Friday, 26 November 2021
প্রসঙ্গঃ- শনিদেব বা শনিশ্চর
প্রসঙ্গঃ- শনিদেব বা শনিশ্চর
Friday, 3 September 2021
প্রসঙ্গঃ- শ্রীমতি রাধারাণী
শ্রীমতি রাধারাণী
সঙ্কলকঃ শ্রীদেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
আমাদের মধ্যে
অনেকেরই মনে এক প্রশ্ন বার বার ঘুরপাক খায়, শ্রী কৃষ্ণ নামের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত
যে শ্রী রাধার নাম সে রাধা আসলে কে?
...সে প্রশ্নের
উত্তর খুজতে খুজতে এক বিশাল সাগরে ডুব মারার অবস্থা হয়েছে, আমি নিজেও চেষ্টা করছি সেই প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধানের । এই প্রচেষ্টায় যে টুকু
প্রাপ্ত জ্ঞান তা আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরার যথাসাধ্য প্রয়াস করে যাবো... আগেই
বলেছি এ এক বিশাল ব্যাপার তাই আমি শুরু করার আগে পরমেশ্বরের কাছে আশীর্বাদ
কামনা করে নিচ্ছি এই যে তিনি যেন আমার সাথে এই কাজে সহায়তা করে থাকেন...।
ঋষি বঙ্কিম
চন্দ্র তাঁর রচিত 'কৃষ্ণচরিত্র' প্রবন্ধে যেভাবে রাধাকে বর্ণণা করেছেন তা
কিছুটা এইরূপ...
"ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আর জয়দেবের কাব্য ভিন্ন
কোন প্রাচীন গ্রন্থে রাধা নেই। ভাগবতের এই রাসপঞ্চাধ্যায়ের মধ্যে 'রাধা' নাম কোথাও পাওয়া যায় না। বৈষ্ণবাচার্যদিগের অস্থিমজ্জার ভিতর রাধা নাম
প্রবিষ্ট। তাঁহারা টীকা টিপ্পনীর ভিতর পুনঃপুনঃ রাধা প্রসঙ্গ উত্থাপিত করিয়াছেন
কিন্তু মূলে কোথাও রাধার নাম নাই। গোপীদিগের অনুরাগাধিক্যজনিত ঈর্ষার প্রমাণ
স্বরূপ কবি লিখিয়াছেন যে তাহারা পদচিহ্ন দেখিয়া অনুমান করিয়াছিলেন যে, কোন এক গোপীকে লইয়া কৃষ্ণ বিজনে প্রবেশ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাও গোপীদিগের
ঈর্ষাজনিত ভ্রম মাত্র। শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্হিত হইলেন এই কথাই আছে, কাহাকে লইয়া অন্তর্হিত হইলেন এমন কথা নাই এবং রাধার নামগন্ধও নাই।
রাসপঞ্চাধ্যায়ে
কেন, সমস্ত ভাগবতে কোথাও রাধার নাম নেই। ভাগবতে কেন, বিষ্ণুপুরাণে, হরিবংশে বা মহাভারতে কোথাও রাধার নাম নেই।
অথচ এখনকার কৃষ্ণ উপাসনার প্রধান অঙ্গ রাধা! রাধা ভিন্ন এখন কৃষ্ণ নাম নেই। রাধা
ভিন্ন এখন কৃষ্ণের মন্দির নেই বা মূর্তি নেই। বৈষ্ণবদিগের অনেক রচনায় কৃষ্ণের অপেক্ষাও
রাধা প্রাধান্য লাভ করিয়াছেন, তবে এ 'রাধা' আসিলেন কোথা হইতে?"।
শুধু তিনিই নন, 'বৈষ্ণব পদাবলী পরিচয়' এর লেখক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক,ডঃ শশীভূষন
দাশগুপ্ত, ডঃ নীহার রঞ্জন রায় প্রমুখ ব্যক্তিরাও
শ্রীমতি রাধার চরিত্রকে ভ্রান্ত এবং মধ্যযুগ পরবর্তী গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদী সম্প্রদায়
কর্তৃক নতুন করে আবিষ্কৃত এক পৃথক সত্বা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বেদে রাধার বর্ণনা ????
