আজ নবরাত্রির পঞ্চম দিন, আজ দেবীর পঞ্চমী বিহিত রূপ হল দেবী স্কন্দমাতা। আজকের এই পূণ্যলগ্নে সকল কে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
সিংহাসনগতা
নিত্যং পদ্মাশ্রিতকরদ্বয়া।
শুভদাস্তু সদা
দেবী স্কন্দমাতা যশস্বিনী।।
মাতা দুর্গার
পঞ্চম রূপটি স্কন্দমাতা নামে পরিচিত। হয়।দেবাদিদেব মহাদেবের পুত্র হলেন কার্ত্তিক । কার্তিকের অপর নাম স্কন্দ । ইনি দেবাসুর
সংগ্রামে দেবতাদের সেনাপতি ছিলেন। পুরাণাদিতে এঁকে কুমার এবং শক্তিধর বলে এঁর
মাহাত্ম্যের বর্ণনা করা হয়েছে। স্কন্দের বাহন ময়ূর, তাই এঁকে
ময়ূরবাহনও বলা ভগবতী পার্বতী সেই মহামায়ার একটি রূপ ।
তাই তিনি স্কন্দের মা অর্থাৎ দেবীর একটি রূপ স্কন্দমাতা নামে পূজিতা । পুরাণাদি তে
এই দেবীকে স্কন্দের শক্তি হিসাবে বর্ণনা করা আছে । অর্থাৎ কৌমারী দেবী ও
স্কন্দমাতা এক । কোন স্থানে স্কন্দমাতার বাহন ময়ূর ।
দেবী স্কন্দমাতার কথা জানা যায় স্কন্দ পুরাণ থেকে। অসুররাজ তারক বরলাভ করেছিল, কেবল শিব ও দুর্গার পুত্রই তার প্রাণবধে সক্ষম হবে। তাই দেবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষণা করে সে সহজেই দেবতাদের কাছ থেকে স্বর্গরাজ্য কেড়ে নিতে পেরেছিল। এই ঘটনার
ঠিক আগেই সতী দেহত্যাগ করেছিলেন, শিবও হয়েছিলেন ধ্যানমগ্ন। তাই দেবতারা দুর্গাকে পুনরায় জন্মগ্রহণ করার
অনুরোধ করলেন। দুর্গা শৈলপুত্রী রূপে গিরিরাজ হিমালয়ের গৃহে জন্ম নিলেন। তারপর
ব্রহ্মচারিণী রূপে শিবকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য করলেন কঠোর তপস্যা। শেষে শিবের
সঙ্গে তাঁর বিবাহ হল। তারপর যথাসময়ে জন্ম হল শিব ও দুর্গার পুত্র কার্তিকের।
কার্তিকের জন্মের বিবরণ নানা পুরাণে নানাভাবে বর্ণিত হয়েছে। সে সবের উল্লেখ এখানে
না করলেও চলবে–শুধু এটুকু বলে
রাখি, কার্তিকের ছিল
ছয়টি মাথা। তাই তিনি পরিচিত হয়েছিলেন ষড়ানন নামে। এই ষড়ানন স্কন্দই তারককে
যুদ্ধে পরাজিত করে দেবতাদের স্বর্গরাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। স্কন্দ ও স্কন্দমাতা
উভয়েই তারকাসুর বধে দেবতাদের সাহায্য করেছিলেন বলে, মাতাপুত্রের পূজা একসঙ্গে করাই নিয়ম।
নবরাত্রি পূজার
পঞ্চম দিনে এঁর আরাধনা করা হয়। সাধকের মন এই দিন ‘বিশুদ্ধ চক্রে’ অবস্থান করে।
এঁর বিগ্রহ মূর্তিতে দেখা যায় ভগবান স্কন্দ বালকরূপে এঁর ক্রোড়ে অবস্থান
করছেন। স্কন্দমাতৃস্বরূপিণী দেবী চতুর্ভুজা। তিনি দক্ষিণের ওপরের হাতে স্কন্দকে
ধরে আছেন এবং নিচের হাতটিকে উপরদিকে করে, তাতে পদ্মফুল নিয়েছেন। বামের উপরিস্থিত হাতটি নিচে নেমেছে
বরাভয় মুদ্রারূপে আর নিচের হাতটি উপরে রয়েচে, পদ্মফুল ধারণ করে। স্কন্দমাতা সর্বাঙ্গে শুভ্রবর্ণা এবং
পদ্মের উপর উপবিষ্টা, সেইজন্য এঁকে পদ্মাসনা দেবীও বলা হয়। ইনি সিংহকেও বাহনরূপে রাখেন।
নবরাত্র পূজার
পঞ্চম দিনের কথায় শাস্ত্রে পুষ্কল মাহাত্ম্য বলা আছে। এই চক্রে চিত্তপ্রতিষ্ঠ
সাধকের সমস্ত বাহ্য ক্রিয়া এবং চিত্তবৃত্তি লুপ্ত হয়ে যায়। তিনি বিশুদ্ধ চৈতন্য
স্বরূপের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। তাঁর মন সকল প্রকার লৌকিক, সাংসারিক, মায়িক বন্ধন থেকে
মুক্ত হয়ে পদ্মাসনা মাতা স্কন্দমাতার স্বরূপে সম্পূর্ণভাবে লীন হয়ে যায়। এই সময়
সাধককে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে সাধন পথে চলতে হয় এবং সমস্ত ধ্যান-বৃত্তিকে একাগ্র
করে যোগপথে অগ্রসর হতে হয়।
মাতা স্কন্দমাতার
আরাধনা করলে ভক্তের সকল ইচ্ছা পূর্ণ হয়। এই মর্ত্যলোকেই সে পরম শান্তি ও সুখের
অনুভব করতে থাকে। মোক্ষের দ্বার তার কাছে নিজে থেকেই সুলভ হয়ে যায়। স্কন্দমাতার
উপাসনা করলে বালকরূপ স্কন্দ ভগবানের আরাধনাও স্বতঃই হয়ে যায়। এই বৈশিষ্ট্য শুধু
এঁরই আছে। সুতরাং সাধকের স্কন্দমাতার উপাসনায় বিশেষ লক্ষ্য দেওয়া উচিত।
সূর্যমণ্ডলের অধিষ্ঠাত্রি দেবী হওয়ায় তাঁর উপাসকগণ অলৌকিক তেজ ও কান্তিসম্পন্ন হন।
এক অলৌকিক প্রভামণ্ডল অদৃশ্যভাবে সর্বদাই তাদের চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত থাকে। এই
প্রভামণ্ডল সর্বক্ষণ সাধকদের যোগক্ষেম বহন করে।
অতএব আমাদের
একাগ্রভাবে মনকে পবিত্র রেখে মায়ের শরণাগত হওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত। এই ঘোর
ভবসাগরের দুঃখ হতে মুক্তিলাভ করে মোক্ষের পথ সহজ করার এর থেকে উত্তম উপায় নেই।
No comments:
Post a Comment