শ্যাম রং কোমলতা জাগায়। স্নিগ্ধতা ও
কমনীয়তা জাগায়। তাই মাতৃসাধক কালী শ্যামবর্ণা রূপেও দর্শন করেছেন।
মা কালী
শবরূপী শিবের বুকে দন্ডায়মানা। শিব স্থির, কালী গতিময়ী। গতি ঠিক রাখতে হলে স্থিরের উপর তার
প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। শিব শুভ্রবর্ণ, কালী কালো বর্ণ। সাধক কূটস্থ দর্শন কালে এই শুভ্র রং
বেষ্ঠিত কালো রং সাধনায় দেখে থাকেন।
Subscribe to:
Posts (Atom)
কৌশিকী অমাবস্যা
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...
-
আমাদের ব্রহ্মান্ডের ১৪টি ভুবন ১ । সত্যলোক ২ । তপোলোক ৩ । জনলোক ৪ । মহর্লোক ৫ । স্বর্গলোক ৬ । ভুবর্লোক ৭ । ভ...
-
মা কালীর ধ্যান মন্ত্র ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্ । কালিকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুন্ডমালাবিভূষিতাম্ ।। সদ্যশ্ছিন্...
-
পুজার উপাচার অনুযায়ী পূজা অনেক প্রকার হয় যেমন-পঞ্চোপচার, দশোপচার, ষোড়শোপচার,অষ্টাদশ-উপচার— ইত্যাদি। পঞ্চ-উপচার— “গন্ধম্ পুষ্প...