আজকের প্রসঙ্গ উত্থাপন করার
আগে আমি কিছু আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই। বিষয়টি প্রাসঙ্গিক কিন্তু 'স্পর্শকাতর' তাই আমি বলে রাখছি আমি কিন্তু কারো ভাব বা বিস্বাসে আঘাত
দেওয়ার পক্ষপাতী নই। শ্রীভগবান গীতায় বলছেন- যে "যথা মাং প্রপদ্যন্তে
তাংস্তথৈব ভজাম্যহম" যে আমাকে যে ভাবে ভজনা করে, আমিও তাকে সেইভাবে ভজনা করি।
কথা হল ভক্তিতে ভাব থাকা চাই, ভালোবাসা দ্বারা ভক্তি চাই। আমার কাছে তেমন কোন
তথ্য না থাকায় বহুলাংশে আমি ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন ভাষায় উপলব্ধ
বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে আমার এই পরিবেশন অতএব অজ্ঞানবশতঃ ভুল ভ্রান্তির সম্ভাবনা প্রবল
শুধুমাত্র নিজের কৌতূহল ও পাঠকদের অনুপ্রেরনা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।
আমি আজ আমাদের আদিগ্রন্থ 'বেদ' এ দেখবো কি আছে? কেননা কিছু ব্যাক্তিরা দাবী
করছেন যে বেদে রাধার বর্ণনা আছে। সত্যি কি তাই???
ব্যাকরণের দিক দিয়ে বিশ্লেষণ
করলে পাই , যিনি
আরাধনা করেন, তাকে এক
কথায় তাকেই বলা হয় রাধা। বৈদিক শব্দ কোষেও রাধ্ শব্দের অর্থ আরাধনা করা এই অর্থে
সকল ভক্ত যারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভজনা বা আরাধনা করেন, তারাই রাধা তাই পরমাত্মার
প্রতি জীবাত্মার আত্মসমর্পণই কৃষ্ণের প্রতি রাধার আত্মসমর্পনের রূপ পেয়েছে। আবার যেমন বিরহের প্রচণ্ড
ব্যাকুলতা ছাড়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করা সম্ভব নয়, তাই রাধা রূপী জীবাত্মাও, ভক্তের কাছে নারী রূপী রাধায় পরিণত হয়ে উঠেছে।
এবার দেখে নেবো কিছু সংখ্যক
ব্যাক্তিরা যারা দাবী করে চলেছেন যে রাধার বর্ণনা বেদেও আছে, তাঁদের যুক্তি কতটুকু গ্রহন
যোগ্য।
“য়দিন্দ্র চিত্রম ইহ নাস্তি
ত্বাদাতমন্দ্রিবঃ।
রাধস্তন্নো বিদপূস উভয়া
হস্ত্য আভব”।।
এ মন্ত্রে রাধস্তন্নো যে
শব্দটি রয়েছে তা কিন্তু সেই 'রাধা’ নয় এখানে রাধ শব্দের অর্থ হলো আরাধ্য শক্তি। এই
মন্ত্রটির যথার্থ ভাবার্থ অনুধাবন করলে আমরা পাই..।।
হে (ইন্দ্র) ইন্দ্র
পরমাত্মন! আপনি (য়ৎ) এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে যাহা কিছু (চিত্র) নানা প্রকার চিত্র
বিচিত্র রূপে ( আদ্রিবঃ) বিশাল সমুদ্র বা জলাদির ধারায় পর্বত সদৃশ্য
বিশ্বব্রহ্মান্ডের স্বামী কর্তা বিধাতা হন। আপনি কৃপয়া (মে) আমাদেরকে (ত্বাদাতম)
যাহা কিছু প্রদান করেন তাহারা বিস্তৃতভাবে (তৎ) এ (রাধঃ) আরাধ্য শক্তি (বিদৎ বসো)
বিদ্বান যোগী তপস্বী সাধক জনদের মধ্যে সাধনার দ্বারা লব্ধ ওই শক্তি (নঃ) আমাদের
জন্য ( উভয়া হস্ত ভব) উভয় হাতে উন্মুক্তভাবে প্রদান করুন।
বেদের অপর একটি শ্লোকে আছে
যে
ইদং হ্যন্বোজসা সুতং রাধানাং
পতে।
পিবা ত্বাস্য গিবর্ণঃ।।
এখানে " রাধানাং
পতে" শব্দটির অর্থ শ্রীকৃষ্ণ নয়। এখানে এই শব্দ দুটির অর্থ হল সৃষ্টির
জ্ঞান-ধন-প্রজা ঐশ্বর্য ইন্দ্রিয় ইত্যাদির মালিক।
মন্ত্রটির ভাবার্থটি
এইপ্রকার
হে মনুষ্য! ( রাধানাম পতে)
এই অনন্ত ব্রহ্মান্ডের মধ্য সৃষ্টির জ্ঞান -ধন- প্রজা ঐশ্বর্য ইন্দ্রিয় আদির মালিক
যিনি ( ইদং) বিশ্বজগৎকে নিজের শক্তি বল পরাক্রমের দ্বারা (সুতং) নিখুঁত ভাবে সৃজন
করে, তাহার সমস্ত জ্ঞান প্রাপ্তির
উপাই (গিবর্ণ) দেব বাণী আদির প্রদান করে (তু) তোমরা সকলে তাহাকে ভালোভাবে গ্রহন
করে (আপিব) ঈশ্বরের জ্ঞান কে পান করো।
আরেকটি শ্লোকে পাই
অভীষুণঃ সখীনামবিতা
জরিতৃণাম।
শতং ভবাস্যুতয়ে।।
এখানে কিন্তু সখীনাম শব্দের
অর্থ রাধা নয়।যা অনেকে দাবী করে থাকেন ।এর আসল অর্থ হচ্ছে সখার চেয়েও মহান সখা
অর্থাৎ পরমেশ্বর।
মন্ত্রটির অর্থ হলো
হে পরমেশ্বর! (নঃ) আপনি
আমাদের একমাত্র (অভি) চারিদিক থেকেই (সু আবিতা) সুরক্ষা করে থাকেন। সেই জন্য সকলে
আপনারই (সখীনাম) সখার চেয়েও সখা যুক্ত মহান সখারূপে আপনি সর্বদাই (জরিতৃণাম)
স্তুতি প্রার্থনা উপাসনা কারীদের প্রতি আপনি (শতম) শত সহস্র হাজার হাজার উপায়ে
আমাদেরকে (উতয়ে) সুরক্ষা করে নিরন্তরই (ভবাসি) নিজের স্বরূপেই বিদ্বমান থাকেন।
আরেক জায়গায় আছে
ইন্দ্রস্য সোমরাধসে পুনানো
হাদিচোদয়।
দেবনং য়োণিমাসদম।।
এই মন্ত্রে
"রাধসে" শব্দটি আরাধনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কোন
বিশিষ্ট ব্যক্তিবাচক নাম হিসেবে
ব্যবহার হয়নি।
মন্ত্রটির অর্থ খুজলেই তা
পাওয়া যায়।
হে মনুষ্য (রাধসে)
পরমেশ্বরের সাধন ভজন আরাধনার জন্য প্রথমে হৃদয় সহকারে (দেবানং) পঞ্চ ভৌতিক শরীরের
সমস্ত দিব্য গুন কর্ম স্বভাবকে নিয়ে জড় চেতন তত্ত্বের জ্ঞান লাভ করে (অসদম) মূল
তত্ত্ব জ্ঞানের শরীর বিজ্ঞান -আত্ম বিজ্ঞান এবং পরমাত্মা বিজ্ঞানের (য়োনীং) মূল
কারনকে (চোদয়) কেবলমাত্র ইশ্বরের দিকেই নিরন্তর প্রেরন করতে থাকে। কেননা অনন্ত
সৃষ্টির মূল কারন বা বীজ পরমাত্মাই।
অপর একটি শ্লোকে আছে...
দুক্ষ্যং সুদানং
তবিষীভিরাবৃতং গিরিং ন পুরুভোজসম।
ক্ষমন্তং বাজং শতিনং
সহস্রিনং মক্ষু গোমন্তমীমহে।।
যার আসল অর্থ এই রূপ
হে সাধক মনুষ্য! (দুক্ষং)
দিব্যগুন কর্ম স্বভাব যুক্ত (সুদানং) উত্তম দাতা (তবিষীভি) নানা প্রকার বল শক্তি
দ্বারা (আবৃতঃ) চতুর্দিকে আবৃত অবস্থায় (শতিনং) শত ( সহস্রিনং) হাজার হাজার
(গোমন্তা) গো বংশে ইন্দ্রিয় বৃত্তি সমূহ তথা বাণীর ধারা দিয়ে (বাজং) বল বীর্য
পরাক্রমে সর্বদাই আমরা (ঈমহে) প্রাপ্তির জন্য শুভ কামনা করে থাকি।
এখানে "গোমন্ত"
শব্দের সাথে রাধা নামের মিল খুঁজে পেয়েছেন কিছু সংখ্যক ব্যাক্তি, কিন্তু আসলে শব্দের অর্থ হলো গো বংশে
ইন্দ্রিয় বৃত্তিসমূহ।
আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর আগে লেখা মহাভারত সেখানেও রাধার কোন উল্লেখ নেই অতএব গীতাতেও রাধার কথা থাকা সম্ভব নয়। এমন কি বিষ্ণুপুরানে ও রাধার কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে রাধার উল্লেখ আছে, এছাড়াও বৈষ্ণব পদাবলী, যা রাধার, কৃষ্ণের প্রতি প্রেম বিরহ নিয়ে লেখা একাধিক কবির পদ্য এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, এইসবে রাধার উল্লেখ আছে। এইসকল দিক দিয়ে চিন্তা করলে রাধার বিষয় নিয়ে একটি সংশয় থেকেই যায়। আপনারা লক্ষ্য করলে দেখে থাকবেন যে প্রাচীন হাজার বছরের পুরানো যতগুলো মন্দির আছে সেই সব কোন মন্দিরেই কৃষ্ণের রাধাকে দেখা যায় না। কারণ রাধার জন্মই হয়েছে মধ্যযুগের কবিদের কল্পনায়! রাধাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল সাহিত্যরস সৃষ্টির খাতিরে। সেই জন্যে আমরা রাধাকে ব্যাপকভাবে দেখতে পাই সাহিত্য জগতে। বৈষ্ণব কাব্যে কবি জয়দেব, কবি চণ্ডীদাস, কবি বিদ্যাপতি, কবি জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, কবি বলরাম দাস প্রভৃতি কবিদের রচনার ছত্রে ছত্রে রাধা আছেন। নানা ভাব মাধুর্যের লীলা রসে সদাই রাধা বিচরণশীল।
রাধা আসলেই
কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নয়। গৌড়ীয় বৈষ্ণব দার্শনিকরা দার্শনিকতত্ত্ব রূপে যা কিনা
মাত্র কয়েকশো বছরের প্রাচীন শ্রীকৃষ্ণের লীলা শক্তির যে প্রধান তিন ভাগের
স্বরূপ শক্তি, জীবশক্তি ও মায়া শক্তির বর্ণণা করেছেন সেই
তিনটি মূখ্য উপভাগ রয়েছে (অর্থাৎ সৎ, চিৎ ও আনন্দ) সেই উপভাগের মধ্যে আনন্দ
তত্ত্বটি বা হ্লাদিনী তত্ত্বের মানবী রূপ হিসেবে কল্পনা করেছেন রাধাকে। অর্থাৎ
রাধা হলেন সম্পূর্ণত গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের এবং গৌড়ীয় দার্শনিকদের আনন্দ বা হ্লাদিনী
নামক তত্ত্বের কাল্পনিক মানবিক চরিত্র মাত্র! রাধার কোন ঐতিহাসিকতা বা বাস্তব
অস্তিত্ব কোন কালেও ছিল না।
পরিশেষে
এতটুকুই বলবো যে
শ্রী কথার
অর্থ শক্তি অর্থাৎ রাধা। কৃষ্ণ যদি শব্দ হন তাহলে রাধা তার অর্থ, কৃষ্ণ যদি বাঁশী হন তাহলে রাধা তার সুর, কৃষ্ণ সমুদ্র হলে রাধা তার তরঙ্গ, কৃষ্ণ যদি ফুল হন রাধা তার সুগন্ধি। আসলে রাধা হলেন শ্রী কৃষ্ণের হ্লাদিনী
শক্তি। তাঁরা একে অন্যের থেকে পৃথক নন। ভক্তের জন্যে তাঁরা পৃথক রূপ ধারন করেন ও
পৃথক পৃথক ভাবে লীলা করে থাকেন। রাধা এক আধ্যাত্মিক রূপ যেখানে দ্বৈত ও অদ্বৈতের
মিলন। রাধা এক সম্পূর্ণ কালের উদ্গম যা শ্রীকৃষ্ণ সমুদ্রে বিলীন হয়ে
যায়।শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধা প্রেমঘন মূর্তিরূপে বিরাজিত। কৃষ্ণ প্রেমের পরিমান কেউ
মাপতে পারেনি। সেই প্রেমের আধার শিলা রাধাই স্থাপন করেছিলেন। সমগ্র ব্রহ্মান্ডের
আত্মা হলেন গিয়ে রাধা আর শ্রী কৃষ্ণের আত্মা হলেন গিয়ে রাধা। আত্মাকে কি কেউ কখনো
দেখতে পেরেছে? না তা সম্ভব নয়। সেই ভাবে রাধা ও চিরকাল
ভক্ত-মানসে রহস্য হয়ে থাকবেন।
সমাপ্ত।
হরি ওম তৎ সৎ।
শ্রী রামকৃষ্ণায় অর্পনোমস্তু।।
Saturday, 14 August 2021
তিলভান্ডেশ্বর শিব
তিলভান্ডেশ্বর শিব
সঙ্কলকঃ- শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
আমরা সকলেই জানি বারাণসীর প্রতিটি স্থানে মিশে আছে শিবের অস্তিত্ব, কারণ সে যে শিবের আপন নগর। এখানে ভৈরবের মন্দির, কাশী বিশ্বনাথের মন্দির ছাড়াও আরেকটি বিখ্যাত মন্দির আছে যা আমরা তিলভান্ডেশ্বর মন্দির হিসেবে জানি। কথিত এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ আপনা আপনি প্রকট হয়েছিলেন। কিংবদন্তী অনুসারে প্রত্যেক মকর সংক্রান্তিতে এই শিবলিঙ্গ এক তিল করে আকারে বৃদ্ধি হয়। সত্যযুগ থেকে আজ পর্যন্ত এই শিবলিঙ্গ প্রত্যেক বছর ধরে এক তিল করে বৃদ্ধি হয়ে আসছেন। শিবপুরাণেও এই শিবলিঙ্গের বর্ণনা আছে। বারাণসীর এই মন্দিরটি আনুমানিক ২৫০০ বছর আগে (১৮শ শতাব্দীতে) তৈরী করা হয়। বারাণসীতে ভেলুপুর বাঙ্গালী টোলাতে এই মন্দিরটি অবস্থিত।
এই শিবলিঙ্গ সম্বন্ধে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। মোঘল আমলে এই মন্দিরের উপর অনেক বার আক্রমণ করা হয়েছিল কিন্তু প্রতিবারেই তা ধ্বংস করতে বিফল হয়, অলৌকিক কারনে প্রতিবারই মোঘল সেনারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। ব্রিটিশ শাসন কালেও এই মন্দিরের উপর ব্রিটিশেরা চড়াও হয়েছিল। কথিত আছে একবার এই শিবলিঙ্গকে ব্রিটিশেরা পরীক্ষার জন্যে দড়ি দিয়ে বেধে রেখে ছিলেন কিন্তু আশ্চর্য ভাবে পরদিন্ যখন মন্দির খোলা হয় তখন দড়ি গুলো ছেঁড়া অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই মন্দিরে শিবলিঙ্গের উপর ফুল, বেলপাতা জল ছাড়াও তিল অর্পন করা হয়। তিল অর্পন করা হয় বলে এই মন্দিরে পূজা দিলে শনির প্রকোপ থেকেও মুক্তি লাভ হয় বলে বিশ্বাস। এই শিবলিঙ্গের আরাধনার ফলে জীবনের তিলমাত্র পাপ অবশিষ্ট থাকে না।
হর হর মহাদেব
- ছবি সৌজন্যেঃ গুগোল
- Picture curtsy: Google image
Thursday, 12 August 2021
নাগপঞ্চমী
প্রসঙ্গঃ নাগপঞ্চমী
Saturday, 17 July 2021
বদ্রীনাথ মন্দির
বদ্রীনাথ মন্দির
বিখ্যাত বদ্রীনাথ মন্দিরটি উত্তর ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চামোলি জেলায় গাড়ওয়াল পার্বত্য অঞ্চলে অলকানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। প্রাচীন বৈদিক ধর্মগ্রন্থগুলিতে এই মন্দিরের প্রধান দেবতা বদ্রীনাথের উল্লেখ আছে, যা থেকে বোঝা যায়। যে বৈদিক যুগে এই মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল।গর্ভগৃহে বদ্রীনারায়ণের যে মূর্ত্তি টি আছে তা প্রায় ৩.৩ফুট উচ্চতার, কষ্টি পাথরের বিগ্রহ। একটি বদ্রী গাছের তলায় সোনার চাঁদোয়ার নীচে রাখা।বদ্রীনারায়ণের মূর্তির উপরের দুই হাতে শঙ্খ ও চক্র আর নীচের দুই হাত যোগ মুদ্রায় । শোনা যায় ৯ম শতাব্দীতে আদি শঙ্করাচার্য প্রথম বদ্রীনাথকে একটি তীর্থস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ৮১৪ থেকে ৮২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছর তিনি এই অঞ্চলে ছিলেন। কথিত আছে বদ্রীনাথের মুর্তিটিকে অসুরের হাত থেকে রক্ষার জন্যে মন্দিরের পুরোহিতরা অলকানন্দার জলের তলায় লুকিয়ে রেখেছিলেন কিন্তু পরে সেই জায়গাটী ভুলে যাওয়ায় মুর্তি উদ্ধার সম্ভব হয় নি, যোগাবলে শঙ্করাচার্য এই বদ্রীনাথের মূর্তিটির সন্ধান পান এবং তিনিই অলকানন্দা নদী থেকে উদ্ধার করে তপ্তকুণ্ড উষ্ণ প্রস্রবণের কাছে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। পুরাণ অনুসারে, এক ঋষি লক্ষ্মীকে বিষ্ণুর পাদসেবা করতে দেখেন, এবং তাই দেখে তিনি বিষ্ণুকে তিরস্কার করেছিলেন। সেই জন্য বিষ্ণু বদ্রীনাথে এসে দীর্ঘ সময় পদ্মাসনে বসে তপস্যায় রত ছিলেন। তখন হিমালয়ের একটি অঞ্চলে মাংসভুক সন্ন্যাসী ও অসাধু লোকজনেরা বাস করত, কিন্তু এই স্থানটি তার থেকে দূরে ছিল বলে বিষ্ণু ধ্যানের জন্য এই স্থানটিকেই ঠিক করেন। ধ্যানের সময় বিষ্ণু এখানকার দারুণ শীত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তার স্ত্রী লক্ষ্মী একটি বদ্রী গাছের আকারে তাকে রক্ষা করেন। লক্ষ্মীর ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু এই অঞ্চলের নাম দেন বদরিকাশ্রম। আবার বিষ্ণুপুরাণে বদ্রীনাথের উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি গল্প আছে। সেখানে আছে , ধর্মের দুই পুত্র ছিল – নর ও নারায়ণ, এঁরা হিমালয়ে পর্বতরূপ ধারণ করেছিলেন। তারা ধর্মপ্রচারে জন্য এই স্থানকে নির্বাচিত করেন এবং হিমালয়ের বিভিন্ন বৃহৎ উপত্যকাগুলিকে বিবাহ করেছিলেন। আশ্রম স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গার অনুসন্ধানে এসে তারা পঞ্চবদ্রীর অন্যান্য চার বদ্রীর সন্ধান পান। এগুলি হল বৃধাবদ্রী, যোগবদ্রী, ধ্যানবদ্রী ও ভবিষবদ্রী। অবশেষে তারা অলকানন্দা নদী পেরিয়ে উষ্ণ ও শীতল প্রস্রবনের সন্ধান পান এবং এই স্থানটির নামকরণ করেন বদ্রীবিশাল। ভাগবত পুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও মহাভারত-এর মতো প্রাচীন গ্রন্থেও কিন্তু বদ্রীনাথ মন্দিরের উল্লেখ আছে, ভাগবত পুরাণ অনুসারে, বদরিকাশ্রমে ভগবান বিষ্ণু নর ও নারায়ণ ঋষি রূপে অবতার গ্রহণ করেছিলেন এবং সকল জীবের কল্যাণের জন্য তাঁরা এখানে স্মরণাতীত কাল থেকে এখানে তপস্যা করেন। স্কন্দপুরাণ-র বলা হয়েছে, স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল লোকে অনেক পবিত্র তীর্থ আছে। কিন্তু বদ্রীনাথের মতো পবিত্র তীর্থ কোথাও নেই। পদ্মপুরাণ-এ বদ্রীনাথের আশেপাশের এলাকাটিকে আধ্যাত্মিক সম্পদে পরিপূর্ণ বলে উল্লেখ আছে। মহাভারতে পাওয়া যায় যে অন্যান্য তীর্থে মোক্ষ অর্জন করতে হলে ধর্মানুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। কিন্তু বদ্রীনাথের কাছে এলেই ভক্তের মোক্ষ লাভ হয়ে যায়।
জানেন কি? বদ্রীনাথে শঙ্খ বাজানো নিষিদ্ধ!!!! কেন?
পুরাকালে হিমালয়ের পাদদেশে ঋষি-মুনিদের উপর অসুরদের অত্যাচার খুব বৃদ্ধি পায়। প্রায়ই অসুরেরা ঋষি মুনিদের আক্রমন করে তাঁদের আশ্রম লন্ডভন্ড করে বির্বিচারে হত্যা করতে লাগলো। শত শত ঋষি মুনিদের বন্দি করে দাস বানিয়ে রাখতো। তখন সকল ঋষি মুনিরা অগস্ত্য মুনির শরণাপন্ন হয়েছিলেন। অগস্ত্য মুনি তখন অসুরদের নিধনের জন্যে দেবী দুর্গা কে আহ্বান করেন। অগস্ত্যমুনির প্রার্থনায় দেবী কুষ্মান্ডা রূপে আবির্ভাব হয়ে অসুর নিধন শুরু করেন, একে একে সকল অসুর দেবীর হাতে পরাজিত ও নিহত হয় কিন্তু আতাপি ও বাতাপি নামক দুই অসুর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আতাপি অলকানন্দা নদীতে গিয়ে আত্মগোপন করে আর বাতাপি বদ্রীনাথ ধামে গিয়ে শঙ্খের ভিতরে লুকিয়ে পরে সেই থেকে বদ্রীনাথ ধামে শঙ্খ বাজানো নিষিদ্ধ হয় এবং সেই প্রথা আজও চলে আসছে। এই এক মাত্র মন্দির যেখানে শঙ্খ বাজানো যায় না।
সমাপ্ত
Wednesday, 14 July 2021
জয় মা বিপদতারিণী বা বিপদনাশিনী!!
আসুন জেনে নেই কে এই দেবী?
Saturday, 19 June 2021
দশহরা বা গঙ্গা পূজা
দশহরা বা গঙ্গা পূজা
নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু’
তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি স্নানকালে ভবন্ত্বিহ’
Tuesday, 8 June 2021
সাবিত্রী চতুর্দ্দশী ব্রত
Friday, 23 April 2021
গোপালের ডান বুকে একটি পায়ের ছাপ আছে......কার সেটি?
আপনাদের যাদের ঘরে গোপালের মুর্ত্তি আছে তাঁরা হয়তো লক্ষ্য করেছেন গোপালের ডান বুকে একটি পায়ের ছাপ আছে। জানেন কি এই পায়ের ছাপটি কার? হয়তো বা আপনারা অনেকেই জানেন। যারা জানেন না তাঁদের জন্যে তুলে ধরছি এর কারন।
এক কাহিনী অনুসারে
একবার সকল দেবতারা ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের মধ্যেকে শ্রেষ্ঠ কে, তা জানার জন্য মহর্ষি ভৃগুর শরণাপন্ন হন। মহর্ষি ভৃগু তখন এই তিন দেবতাদের পরীক্ষার জন্য সর্ব প্রথম ব্রহ্মার কাছে যান এবংতিনি ইচ্ছা করে ব্রহ্মার প্রতি সম্মান না দেখালে, ব্রহ্মা তাঁর প্রতি তীব্র ক্রোধ প্রকাশ করেন। পরে স্তব দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট করে মহাদেবের কাছে যান। মহাদেবকে সম্মান না দেখানোর কারণে, মহাদেব তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হন, এবারও ভৃগু স্তব করে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করেন। এরপর ইনি বিষ্ণুকে পরীক্ষা করার বিষ্ণুর আবাসস্থল গোলকধামে যান। সেখানে বিষ্ণুকে নিদ্রিত অবস্থায় দেখে ইনি বিষ্ণুর বক্ষে পদাঘাত করেন।বিষ্ণু ঘুম থেকে জেগে উঠে ভৃগুর পায়ে আঘাত লেগেছে মনে করে পদসেবা করতে থাকেন। বিষ্ণু মহর্ষি ভৃগুর পা ধরলেন এবং এমনভাবে হাত বুলাতে লাগলেন, যাতে ঋষির আরাম বোধ হয়। বেদে আছে, ঋষি ভৃগুর পায়ের পাতায় একটি অতিরিক্ত চোখ ছিল। এই কাজ করার সময় বিষ্ণু ঋষির অতিরিক্ত চোখটিতে চাপ দিলেন। কথিত আছে, ঋষির এই অতিরিক্ত চোখটি ছিল তার অহংকারের প্রতীক। ঋষি তখন তাঁর ভুল বুঝতে পেরে বিষ্ণুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। সেই থেকে তাঁর বোধ হল ত্রিমূর্তির মধ্যে বিষ্ণুই শ্রেষ্ঠতম।এরপর ভৃগু বিষ্ণুকেই শ্রেষ্ঠ দেবতা হিসাবে স্বীকৃতি দেন। উল্লেখ্য এরপর থেকে বিষ্ণুর বুকে ভৃগুর পদচিহ্নের ছাপ পড়ে যায়।
ভগবান শ্রী বিষ্ণু বা গোপালের বিগ্রহ যখনই তৈরি করা হয় তখনি ভগবানের ডান বক্ষের দিকে ভৃগু মুনির চরণ অঙ্কন করা হয়। ভৃগু মুনির চরণের ছাপ ছাড়া গোপাল ঠাকুরের বিগ্রহ সম্পূর্ণ হয় না।
(চলবে)
কৌশিকী অমাবস্যা
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ- গুগল চিত্র পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের ...
-
আমাদের ব্রহ্মান্ডের ১৪টি ভুবন ১ । সত্যলোক ২ । তপোলোক ৩ । জনলোক ৪ । মহর্লোক ৫ । স্বর্গলোক ৬ । ভুবর্লোক ৭ । ভ...
-
মা কালীর ধ্যান মন্ত্র ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্ । কালিকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুন্ডমালাবিভূষিতাম্ ।। সদ্যশ্ছিন্...
-
পুজার উপাচার অনুযায়ী পূজা অনেক প্রকার হয় যেমন-পঞ্চোপচার, দশোপচার, ষোড়শোপচার,অষ্টাদশ-উপচার— ইত্যাদি। পঞ্চ-উপচার— “গন্ধম্ পুষ্প...